শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পলাতক ছয় মানব পাচারকারীর রেড নোটিসের তথ্য জানাল সিআইডি

নিজস্ব প্রতিবেদক

লিবিয়ায় মানব পাচার মামলার ছয় পলাতক আসামির নামে রেড নোটিস জারি করেছে ইন্টারপোল। গতকাল এ তথ্য প্রকাশ করেছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার জিসানুল হক। তিনি জানান, তাদের অনুরোধে ইন্টারপোল এই রেড নোটিস জারি করেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত আজ মঙ্গলবার দুপুরে সিআইডি সদর দফতরে সংস্থার প্রধান ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে জানাবেন।

পলাতক ওই ছয় আসামি হলেন- জাফর ইকবাল, তানজিরুল, স্বপন, শাহাদাত হোসেন, নজরুল ইসলাম মোল্লা ও মিন্টু মিয়া। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ- তারা ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাচার, আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় এবং হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছেন। 

উল্লেখ্য, গত ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশ প্রতিদিনে এই ছয় মানব পাচারকারীর বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারির বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ছয়জনের মধ্যে গত ২৫ নভেম্বর ৫ জনের বিরুদ্ধে এবং ৬ নভেম্বর একজনের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি করেছে ইন্টারপোল।

সিআইডি সূত্র জানায়, ওই ছয়জনের নামে রাজধানীর পল্টন ও বনানী থানায় মানব পাচারের অভিযোগে গত ২ জুন মামলা করা হয়। যাদের নামে রেড নোটিস জারি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে- তানজিরুল ওরফে তানজিলুম ওরফে তানজিদের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার শ্রীনগর গ্রামে। তিনি আগে থেকেই লিবিয়ায় অবস্থান করছেন। একই উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামে জাফর ওরফে জাফর ইকবালের বাড়ি। তিনিও আগে থেকে লিবিয়ায় অবস্থান করছেন। লিবিয়ায় আগে থেকে অবস্থান করছেন স্বপনও। তারও বাড়ি একই   উপজেলার শম্ভুপুরে। এ ছাড়া মাদারীপুর সদরের মধ্যা হাউসদী গ্রামে বাড়ি নজরুল মোল্লার এবং ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে বাড়ি শাহাদাত হোসেনের। এ দুজনের অবস্থান এখনো অজানা। লিবিয়ায় অবস্থান করা মিন্টু মিয়ার নামে আগেই নোটিস জারি করা হয়। তার বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ ও ঢাকার পল্টনে দুটি মামলা রয়েছে। মিন্টু মিয়া কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার বোছামারা গ্রামের মৃত হেলাল উদ্দিনের ছেলে। তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর- ১৯৭৯৪৮১১১৮৩৬২৯৩২০ এবং পাসপোর্ট নম্বর হলো- বিপি০৩৭৭৭০৪। তিনি ২০১৮ সালে দুবাই হয়ে লিবিয়ায় গেছেন। তার সঠিক অবস্থান সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি সিআইডি। তবে এই রেড নোটিসের পর ওই ব্যক্তিরা যে কোনো দেশের স্থলপথ, নৌপথ ও আকাশপথের বন্দরে গেলেই গ্রেফতার হবেন। এরপর সেই দেশের আইন-কানুন পর্যালোচনা করে দেশে ফেরত আনা সম্ভব। এ পর্যন্ত ১৫ বাংলাদেশিকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)।

সিআইডি সূত্র জানায়, লিবিয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৮১ জন মানব পাচারকারীকে চিহ্নিত করেছে সিআইডি। এর মধ্যে ৩১ জন গ্রেফতার হয়েছেন। আর বিদেশে অবস্থান করছেন ২৭ জন। বিদেশে অবস্থানকারীদের মধ্যে ১৮ জনের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। লিবিয়ায় গোলাগুলির ঘটনায় দেশের বিভিন্ন থানায় করা মামলাগুলোর মধ্যে ৪টির চার্জশিট প্রস্তুত করা হয়েছে। লিবিয়ার বাইরের তদন্তাধীন সব মানব পাচারকারীর ৩৮৭ জনের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ২৮ মে অবৈধ পথে ইতালি পাঠানোর সময় লিবিয়ার মিজদাহ শহরে মানব পাচারকারীরা গুলি করে হত্যা করে ৩০ জনকে। যেখানে ছিলেন ২৬ বাংলাদেশি। এ ঘটনায় স্থানীয় দালালদের ধরতে তৎপর হয় দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত ৪ জুন রাতে ১৬ জনের নামে পল্টন থানায় মামলা করেন লিবিয়ায় ভুক্তভোগী যুবক রাকিবের বাবা মান্নান মুন্সী। তার বাড়ি শরীয়তপুরে। গত সাত মাস আগে দুই দফায় মোট ৭ লাখ টাকায় দালালের মাধ্যমে লিবিয়ায় গিয়ে আটকা পড়েন রাকিব। একই সময় পল্টন থানায় ৩৬ জনের বিরুদ্ধে এবং বনানী থানায় ৩৩ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা হয়। এর আগে গত ২ জুন পল্টন থানায় ৩৮ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর