বুধবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পাঁচ বছরের কারাদন্ডের বিধান রেখে হচ্ছে জাতীয় আর্কাইভস আইন

নিজামুল হক বিপুল

পাঁচ বছরের কারাদন্ড ও ১ লাখ টাকা অর্থদন্ডের বিধান রেখে সরকার নতুন করে ‘বাংলাদেশ জাতীয় আর্কাইভস আইন, ২০২০’ করতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে আইনের খসড়াও চূড়ান্ত হয়েছে। আগে এ সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশ ছিল। সেটি রহিত করে সরকার নতুন করে আইনটি করছে।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, নতুন এই আইন অনুযায়ী সরকার সরকারি অফিসের কার্যাবলি সম্পাদনের সময় গৃহীত, উৎপাদিত বা প্রস্তুতকৃত ২৫ (পঁচিশ) বা ততোধিক বৎসরের পুরাতন ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন প্রশাসনিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা সাংস্কৃতিক তাৎপর্যসম্পন্ন যে কোনো মূল নথি, দলিলপত্র, পান্ডুলিপি, পত্রিকা, চিঠি, প্রতিবেদন, বহি, ম্যাগাজিন, পরিকল্পনা, নিবন্ধনবহি, মানচিত্র, চিত্র, ছবি, নকশা, তালিকা, গেজেট, গেজেটিয়ার অথবা অন্য যে কোনো রেকর্ড বা উহার অংশবিশেষ যাহা গ্রানাইট ব্যতীত ধাতববস্তু বা দলিল বা অন্য কোনো কিছুর উপর হস্তলিখিত, অঙ্কিত বা মুদ্রিত এবং সরকারি অফিস কর্তৃক গৃহীত অডিও-ভিজুয়াল সামগ্রী, সিনেমাটোগ্রাফ, টেপ, রেকর্ডিং, ডিস্ক, ফিল্ম, ইত্যাদিও আর্কাইভসে সংরক্ষণ করবে। একইভাবে ‘ব্যক্তিগত রেকর্ড’ অর্থাৎ ব্যক্তিগত কার্যাবলি সম্পাদনের সময় গৃহীত, উৎপাদিত বা প্রস্তুতকৃত অন্যূন ৩০ বৎসরের পুরাতন রেকর্ড, পান্ডুলিপি, দলিলপত্র বা নথিপত্র যাহার ঐতিহাসিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কিংবা সাংস্কৃতিক তাৎপর্য রয়েছে এমন দলিল দস্তাবেজ সংরক্ষণ করা হবে। প্রস্তাবিত নতুন এ আইন অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তি কোনোভাবে আর্কাইভসে রক্ষিত কোনো রেকর্ড, নথিপত্র, পত্রিকা, মানচিত্র, পান্ডুলিপি বা দলিলপত্র ইত্যাদি আত্মসাৎ করেন, দেশে বা বিদেশে পাচার করেন বা জাতীয় আর্কাইভস ভবনের বাহিরে অসৎ উদ্দেশ্যে স্থানান্তর করেন, তাহলে তাকে অনধিক ৫ বৎসরের কারাদন্ড এবং অনধিক ১ লাখ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হবে। যদি কোনো ব্যক্তি জ্ঞাতসারে জাতীয় আর্কাইভসে রক্ষিত কোনো রেকর্ড, নথিপত্র, পত্রিকা, মানচিত্র, পান্ডুলিপি বা দলিলপত্র ইত্যাদি বিকৃত করেন, দাগান্বিত করেন, ছিঁড়ে ফেলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বা সার্ভারে রক্ষিত তথ্য মুছে ফেলেন বা হ্যাক করেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অনধিক ৩ বৎসরের কারাদন্ড এবং অনধিক ২০  হাজার টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হবে এবং যদি কোনো ব্যক্তি ধারা আইনের ১০, ১১ ও ১২ এর উপ-ধারা (৩) এর অধীন মহাপরিচালক কর্তৃক, ক্ষেত্রমত, সরকারি ও ব্যক্তিগত রেকর্ড জমা প্রদান বা স্থানান্তর করিবার নির্দেশ অমান্য করেন তাহা হইলে তিনি অনধিক ১ বৎসরের কারাদন্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী মহাপরিচালকের চাহিদাক্রমে অন্যূন ২৫ বৎসরের পুরাতন রেকর্ডপত্র স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য জাতীয় আর্কাইভসে স্থানান্তর করা যাবে। ব্যক্তিগত রেকর্ড জাতীয় আর্কাইভসে স্থানান্তর করার ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির নিকট বা কোনো ইনস্টিটিউট, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অধীন ব্যক্তিগত রেকর্ড থাকিলে, উহার বিষয়ে মহাপরিচালককে অবহিত করিতে হইবে। ব্যক্তিগত রেকর্ড সম্পর্কে অবহিত হইলে মহাপরিচালক উহা পরিদর্শন করিবেন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উক্ত কাজে সার্বিক সহায়তা প্রদান করবেন। উপযুক্ত ক্ষেত্রে, ব্যক্তিগত রেকর্ড জাতীয় আর্কাইভসে স্থানান্তর করার জন্য মহাপরিচালক আদেশ প্রদান করতে পারবেন। প্রস্তাবিত আইনে বাংলাদেশ হতে পান্ডুলিপি এবং দলিল-দস্তাবেজ বিদেশে প্রেরণের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সরকারের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে মহাপরিচালক লিখিত অনুমতি প্রদান করলে কোনো ব্যক্তি কোনো সরকারি রেকর্ড, দলিল, পান্ডুলিপি বা মুদ্রিত কোনো বস্তু যাহা ৭৫ বছরের অধিক পুরাতন এবং যাহার ঐতিহাসিক অথবা সাংস্কৃতিক অথবা সাহিত্যিক মূল্য রহিয়াছে, উহা বাংলাদেশের বাহিরে প্রেরণ করিতে পারিবেন। তবে মহাপরিচালক যদি বিবেচনা করেন যে, উক্ত রেকর্ড, দলিলপত্র অথবা পান্ডুলিপির এইরূপ ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক বা সাহিত্যিক মূল্য রহিয়াছে যাহাতে বাংলাদেশের বাহিরে উহার প্রেরণ জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী, তাহলে তিনি অনুমতি প্রদানে অস্বীকার করতে পারবেন। তবে চাইলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি মহাপরিচালকের উক্ত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ১৪ দিনের মধ্যে সরকারের নিকট আপিল করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। সরকারি ও ব্যক্তিগত আর্কাইভস চিহ্নিতকরণ, সংগ্রহ, হেফাজত, সংরক্ষণ ও ব্যবহার সংক্রান্ত কার্যে এবং জাতীয় আর্কাইভস কর্তৃক বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদানের প্রক্রিয়া ও কার্যক্রমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর