বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

যুক্তরাজ্যে ফাইজারের টিকার অনুমোদন

আগামী সপ্তাহেই প্রয়োগ শুরু

আ স ম মাসুম, যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্যে ফাইজারের টিকার অনুমোদন

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য মার্কিন ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজার ও জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেক উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকাকে সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

করোনা নিয়ন্ত্রণে টিকার অনুমোদন দেওয়া প্রথম পশ্চিমা দেশ হিসেবে নিজের নাম লিখল যুক্তরাজ্য। গতকাল অনুমোদন দেওয়ার পর ব্রিটেন সরকার বলেছে, আগামী সপ্তাহ থেকে তারা এই টিকার প্রয়োগ করতে যাচ্ছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ফাইজার/বায়োএনটেকের করোনার টিকা ব্যবহারে অনুমোদন দিতে মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সির (এমএইচআরএ) সুপারিশ গ্রহণ করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, আগামী      সপ্তাহ থেকে যুক্তরাজ্য জুড়ে এই টিকা পাওয়া যাবে। তবে টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণদের বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

ফাইজারের প্রধান নির্বাহী বলেন, করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্রিটেনের এই অনুমোদন ঐতিহাসিক ঘটনা। বিজ্ঞান বিজয়ী হবে, এমন ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে আমরা কাজ করে আসছি। কোম্পানিটি জানায়, সামনের দিনগুলোর যে কোনো সময় করোনার প্রথম ডোজ আসবে। যুক্তরাজ্য ৪ কোটি ডোজ কিনেছে। চূড়ান্ত পরীক্ষায় এই টিকার ৯৫ শতাংশ কার্যকারিতা দেখা গেছে।

৪০ মিলিয়ন করোনা ভ্যাকসিন নিশ্চিত : এদিকে ভ্যাকসিন প্রদানের কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী নাদিম জাহাওয়িকে ভ্যাকসিন বিষয়ক স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ফাইজার তাদের টিকা তৈরি করছে জার্মানির জৈবপ্রযুক্তি সংস্থা বায়োএনটেকের সঙ্গে। এটি ৪৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে পরীক্ষামূলকভাবে দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে ২৯ হাজার মানুষকে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বয়স্ক, বিভিন্ন বর্ণ ও বিভিন্ন শারীরিক সমস্যাযুক্ত মানুষের ওপর প্রয়োগের বিষয়টি রয়েছে। এতে সব ধরনের মানুষের ওপর টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হচ্ছে। ৪ কোটি ভ্যাকসিন ডোজ অর্ডার করেছে ব্রিটেন। জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের জন্য এটি যথেষ্ট মনে করছেন কর্তৃপক্ষ। আশা করা হচ্ছে, এর মধ্যে ১ কোটি ডোজ এখনই পাওয়া যাবে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোও এসে পৌঁছবে। করোনাভীতি ও প্রায় অচল হয়ে পড়া অর্থনীতি থেকে মুক্তির প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এটাকে বিবেচনা করা হচ্ছে।

প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী, ভ্যাকসিনটি করোনাভাইরাস থেকে ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদেরও রক্ষা করতে ৯৪ শতাংশ কার্যকর এবং ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা গুরুতর ক্ষতির কারণ পরিলক্ষিত হয়নি। মেডিকেলস অ্যান্ড হেলথ কেয়ার প্রোডাক্ট রেগুলেটরি এজেন্সি (এমএইচআরএ) এ ডেটা পর্যালোচনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এতে ভ্যাকসিনটির গুণমান, সুরক্ষা এবং কার্যকারিতার স্ট্যান্ডার্ড নিশ্চিত করবে। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্রেক্সিট কার্যকর না হওয়া অবধি ভ্যাকসিনগুলো ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি দ্বারা অনুমোদিত হবে। তবে জনসাধারণের জরুরি প্রয়োজনে ব্রিটেনের মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্ট রেগুলেটরি এজেন্সি সাময়িকভাবে পণ্য অনুমোদনের ক্ষমতা রাখে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বিকশিত ভ্যাকসিন প্রয়োগে একই প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হতে পারে। সরকার সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লিখে অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনটি পর্যালোচনা করতে বলেছে। ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন, টিকা বিতরণের জন্য হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রয়েছে। বেলজিয়ামের কারখানা থেকে এ টিকা সরাসরি নিয়ে আসা হবে ব্রিটেনে। আর এখানকার স্টোরেজ থেকে হাসপাতালগুলোকে দেওয়া হবে। স্বাস্থ্যকর্মী এবং কেয়ার হোমের বাসিন্দারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ টিকার সুযোগ পাবেন। জয়েন্ট কমিটি অন ভ্যাকেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জেসিভিআই) মনে করে, কেয়ার হোমে থাকা বয়স্ক মানুষ এবং সেখানকার স্টাফদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। ৮০ বছরের বেশি বয়সী মানুষ দ্বিতীয় অগ্রাধিকার পাবেন। যাদের করোনায় মৃত্যুর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

বায়োএনটেক ও ফাইজারের টিকাই হচ্ছে ব্যবহারের জন্য প্রথম লাইসেন্সযুক্ত ভ্যাকসিন। তবে টিকা নিয়ে বিস্তর ভাবতে হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের। খুবই সাবধানতার সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। কারণ এটি সংরক্ষণ করতে হবে মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তারও কম তাপমাত্রায়। পরিবহনের সময় এবং ব্যবহারের আগে ফ্রিজে সর্বোচ্চ পাঁচ দিন রাখা যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর