বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

কোটি কোটি ডোজ ছাড়তে প্রস্তুত চীন

প্রতিদিন ডেস্ক

যুক্তরাজ্য সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি করোনা প্রতিরোধন ভ্যাকসিন বাজারে ছাড়ার অনুমোদন দেওয়া সংক্রান্ত খবরের পাশাপাশি চীনের এক তথ্যে জানা গেছে, তারা কোটি কোটি ভ্যাকসিন বাজারে ছাড়ার জন্য সব রকম প্রস্তুতি শেষ করেছে।

এ বিষয়ে গতকাল মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ চীনের শেনঝেন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় এসব ভ্যাকসিনের মজুদ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এক অনুসন্ধান থেকে সিএনএন বলেছে, ওই এলাকায় একটি ধূসর গুদামের অভ্যন্তরে গিয়ে সারি সারি সাদা চেম্বার দেখা গেছে। বিশেষভাবে ঘিরে রাখা এসব চেম্বারের বাইরে লাগানো রয়েছে ডিসপ্লে স্ক্রিন। তাতে চেম্বারের ভিতরকার বিশেষ তাপমাত্রা প্রদর্শন করছে। এর সামনেই মুখে মাস্ক, সার্জিক্যাল গাউন ও রাবারের দস্তানা পরে দাঁড়িয়ে নিরাপত্তারক্ষীরা। এ এলাকায় কাউকে ঢুকতে হলে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন বা আপাদমস্তক ঢাকা স্যুট পরা বাধ্যতামূলক। বিশেষ তাপমাত্রায় নিয়ন্ত্রিত ৩৫০ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে থাকা চেম্বারগুলো ভর্তি করা হচ্ছে চীনা কোম্পানির তৈরি করোনার ভ্যাকসিনে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রকেরা টিকার অনুমোদন দিলেই তা সরবরাহ করার জন্য প্রস্তুত চীন। এ গুদাম থেকেই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত কার্গো উড়োজাহাজে করে বিভিন্ন দেশে টিকা সরবরাহ করবে চীন। চীনের ভ্যাকসিনটি যেসব দেশে তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চলছে, সেখানে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই কয়েক কোটি ডোজ সরবরাহ করবে। চীনের রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, তাঁদের ভ্যাকসিন পরীক্ষা সফল হলে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, চীনে বর্তমানে চারটি প্রতিষ্ঠানের পাঁচটি ভ্যাকসিন তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় রয়েছে। ভ্যাকসিন পরীক্ষার তৃতীয় ধাপ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ পর্যায়ে টিকার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা দেখার পরই নিয়ন্ত্রকেরা অনুমোদন দেন। দেশের অভ্যন্তরে ভ্যাকসিনের সফলতার পর চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বের ১৬টি দেশে তা পরীক্ষা চালাচ্ছে। এরই মধ্যে চীনের ভ্যাকসিন সিনোভ্যাক ব্রাজিল ও তুরস্কের সঙ্গে সরবরাহের চুক্তি করেছে। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়াতেও এটি স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হবে। ক্যানসিনো বায়োলজিক চীনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যে ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছে, তা মেক্সিকোকে সরবরাহের জন্য চুক্তি করেছে। আরও চারটি দেশে এ ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চলছে। চায়না ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপ মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার ১০টি দেশে ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালাচ্ছে।

অক্সফোর্ডে ভ্যাকসিনে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া : ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির সঙ্গে আলাপকালে এক নারী দাবি করেন, অক্সফোর্ডের টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর থেকে তাঁর স্বামীর দেহে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তিনি নিজের সৃজনশীলতা হারিয়ে ফেলেছেন। এতে তাঁর কর্মক্ষমতাও কমে গেছে। ভারতে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (এসআইআই) তৈরি করছে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপের করোনা টিকা। এই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে জানিয়ে পাঁচ কোটি রুপি দাবি করেছিলেন চেন্নাইয়ের এক স্বেচ্ছাসেবক। ওই ব্যক্তির স্ত্রী বলেছেন, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় তাঁর স্বামী সৃজনশীলতা হারিয়ে ফেলেছেন। একই কারণে কাজও হারিয়েছেন তিনি। ফলে তাঁর আয়রোজগারেও প্রভাব পড়েছে। এ ঘটনায় সেরাম ইনস্টিটিউটকে গত ২১ নভেম্বর আইনি নোটিস পাঠিয়ে ভুক্তভোগী ওই স্বেচ্ছাসেবক দাবি করেছেন, সেরামের উৎপাদিত ‘কোভিশিল্ড’ টিকা নেওয়ার পরে তাঁর স্নায়ুতন্ত্র প্রায় সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়ে। আচরণগত নানা পরিবর্তন আসে। এ কারণে ক্ষতিপূরণ হিসেবে তিনি পাঁচ কোটি রুপি সেরামের কাছে দাবি করেন। এ ছাড়া অবিলম্বে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বন্ধ রাখার আবেদন জানিয়েছেন।

অবশ্য শুরু থেকেই এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। ওই স্বেচ্ছাসেবকের দাবি ‘মিথ্যা’ আখ্যা দিয়ে ১০০ কোটি রুপির মানহানির মামলাও করেছে সেরাম। প্রতিষ্ঠানটির বক্তব্য, ওই ব্যক্তির অভিযোগগুলো বিপজ্জনক ও ভ্রান্ত ধারণাভিত্তিক। প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে এমন অভিযোগ করা হচ্ছে। সেরাম আরও বলেছে, অক্সফোর্ডের করোনা টিকা ‘নিরাপদ ও এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর