বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
দুর্নীতিবাজ রুই কাতলাদের আইনের আওতায় আনতে হবে : হাই কোর্ট

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

নিজস্ব প্রতিবেদক

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করে বিদেশে পলাতক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন। দুদক কৌঁসুলি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত ২৬ নভেম্বর  মৌখিকভাবে পরোয়ানার আদেশ হয়। তবে সেই আদেশ প্রস্তুত হওয়ায় গতকাল তা স্বাক্ষরের জন্য পাঠানো হয়েছে।

এদিকে দুর্নীতিবাজ ও অর্থ পাচারকারীরা যত বড় রুই-কাতলাই হোক না কেন, তাদের আইনের  আওতায় আনতে হবে। তাদের ছাড় দিলে চলবে না। সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ নিয়ে বিদেশে পালিয়ে থাকা পি কে হালদারকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে এক শুনানিতে এমন মন্তব্য করেছে হাই কোর্ট। গতকাল বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানিকালে এ মন্তব্য করা হয়। আদালত পরবর্তী আদেশের জন্য ৯ ডিসেম্বর দিন ধার্য রেখেছে। এ সময়ের মধ্যে বিচারিক আদালতে পি কে হালদারের গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়ে প্রতিবেদন, মামলার এফআইআর ও সম্পত্তি-অর্থ জব্দের আদেশ আদালতে দাখিল করতে দুদককে বলা হয়েছে। আদালতে দুদকের পক্ষে মো. খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

১৮ নভেম্বর বাংলাদেশ প্রতিদিনে ‘পি কে হালদারকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে দুদক’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে গত ১৯ নভেম্বর তাকে বিদেশ থেকে ফেরাতে এবং গ্রেফতার করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত আদেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট।

এ আদেশ অনুসারে দুদক গতকাল একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে। সেখানে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগের কথা তুলে ধরা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে বিচারিক আদালতে আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দুদক। শুনানিতে আদালত বলে, যারা দুর্নীতিবাজ, যারা অর্থ পাচার করে তাদের ছাড় দিলে চলবে না। এ সময় খুরশীদ আলম খান বলেন, অবশ্যই।

তখন আদালত বলে, ‘তারা যত বড় রুই-কাতলা হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আইনের জালে যারা আটকে যায়, এদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের সবার উচিত দেশের সম্পদ রক্ষা করা। ২১ অনুচ্ছেদ অনুসারে এটা তো আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। কাজেই শুধু আদালত করবে, অন্যরা করবে না তা তো নয়, সবাইকে করতে হবে’ আদালত দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে আরও বলে, ‘তারা যাতে আইনের জালে ধরা পড়ে সে দায়িত্বও নিতে হবে। আমাদের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হবে। জাতির জনক স্বপ্ন দেখেছিলেন এ দেশকে সোনার বাংলা গড়ার। কাজেই ওনার সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।’

এক পর্যায়ে আদালত বলে, ‘খুব অপ্রত্যাশিত, আড়াই মাস হয়ে গেল গ্রেফতারের বিষয়ে একটা আদেশ হলো না।’ তখন খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘আমি যোগাযোগ করেছি। জানিয়েছি।’ আদালত বলে, ‘আপনি বলবেন, এটা নিয়ে উচ্চ আদালত অবহিত।’ পি কে হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থেকে অন্তত সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে দুই বিনিয়োগকারীর করা আবেদনের শুনানি নিয়ে ১৯ জানুয়ারি এক আদেশে পি কে হালদারসহ সংশ্লিষ্ট ২০ জনের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। এর মধ্যে দেশে ফিরতে পি কে হালদার এ বিষয়ে আদালতের কাছে আবেদন করতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের কাছে একটি পত্র দেন। এরপর কোম্পানিটি আদালতে আবেদন করে। ৭ সেপ্টেম্বর আদালত বলেছে, তিনি কখন কীভাবে আসবেন তা জানাতে। পরে ২০ অক্টোবর আবেদন করেছে কোম্পানিটি। যেখানে নির্বিঘেœ দেশে আসার কথা বলা হয়েছে এবং সেখানে ২৫ অক্টোবরের টিকিটের কপিও সংযুক্ত করা হয়।

২১ অক্টোবর হাই কোর্ট এ বিষয়ে আদেশ দেয়। আদেশে দেশে আসার সঙ্গে সঙ্গে তার গ্রেফতার নিশ্চিত করতে বলা হয়। পরে তার গ্রেফতারি পরোয়ানা বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্ট আদালতে পাঠাতে বলা হয়েছে। কিন্তু ২৪ অক্টোবর ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের আইনজীবী দুর্নীতি দমন কমিশন এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে জানিয়েছেন, পি কে হালদার ২৫ অক্টোবর দেশে ফিরছেন না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর