বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

সংকট উত্তরণে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

সংকট উত্তরণে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন

খালেকুজ্জামান

বড় বড় বুলি না আওড়িয়ে সংস্কারে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান। তিনি বলেন, উন্নয়নের বাজনা বাজিয়ে নেতা-নেত্রীর বন্দনা আর যে যেদিক থেকে পারো পকেট পুরাও চলছে বেপরোয়াভাবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি।

বাসদ নেতা বলেন, ভোটতন্ত্র রক্ষা করা যাচ্ছে না। ধর্মের নামে রাজনীতি, চেতনার নামে চলছে ব্যবসা। আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় অর্থনীতি, রাজনীতি, সামাজিক, পারিবারিক সমন্ধ-সম্পর্ক, সাংস্কৃতিক  পরিমন্ডল, শিক্ষা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, আইন, বিচারব্যবস্থা, শাসন-প্রশাসন সব ক্ষেত্রে ধস নেমেছে। সংকট উত্তরণে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় উপযোগী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে খালেকুজ্জামান বলেন, সব দিক থেকে ঘিরে ধরা সার্বিক বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, অনিয়ম ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কবলে পতিত দেশ। অনাকাক্সিক্ষত, অপ্রত্যাশিত, লোমহর্ষক, হৃদয়বিদারক ঘটনা-দুর্ঘটনা যেন সারিবেঁধে একটার পর একটা ঘটে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ যেন হারিয়ে গিয়ে হানাদার-রাজাকারকবলিত বাংলাদেশের চিত্র ফুটে উঠেছে। স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর এ দৃশ্য দেখার কথা ছিল না। 

প্রবীণ এ রাজনীতিক বলেন, পারস্পারিক দোষারোপ ঝড়ের গতিবেগ পাচ্ছে। সে তুলনায় দায় নিয়ে দায়িত্ব পালনের আগ্রহ কম। মুক্তিযুদ্ধের গণআকাক্সক্ষা, অঙ্গীকার, ঘোষণা, চেতনা সবই উপেক্ষিত চরমভাবে। যে সাম্যমানবিক মর্যাদা আর সামাজিক ন্যায়বিচারের ঘোষণা দিয়ে মুক্তির জনযুদ্ধ শুরু হয়েছিল তা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সাম্যের বদলে বৈষম্যের পাহাড় তৈরি হয়েছে। পাকিস্তানি ২২ পরিবারের স্থলে বাঙালি ২২ হাজার  পরিবার গজিয়েছে। 

নিজ দলের কর্মকা  প্রসঙ্গে বাসদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, করোনা মহাদুর্যোগের সময়ও দলের পক্ষ থেকে জনসেবা ও জনস্বার্থকেন্দ্রিক কার্যক্রম যথাসাধ্য চালিয়ে যাচ্ছি। পরিস্থিতি বিবেচনায় উপযোগী সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে আমরা অবিচল রয়েছি। জনগণের মধ্যে দলের সাংগঠনিক, আদর্শিক ও সংগ্রামী চেতনা শক্তির বিকাশ সাধনই আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। 

বাম দলগুলোর রাজনীতি প্রসঙ্গে খালেকুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাপূর্বকালে এবং স্বাধীনতার অব্যাবহিতকালেও বাম দলগুলোর শক্তিশালী রাজনৈতিক ধারা ছিল। বড় ধরনের কিছু তাত্ত্বিক ভ্রান্তি, অবস্থা ভেদে বাস্তব কর্মপন্থা ও কর্মকৌশল নিতে না পারা, শাসক শ্রেণির দমন-পীড়ন ও মতাদর্শিক সংঘাতে দ্বন্দ্ব, সমন্বয় ঠিকমতো করতে না পারাসহ সবকিছু মিলিয়ে বাম পন্থায় দুর্বলতা রয়েছে। বর্তমান ঘাটতি দুর্বলতার পাশাপাশি বিকাশ সম্ভাবনাও উত্তোরত্তর দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল ক্ষয়িষ্ণুতা ও বিকাশ উত্তরণের বাস্তবতা দুটোই রয়েছে। নীতি-আদর্শের ঘাটতিও দুর্বলতা। আদর্শবাদীতার কঠিন সংকল্প সংগ্রামের পথ ছেড়ে সহজ পথে নগদ প্রাপ্তি লাভের মোহের টানে আদর্শ থেকে সরে যায়। তবে এটাই বামপন্থার পূর্ণ চিত্র নয়। তিনি বলেন, বুর্জোয়া রাজনৈতিক শক্তির ক্ষমতা দখল আর বামপন্থী তথা সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির ক্ষমতায় যাওয়া এক সমীকরণে দেখা চলে না। টাকা, পেশিশক্তি, কায়েমি স্বার্থবাদী চক্রের পৃষ্ঠপোষকতা, প্রচার শক্তি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তির নানামুখী মদদ, আঞ্চলিকতা, সাম্প্রদায়িকতার সুড়সুড়িসহ যখন যেমন তখন তেমন ইত্যাদির ওপর ভর করে বুর্জোয়া দল বা জোট ক্ষমতায় আসে। অন্যদিকে সব পশ্চাৎমুখী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে মোকাবিলা করে জনগণের সংগ্রামী শক্তির ওপর দাঁড়িয়ে বামপন্থী শক্তিকে ক্ষমতায় আসতে হয়। সমাজতন্ত্র ইতিহাসের অনিবার্য পরিণতি হলেও সাম্যবাদী সমাজতান্ত্রিক শক্তির রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হওয়া দীর্ঘ ঐতিহাসিক পরীক্ষায় বিজয় সময়সাপেক্ষ বিষয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর