শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
মাদক মামলা

পাপিয়া দম্পতির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের শুনানি পেছাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

মাদক মামলায় যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান সুমনের অভিযোগ (চার্জ) গঠনের শুনানি পিছিয়েছে। শুনানির নতুন দিন ১২ জানুয়ারি ধার্য করেছে আদালত। গতকাল ঢাকার তৃতীয় যুগ্ম-মহানগর দায়রা জজ আমিরুল ইসলামের আদালত নতুন এ তারিখ ধার্য করে।

এদিন আসামি পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমানকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য সময়ের আবেদন করেন। এ সময় আদালত  আবেদন মঞ্জুর করে অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ১২ জানুয়ারি দিন ধার্য করে। আদালত সূত্র জানায়, ১০ সেপ্টেম্বর এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন (চার্জশিট) দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। ১৩ সেপ্টেম্বর বিচারক ‘দেখিলাম’ বলে স্বাক্ষর করেন। পরে ২০ সেপ্টেম্বর আদালতে নথি পেশ করা হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি বিদেশি মদ জব্দের ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাটি করা হয়। ওই দিন ফার্মগেট এলাকার ২৮ নম্বর ইন্দিরা রোডে অবস্থিত রওশন’স ডমিনো রিলিভো নামের বিলাসবহুল ভবনে তাদের দুটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ ও নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেকের পাতা, বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি ভিসা ও এটিএম কার্ড জব্দ করা হয়। এর আগে ১২ অক্টোবর অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় পাপিয়া দম্পতিকে ২০ বছর সাজা দেন ঢাকা মহানগরের ১ নম্বর স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ। এ ছাড়া একই মামলায় অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের আরেক ধারায় তাদের সাত বছরের কারাদ- দেওয়া হয়। তবে দুটি ধারার সাজা একই সঙ্গে চলবে। গ্রেফতার করার পরই শামীমা নূর পাপিয়া-মফিজুর রহমান দম্পতির অঢেল সম্পদ ও একাধিক গাড়ি-বাড়ির খোঁজ পায় র‌্যাব। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতারের পর তাদের নিয়ে টানা ১৬ ঘণ্টা নরসিংদী ও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় র‌্যাব।

এরপর প্রতারণা, অবৈধ অর্থ পাচার, জাল টাকা সরবরাহ, মাদক ব্যবসা ও অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে পাপিয়াকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে যুব মহিলা লীগ।

সে সময় র‌্যাব জানিয়েছিল, সুনির্দিষ্ট কোনো পেশা না থাকা সত্ত্বেও পাপিয়া দম্পতি স্বল্প সময়ে বিপুল সম্পত্তি ও অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে। ফার্মগেটে দুটি ফ্ল্যাট, নরসিংদী শহরে দুটি ফ্ল্যাট ও ২ কোটি টাকা দামের দুটি প্লট, বিলাসবহুল চারটি গাড়ি এবং বিএফডিসির সামনে কার এক্সচেঞ্জ নামে একটি গাড়ির শোরুম রয়েছে তাদের।

কার এক্সচেঞ্জ শোরুমে পাপিয়ার ১ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। নরসিংদী শহরে কেএমসি কার ওয়াশ অ্যান্ড অটো সলিউশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে তাদের। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে নামে ও বেনামে অ্যাকাউন্ট খুলে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত রাখে এই দম্পতি। গত বছর ১২ অক্টোবর থেকে চলতি বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনের ২১ তলার প্রেসিডেন্ট কক্ষ ভাড়া নিয়ে এই দম্পতিকে অবস্থান করতে দেখা যায়। সেখানে তারা ৫৯ দিনে মোট ৮১ লাখ ৪২ হাজার ৮৮৮ টাকা বিল পরিশোধ করে। এর বাইরে হোটেলের বার এককভাবে ভাড়া নিয়ে প্রতিদিন আড়াই লাখ টাকা বিল দিত তারা। এত বিপুল অর্থের উৎস জানতে চাইলে তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। পাপিয়া দম্পতি পুলিশের এসআই ও বাংলাদেশ রেলওয়েতে বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার নামে ১১ লাখ টাকা, একটি কারখানায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কথা বলে ৩৫ লাখ টাকা, একটি সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স দেওয়ার নাম করে ২৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। তবে টাকার বিনিময়ে কারও কোনো সংযোগ দিতে পারেনি তারা। এ ছাড়া নরসিংদী এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক, অস্ত্র ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধকর্মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছে পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান সুমন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর