শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

রাজনৈতিক আস্থাহীনতায় দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে না

মাহমুদ আজহার

রাজনৈতিক আস্থাহীনতায় দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে না

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশে রাজনৈতিক আস্থাহীনতার কারণে বিনিয়োগ হচ্ছে না। উন্নয়নের নামে মেগা প্রজেক্টে ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে। এটাই অনির্বাচিত সরকারের বৈশিষ্ট্য।

বুধবার বিকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে ফোনালাপে তিনি এসব কথা বলেন।

আমীর খসরু বলেন, আজ হাজার হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার হচ্ছে। সরকার তা ফেরাতে পারছে না। তাদের সেই শক্ত উদ্যোগ নেই। কারণ তাদের লোকজনই এই পাচারের সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, সরকারের লোকজনের লুটপাটের কারণে ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান নাজুক অবস্থায়। দুর্নীতিগ্রস্ত উন্নয়নের কারণে দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো ফোকলা হয়ে গেছে। শুধু বাইরে একটি আবরণ আছে, ভিতরে কিছুই নেই।

বিএনপির  নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অন্যতম এই নেতা বলেন, দেশের ভিতরে প্রতিটি স্তরে দুর্নীতি, ঘুষ আর অনিয়ম। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সরকারি তহবিলে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে এর মূল্য দেশের মানুষকেই দিতে হচ্ছে। যারা এসব করছেন, তারা তো উধাও হয়ে যাচ্ছেন। এজন্য বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। দুর্নীতির টাকা জোগান দেওয়ার জন্যই জনগণকে চড়ামূল্য দিতে হচ্ছে। এভাবেই দিন দিন জনগণের ক্রয়ক্ষমতা নিম্নগামী হচ্ছে। করোনাকালেও সব সেক্টরে চরম দুর্নীতি হচ্ছে অভিযোগ করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য খাতের সব সার্ভিসে চরম দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে। সরকার স্বাস্থ্যসেবা ও ব্যবস্থাপনাকে গুলিয়ে ফেলছে। কার্যত অনির্বাচিত সরকার হওয়ায় সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই। এমনও হয়েছে মানুষ রাস্তায় ঘুরে ঘুরে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। তবে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান নানাভাবে মাঠে কাজ করেছে। আমরাই যেমন বিএনপির পক্ষ থেকে করোনায় লকডাউন চলাকালে প্রায় ২ কোটি মানুষকে খাবার দিয়েছি। তিনি বলেন, যারা কর্ম হারিয়েছেন, নিঃস্ব, তাদের ক্যাশ ডেলিভারিতেও দুর্নীতি হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা প্রণোদনা পায়নি। তিনি বলেন, যারা নি¤œআয়ের মানুষ তাদের নগদ টাকা দিতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের কার্যকর প্রণোদনা দিতে হবে। আমাদের জনগোষ্ঠীর বিশাল একটি অংশ চাকরি হারিয়েছে। সাংবাদিকরাও চাকরি হারিয়েছেন। সবার দিকেই সরকারকে নজর দিতে হবে। সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারের শীর্ষ থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে এখন অনির্বাচিত প্রতিনিধি থাকায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। এই আস্থা সৃষ্টি না হলে বিনিয়োগ বা অর্থনীতির উন্নয়নে গতি পাবে না। বিএনপির রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি এখন রাজনৈতিকভাবে খুবই শক্তিশালী, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। বিএনপি দেশের জনগণকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে। সরকারের কিছু লোক অগণতান্ত্রিক জনবিরোধী একটি চক্র গড়ে তুলেছে। যেহেতু সরকার অনির্বাচিত তাই তারা অন্য শক্তির ওপর ভর করে টিকে থাকার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সেখান থেকে জাতি মুক্তি চায়। জনগণ তার মালিকানা ফিরে পেতে চায়। ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণ যেভাবে ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে জয়ী হয়েছে, ঠিক একইভাবে এই অনির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধেও জয়ী হবে।

বিএনপিতে নেতৃত্ব সংকট আছে কি না জানতে চাইলে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটা মোটেও ঠিক নয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটি প্রতি শনিবার বৈঠক করে দলের সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানে কারও একক সিদ্ধান্ত হয় না। সবার মতামতের ভিত্তিতেই দল পরিচালিত হচ্ছে। এখন নেতৃত্ব আরও বেশি শক্তিশালী। বিএনপিই দক্ষিণ এশিয়াতে একমাত্র দল, যার প্রতি শনিবার স্থায়ী কমিটির বৈঠক করে এজেন্ডাভিত্তিক পলিসি নির্ধারণ করে। একজনের কোনো সিদ্ধান্তে বিএনপি চলছে না।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোটের সঙ্গে বিএনপির টানাপড়েন আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো সংকট বা টানাপড়েন নেই। গণতন্ত্রের মুক্তির পথে যে বিষয়গুলো জড়িত তাতে শুধু জোট ফ্রন্ট নয়, বাংলাদেশের মানুষই ঐক্যবদ্ধ। সবার গন্তব্যস্থল গণতন্ত্রের মুক্তি। জনগণ তার মালিকানা ফিরে পেতে চায়। এজন্য গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলবেই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর