রবিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

রাজনৈতিক শূন্যতায় মৌলবাদীদের উত্থান

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজনৈতিক শূন্যতায় মৌলবাদীদের উত্থান

শরীফ নুরুল আম্বিয়া

বাংলাদেশের জাসদ সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেছেন, দেশে গণতন্ত্রের সংকট চলছে। গণতান্ত্রিক সংকট ও রাজনৈতিক শূন্যতার কারণেই মৌলবাদীদের উত্থান ঘটেছে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।  

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের অন্যতম শরিক দলের নেতা শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, আজকে স্বৈরাচার পতন দিবস। ১৯৯০ সালে সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উজ্জ্বলতম একটি দিন। এরশাদ আমলে সামরিক সরকার যেমন হত্যাকান্ড করত, এখন রাজনৈতিক কর্তৃত্বপরায়ণ সরকারের আমলেও হত্যাকান্ড চলছে। এর মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডও চলছে। রাতের বেলা ভোট করার প্রবণতা আছে। যার ফলে দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্যটাও ধ্বংস হয়ে গেছে। সত্য  কথাটা বলা যাবে কি না তা নিয়েও মানুষের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়েছে। আমাদের জাতীয় সংসদ আছে, সেটাকে কার্যকর বলা যায় না। সত্যিকারের একটি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল নেই। প্রবীণ এই রাজনীতিক বলেন, এরশাদ পেশাগত দায়িত্ব ছেড়ে জোরপূর্বক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করলেন। উনি যে ক্ষমতা দখল করবেন, সেটা আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। কারণ নানা সময়ে বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন ‘দেশ পরিচালনায় সেনাবাহিনীর আরও বড় ভূমিকা রাখা উচিত’। এতে বোঝা যাচ্ছিল উনি আসবেন। তবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণ করলেও সাধারণ মানুষ তাকে পছন্দ করেননি। কিন্তু কিছু কিছু পত্রিকা তাকে স্বাগত জানিয়েছে। ছাত্ররা সে সময় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে। তারা ধীরে ধীরে শিক্ষা আন্দোলন, সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন ১৯৮২-৮৩ সালে দানা বেঁধে ওঠে। এরপর বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, শিক্ষক, চিকিৎসকদের সংগঠন, আইনজীবীদের সংগঠন, শ্রমিকদের সংগঠন এদের সঙ্গে যুক্ত হয়। তিনি বলেন, এরশাদ সামরিক স্বৈরাচারী শাসন বৈধতা দেওয়ার জন্য ’৮৪ সালে একটি পাতানো নির্বাচন দেন। এ সময় রাজনৈতিক দলগুলো বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই নির্বাচনের সময় আন্দোলন গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে। তখন সারা দেশে একটাই কথা ছিল, ‘‘এক দফা এক দাবি ‘এরশাদ’ তুই কবে যাবি’’। পরবর্তীতে অনেকে হত্যাকান্ডের শিকার হন। এর মধ্যে নূর হোসেন, ডা. মিলন, জিহাদসহ অনেককেই হত্যা করা হয়েছে। এরশাদ ক্ষমতায় এসেছে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে। ক্ষমতা থেকে বিদায় নিয়েছে জনগণের আন্দোলনের মুখে।  সাম্প্রতিক সময়ে ভাস্কর্যবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে বাংলাদেশের জাসদ সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, মৌলবাদীদের জন্য রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম সংবিধানে সংযোজন করে গেছেন এরশাদ। সেটার কার্যক্রম এখনো চলছে। ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ঐকমত্যের সরকার গঠন করা হয়, তখনো সেটা পরিবর্তন করা হয়নি। এর সূত্র ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০১৩ সালে হেফাজতের সঙ্গে সমঝোতা করেছে। যার ফলে মৌলবাদীদের আস্ফালন আরও বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ যুদ্ধ করেছে, লাখ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন, লাখো মা-বোন ইজ্জত দিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সেই আদর্শটাই জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে। এখানে গেম প্ল্যান আছে কিনা ভাবতে হবে। এখনো সময় আছে, মৌলবাদীদের শক্তভাবে দমন করা উচিত। শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ভাস্কর্য নিয়ে বিতর্ক এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে। আবার অজ্ঞতার কারণেও হতে পারে। এক সময়ে ছবি তোলা হলে গুনাহ হবে-গ্রামগঞ্জে এমন লোক পাওয়া যেত। এখনো গ্রামগঞ্জে ফতোয়া দিয়ে বিচার করা হয়। সভ্য সমাজ, মানবিক সমাজের মধ্য দিয়ে কল্যাণমুখী রাষ্ট্র করতে চাইলে অনেক কিছু প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। আর যদি সরকার বা অন্য কেউ রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করার জন্য মৌলবাদীদের ব্যবহার করে তাহলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ক্ষমতাসীন জোটের অন্যতম এ নেতা বলেন, ১৪ দল গড়ে উঠেছিল ২৩ দফার ভিত্তিতে। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলন, একসঙ্গে নির্বাচন ইত্যাদি বিষয়ে। কিন্তু এখন সরকার একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে ২০১৩ সালে। এখন সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একটা প্ল্যাটফরম হতে পারে। গোটা দেশবাসীকে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। শুধু বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে নয়, সমস্ত বিশ্বেই জ্ঞানী-গুণীদের রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক গৌরবের ব্যক্তিদের নিয়ে ভাস্কর্য আছে। শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই নন, আমি মনে করি, দেশে যেসব বীরশ্রেষ্ঠ, বীরবিক্রম আছে তাঁদের ভাস্কর্য হতে পারে। এ ছাড়াও যেসব জেলায় সম্মুখযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা মারা গেছেন তাঁদের ভাস্কর্য থাকা উচিত। এ ছাড়াও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লালন, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, কাজী নজরুলের ভাস্কর্য থাকা উচিত।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর