বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
একনেকে প্রধানমন্ত্রী

প্রকল্প সংশোধন, সময় বাড়ানো টাকা বাড়ানোর ধারা বন্ধ করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকল্প সংশোধন, সময় বাড়ানো টাকা বাড়ানোর ধারা বন্ধ করুন

বারবার প্রকল্প সংশোধন করে সময় ও খরচ বাড়ানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আবার সংশোধন, আবার টাকা বাড়ানো এ ধরনের ধারা বন্ধ করুন। প্রকল্প যে সময়ে নেবেন, সেই সময়ে শেষ হওয়া উচিত। সময় আরও বাড়িয়ে নিয়ে আসেন, ব্যয়ও বাড়িয়ে নিয়ে আসেন, এটা হতে পারে না।

গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণাঞ্চলের সব সড়কের মাস্টার প্ল্যান করারও নির্দেশ দেন। একনেক সভা শেষে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য তুলে ধরেন।

একনেক সভায় ৩ হাজার ৯০৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩ হাজার ৫২৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৩৭৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা।  একনেকে কৃষি মন্ত্রণালয় ‘কৃষি তথ্য সার্ভিস আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল কৃষি তথ্য এবং যোগাযোগ শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের প্রথম সংশোধন আনা হয়েছে। সংশোধনীতে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়েছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এখন এর মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে শামসুল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী সরাসরি জানতে চেয়েছেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন দেরি হওয়ার কারণ কী? তিনি জানতে চেয়েছেন প্রকল্প পরিচালক কে? প্রকল্প পরিচালক উপস্থিত ছিলেন না। সেখানকার সচিবও মনে হয় নতুন। তিনিও এর তেমন একটা উত্তর দেননি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেন। সব প্রকল্পে এরকম দেরি হয় কেন? এটা ছোট টাকার প্রকল্প। এটা তো এতদিন লাগার কথা নয়। যখন প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা তখন আরও দুই বছর মেয়াদ বাড়াচ্ছেন কেন? এ সময় বাড়ানোর জন্য ৬৮ কোটি টাকাকে এখন ১০৯ কোটি বানালেন। এটা নিয়ে পর্যালোচনা করুন। প্রকল্প পরিচালকদের ডাকুন। সব প্রকল্প যেন যথাসময়ে শেষ হয় সেই ব্যবস্থা নিন। কেন বিলম্ব হচ্ছে তার কারণ অনুসন্ধান করুন।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ‘চরখালী-তুষখালী-মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ (জেড-৮৭০১)’ প্রকল্পের প্রথম সংশোধন আনা হয়েছে। সংশোধনীতে ৪৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পটির মূল খরচ ১০৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৪৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে। ২০১৭ সালের এপ্রিলে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এখন এই প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত।

প্রকল্পটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে শামসুল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী এখানেও বলেছেন ২০১৭ সালে এক বছরের জন্য প্রকল্প নিলেন, এ প্রকল্প এতদিন লাগা উচিত হয়নি। এটা তো পুরনো সড়ক ছিল। এটা তো আপনারা তুলে ফেলতে পারতেন। এত দীর্ঘ সময় কেন লাগল? আবার সংশোধন, আবার টাকা বাড়ানো, এ ধরনের ধারা বন্ধ করুন। প্রকল্প যে সময়ে নেবেন, সে সময়ে শেষ হওয়া উচিত। সময় আরও বাড়িয়ে নিয়ে আসেন, ব্যয়ও আরও বাড়িয়ে নিয়ে আসেন। এটা আর হতে পারে না। এখন ২০২১ সাল পর্যন্ত নিয়েছেন, এটাই শেষ। এরপর আর বাড়াতে পারব না। যখন যে প্রকল্প হবে, তা যথাসময়ে শেষ করবেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) যথেষ্ট জোরের সঙ্গে এ কথা বলেছেন।

দক্ষিণাঞ্চলের সব সড়কের মাস্টার প্ল্যান করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য বলেন, পদ্মা সেতু হলে উন্নয়ন কার্যক্রমে একটা নতুন গতিশীলতা তৈরি হবে। তিনি বলেন, সে কারণে দক্ষিণাঞ্চলের পুরো এলাকার মাস্টার প্ল্যান করুন। কী কী রাস্তাঘাট আছে, সেগুলোতে যাতে অনেক ভারী যানবাহন যেতে পারে সেই ব্যবস্থা করুন। মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী সেটা করা উচিত। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেন, এভারেজ ডেইলি ট্রাফিক অনেক বেড়ে যাবে। এটা বাড়ছেই। এখন থেকেই পুনর্গঠনের, পুনর্নির্মাণের ও শক্তিশালী করার কাজ শুরু করতে হবে। পদ্মা সেতু হলে এ এলাকায় গতিশীলতা বাড়বে।

‘ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সড়ক উন্নয়ন ও ড্রেনেজ নেটওয়ার্কসহ নাগরিক সেবা উন্নতকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক সভা। এতে খরচ হবে ১ হাজার ৫৭৫ কোটি ৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ময়মনসিংহ শহরের একটি বড় গাছও যেন কাটা না পড়ে এবং মাঠে যেন দালান না হয়,’ এমন নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে শামসুল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শহরটাকে (ময়মনসিংহ) ভালো করে চেনেন। এক সময় প্রত্যেকটা রাস্তার পাশে বড় বড় ড্রেন ছিল। এ প্রকল্পে যা টাকা চেয়েছে, তা তিনি দিয়েছেন। এমনকি এই প্রকল্পে ১০ শতাংশ টাকা ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের দেওয়ার কথা ছিল, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এই টাকাও তাদের দিতে হবে না। কাজটা ভালো করে করেন। একটাই শর্ত, কাজ যতটা মানসম্মত হওয়া দরকার, ততটাই যেন হয়। তিনি আরও বলেন, ময়মনসিংহের ঐতিহ্য আছে। ভালো ভালো মাঠ ছিল। বড় বড় গাছ ছিল। একটি বড় গাছও যেন কাটা না পড়ে। মাঠগুলোয় যেন বিল্ডিং না ওঠে। এটি তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন। একনেক সভায় উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের (এমসিসি) মেয়র ইকরামুল হক টিটু। তাকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য তুলে ধরে শামসুল আলম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তো সব চেনেন। তিনি বলেন, আপনি (এমসিসি মেয়র) একজন বিখ্যাত ঠিকাদার পরিবারের লোক। আপনি তো কোয়ালিটি বুঝতেই পারেন। প্রধানমন্ত্রী ওখানকার রাস্তাঘাটের ওপর জোর দিয়েছেন, যাতে মানসম্পন্ন হয়। আর এ প্রকল্পও যেন যথাসময়ে শেষ হয়। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা রাখতে হবে। আজকাল বর্জ্য আগের মতো জমিয়ে রাখা যাবে না। এগুলো প্রক্রিয়াকরণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

৩৯০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে চার প্রকল্পের অনুমোদন : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৩ হাজার ৯০৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩ হাজার ৫২৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৩৭৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা। গতকাল একনেক চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রকল্পগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সংযুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। সভা শেষে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর