বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

সামনে চ্যালেঞ্জ বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে

মানিক মুনতাসির

মহামারী রূপ নেওয়া করোনার ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও এরই মধ্যে শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। ফলে সারা বিশ্বে আবারও সৃষ্টি হয়েছে স্থবিরতা। অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু রাখা হয়েছে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। ভ্যাকসিন আবিষ্কারে স্বপ্ন দেখছে বিশ্ব। হয়তো খুব দ্রুতই ভ্যাকসিন চলে আসবে। যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়াসহ অনেক দেশ অবশ্য ইতিমধ্যে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরুও করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কভিড-পরবর্তী বিশ্ব অর্থনীতি সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে তা হলো বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান। সব দেশই চাইবে বিদেশি বিনিয়োগ ধরতে। এ কারণে উদ্যোক্তাদের জন্য ছাড়ও দেবে অনেকেই। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকেও বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কঠিন চ্যালেঞ্জিং সময় পার করতে হবে।

এদিকে কঠিন সময় পার করছে অপ্রাতিষ্ঠানিক ও বেসরকারি খাত। নতুন কর্মী নিয়োগ প্রায় বন্ধ। সরকারি খাতেও বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। লোকসান ঠেকাতে আর প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে সীমিত পরিসরে কর্মী নিয়োগ চালু রেখেছে ব্যাংক, বীমাসহ করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের হিসেবে কভিডের কারণে জুলাই পর্যন্ত প্রায় ৩২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছে। আর আয় কমেছে ৮৪ শতাংশ মানুষের। এমনকি যারা কাজ হারিয়েছে বা দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে, তাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। আর বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মতে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রভাবে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বিডায় বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব কমেছে প্রায় ৯৩ শতাংশ। এ ছাড়া দেশি-বিদেশি মিলিয়ে সামগ্রিকভাবে ৭২ শতাংশ বিনিয়োগ নিবন্ধন কমেছে। ফলে সামনের দিনগুলোয় বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে না পারলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে। জানা গেছে, গত বছরের শেষ দিকে শুরু হওয়া মহামারী করোনাভাইরাসের ধাক্কা সামলাতে বিশ্ববাসীর মতো বাংলাদেশকেও হিমশিম খেতে হচ্ছে এ বছরের শেষে এসেও। বিশেষ করে দেশের বেসরকারি খাতের অবস্থা খুবই নাজুক। নতুন করে তো কোনো কর্মী নিয়োগ হচ্ছেই না, বরং পুরনোদের ধরে রাখতে উদ্যোক্তারা হিমশিম খাচ্ছেন। সরকারি খাতে চলছে ব্যয় সংকোচন নীতির বাস্তবায়ন। ফলে সরকারি প্রতিষ্ঠানেও নতুন কর্মী নিয়োগ আগের মতো হচ্ছে না। আবার বিদেশে যাওয়ার পথও প্রায় বন্ধ। চলতি বছরের গত ১০ মাসে ৩ লাখ কর্মী বিদেশে যেতে পারেনি কাজের উদ্দেশ্যে। অথচ আগের বছরের একই সময়ে অন্তত ১০ লাখ কর্মী কাজের উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে গিয়েছিল।

উপরন্তু করোনাভাইরাস আতঙ্কে দেশে গত কয়েক মাসে অন্তত ১২ লাখ বাংলাদেশি ফিরে এসেছে, যার মধ্য থেকে মাত্র ২ লাখ ফিরে যেতে পেরেছে পুরনো কর্মস্থলে। দেশের অভ্যন্তরে চাকরি, শ্রমবাজার, কিংবা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের পুরো ব্যবস্থাই প্রায় ধসে পড়েছে। নিজেদের প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে উদ্যোক্তারা রীতিমতো যুদ্ধ করছেন। আয় কমে যাওয়ায় সরকারও ব্যয় কমিয়ে আনছে। ফলে কাজের বাজার নিয়ে সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতেই বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।

এদিকে বেসরকারি সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের তথ্যমতে, দেশে কভিড-১৯-এর কারণে জুলাই পর্যন্ত প্রায় ৩২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছে। আর আয় কমেছে ৮৪ শতাংশ মানুষের। এমনকি যারা কাজ হারিয়েছে বা দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে তাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। সংস্থা দুটি গতকাল এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। জুন শেষে নতুন করে ২২ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ দরিদ্র হয়ে গেছে, যা এপ্রিলে ছিল ২১ দশমিক ৭০ শতাংশ। করোনা মোকাবিলায় সরকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তা বৃহৎ শিল্পের জন্য কিছুটা কার্যকর হলেও এসএমই খাতে তেমন কাজে আসেনি। এ ছাড়া পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের তুলনায় পলিসিগত সহায়তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে সংস্থা দুটি। এমনকি এ করোনাকালে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের যেসব কার্যক্রম ছিল সেগুলোও সঠিকভাবে কাজে আসেনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর