শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রধানমন্ত্রীর সাহসী সিদ্ধান্তের ফসল

-সৈয়দ আবুল হোসেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন বলেছেন, পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানো বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের জন্য একটি আনন্দের খবর। কারণ পদ্মা সেতুর সঙ্গে দেশের মানুষের ভালোবাসা ও আবেগ জড়িয়ে আছে। শত  বাধার পরও স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন হচ্ছে, পূর্ণতার দিকে যাচ্ছে এটা সবার জন্য খুশির খবর। এ পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্তের ফসল। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন। সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন, এ সেতুর নির্মাণ প্রক্রিয়ায়, প্রস্তুতি কাজ দুই বছরে শেষ করে আমি আমার যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছিলাম। আমি পদ্মা সেতু নির্মাণে একজন অংশীদার ছিলাম- এটা ভেবে আমি গর্বিত। আমি আনন্দিত। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রস্তুতি কাজ করতে যেখানে ১০ বছর লেগেছে, আমি পদ্মা সেতুর প্রস্তুতি কাজ সেখানে দুই বছরে শেষ করেছি। এ দুই বছরে ভূমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, পরামর্শক নিয়োগে দরপত্র আহ্বান, মূল সেতুর দরপত্র আহ্বান, বিশ্বব্যাংকসহ দাতা সংস্থার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করি। বিশ্বব্যাংক এবং দেশীয় স্বার্থান্বেষী মহল পদ্মা সেতু নিয়ে যে ষড়যন্ত্র করেছে, আমাকে অসত্য অভিযোগে নাজেহাল করে পদ্মা সেতু নির্মাণকে বিলম্বিত করেছে- তা কানাডার আদালতের রায় ও দুদকের তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রাথমিক দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে দিয়েছিলেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর অর্পিত দায়িত্ব যথারীতি পালন করেছি। পদ্মা সেতু নিয়ে দেশি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র না হলে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরেই পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হতো। এত দিনে আমরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরেক ধাপ এগিয়ে যেতাম। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার হাতে পদ্মা সেতু সমাপ্ত হয়নি, তাতে কী হয়েছে, আওয়ামী লীগের হাতে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন হয়েছে, এটা সুখবর। পদ্মা সেতুর কাজ আমার হাতে শুরু হয়েছে, এখন শেষ হচ্ছে- এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আমি আনন্দিত। উল্লেখ্য, আমার সময়ে কারিগরি কমিটি দ্বারা নির্বাচিত ঠিকাদারই বর্তমানে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছেন। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের বিষয়ে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, অর্থায়ন বন্ধ ছিল বিশ্বব্যাংকের একটা অজুহাত। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে তারা ছিল একটি পক্ষ। ষড়যন্ত্রকারীরা চেয়েছিল আওয়ামী লীগের ২০০৯-২০১৪ মেয়াদে যাতে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন না হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমি ২০১৩ সালের ডিসেম্বরেই পদ্মা সেতু চালু হবে- এ টার্গেট বাস্তবায়নে কাজ এগিয়ে নিয়েছি। যখন ষড়যন্ত্রকারীরা দেখল আওয়ামী লীগের ২০০৯-২০১৪ মেয়াদেই পদ্মা সেতু হয়ে যাচ্ছে, তখন তারা নানা অজুহাতে সেতু নির্মাণ বিলম্বিত করার উদ্যোগ নেয়। একটি অযোগ্য ঠিকাদারকে নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হয়ে একতরফাভাবে তৎকালীন বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট অর্থায়ন স্থগিত করেন। বিশ্বব্যাংকের ইতিহাসে এ ধরনের ন্যক্কারজনক পদক্ষেপ বিরল। সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন, বিশ্বব্যাংক আমাকে টার্গেট করে নয়, আওয়ামী লীগ সরকারের ২০০৯-২০১৪ মেয়াদে যাতে পদ্মা সেতু শেষ করতে না পারে তা টার্গেট করে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়েছে। আমাকে তারা উপলক্ষ করেছে মাত্র। আমাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে পত্রিকায় নিউজ করেছে। যেগুলো অভিযোগ হিসেবে আদালতে দাখিল করেছে। এটা যে তাদের অজুহাত ছিল তা কানাডার আদালতের রায় ও দুদকের নিবিড় তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, আজকের পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের পুরো কৃতিত্ব, পুরো সাফল্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। কারণ বিশ্বব্যাংক ষড়যন্ত্র করে অর্থায়ন স্থগিতের পরও আমরা মালয়েশিয়াকে নিয়ে পদ্মা সেতু করতে গিয়ে সময় ক্ষেপণ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ সিদ্ধান্তকে কিছুটা বিলম্বিত করেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী অনেকের বাধা সত্ত্বেও বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে জাতির আত্মমর্যাদা বাড়িয়েছেন। নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকেছেন। আজ পদ্মা সেতু দৃশ্যমান। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও আমাদের বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতার প্রকাশ। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর সঙ্গে দেশের ১৭ কোটি মানুষের ভালোবাসা ও আবেগ জড়িয়ে আছে। পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের মানুষ, বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৯ জেলার যাতায়াত নিরবচ্ছিন্ন হবে। ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণ, শিল্প-বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। কর্মসংস্থান বাড়বে। ফলে মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৈপ্লবিক উন্নয়ন ঘটবে।

সর্বশেষ খবর