মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বিশ্বে বাংলাদেশের দূত ছিল বিদেশি গণমাধ্যমগুলো

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বিশ্বে বাংলাদেশের দূত ছিল বিদেশি গণমাধ্যমগুলো

পাকিস্তানি সামরিক জান্তাদের রক্তচক্ষুর মুুখে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ভিতরে ও বাইরে তথ্য-প্রবাহ ছিল প্রায় নিষিদ্ধ। কিন্তু বিদেশি গণমাধ্যমগুলোর সাংবাদিকরা জীবন হাতে নিয়ে যুদ্ধের খবর সংগ্রহ করেন।  সেই তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।  বাংলাদেশের তখনকার বাস্তব চিত্র প্রচার করে রীতিমতো বাংলাদেশের দূত হয়ে গিয়েছিল বিদেশি মিডিয়াগুলো।

বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের ঢাকার পরিস্থিতি ও শেখ মুজিবকে আটকের ঘটনা ২৭ মার্চেই বিশ্বের অন্তত ২৫টি দেশের পত্রিকা বা সংবাদ সংস্থার খবরে প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা : ফ্যাক্টস অ্যান্ড উইটনেস বইতে উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসির খবরে তখন বলা হয়েছে, ‘কলকাতা থেকে সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানের খবরে প্রকাশ যে পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এক গুপ্ত বেতার থেকে জনসাধারণের কাছে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন।’ ভয়েস অব আমেরিকার খবরে বলা হয়েছিল, ‘ঢাকায় পাকিস্তান বাহিনী আক্রমণ শুরু করেছে। মুজিবুর রহমান একটি বার্তা পাঠিয়েছেন এবং সারা বিশ্বের নিকট সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন’। দি স্টেটসম্যানের খবরে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে, সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে রহমানের পদক্ষেপ। একটি গোপন বেতার থেকে প্রচারিত ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের পূর্বাংশকে স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে নতুন নামকরণ করেছেন।’ লন্ডনের দি ডেইলি টেলিগ্রাফে ‘সিভিল ওয়ার ফ্লেয়ারস ইন ইস্ট পাকিস্তান : শেখ এ ট্রেইটর, সেইস প্রেসিডেন্ট’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীন ঘোষণা ও ইয়াহিয়া খান তার বেতার ভাষণে শেখ মুজিবকে বিশ্বাসঘাতক বলার কথা উল্লেখ করা হয়। ব্রিটিশ দৈনিক দি গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, ‘২৬ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া জাতির উদ্দেশ্যে রেডিওতে ভাষণ দেওয়ার পর পরই দি ভয়েস অব বাংলাদেশ নামে একটি গোপন বেতার কেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁর এই ঘোষণা অপর এক ব্যক্তি পাঠ করেন।

মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসেও শেখ মুজিব ও ইয়াহিয়ার ছবি ছাপানো হয়েছিল। পাশেই বলা হয়েছিল, স্বাধীনতা ঘোষণার পর শেখ মুজিব আটক। বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়, ইয়াহিয়া খান পুনরায় মার্শাল ল দেওয়া ও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার পর পূর্ব পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে। আর্জেন্টিনার বুয়েনস আয়ারস হেরাল্ডের খবরের শিরোনাম ছিল, বেঙ্গলি ইন্ডিপেন্ডেন্স ডিক্লেয়ার্ড বাই মুজিব। আয়ারল্যান্ডের দি আইরিশ টাইমসের শিরোনাম ছিল- পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা আর সঙ্গে ছিল শেখ মুজিবের ছবি। দিল্লি থেকে রয়টার্সের খবরে ১০ হাজার মানুষের নিহত হওয়ার ও স্বাধীনতা ঘোষণার পর মুজিবকে সম্ভবত আটক করা হয়েছে, এমন কথা বলা হয়। ব্যাংকক পোস্টের খবরে বলা হয়, শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ নাম দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণার পর পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর বাইরে ভারতের বহু সংবাদপত্র এবং ব্রাজিল, কানাডা, দক্ষিণ আফ্রিকা, জাপান, হংকং, নরওয়ে, তুরস্ক, সিঙ্গাপুরসহ অনেক দেশের খবরে স্থান পায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার খবর। বিদেশি গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে একটি ব্যতিক্রমীয় ঘটনা ঘটিয়েছিলেন করাচির মর্নিং নিউজের পাকিস্তানি সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাস। পাকিস্তান সেনাবাহিনী করাচি থেকে আটজন সাংবাদিককে ১০ দিনের একটি সফরে পূর্ব পাকিস্তানে এনেছিল। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন অ্যান্থনি মাসকারেনহাসও। পরে ফিরে গিয়ে যুক্তরাজ্যের সানডে টাইমস পত্রিকায় অ্যান্থনি মাসকারেনহাস যে নিবন্ধ লেখেন তার মাধ্যমেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন আর নিষ্ঠুরতার বিষয়টি বিশ্বের সামনে উঠে আসে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর