সোমবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে দেশ

মাহমুদ আজহার

এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে দেশ

ড. অলি আহমদ বীরবিক্রম

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বীরবিক্রম বলেছেন, ‘দেশ দীর্ঘদিন ধরে একদলীয় শাসনের কবলে পড়েছে। দেশে শান্তি নাই, ন্যায় বিচার নাই, সুশাসন নির্বাসিত। গণতন্ত্রকে দাফন করা হয়েছে। হরণ করা হয়েছে মানুষের মৌলিক অধিকার। কারও জান-মালের নিশ্চয়তা নাই। দেশ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সমগ্র দেশ ও জাতি আজ একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ, লুটেরা ও লোভী রাজনীতিবিদের হাতে জিম্মি। তারা আমাদের স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। দেশকে তছনছ করে দিয়েছে। ঐক্য বিনষ্ট করেছে। বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে গণতন্ত্রকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে। গণতন্ত্র যেন কারও পারিবারিক সম্পত্তিতে পরিণত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।’ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে ফোনে আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক এই মন্ত্রী। ফোনে আলাপচারিতায় ২০-দলীয় জোটের এই অন্যতম শীর্ষ নেতা বলেন, ‘এখন সামাজিক মূল্যবোধ ও নীতি-নৈতিকতা বলতে অবশিষ্ট কিছুই নাই। দুর্নীতি ও মাদক সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। মনে রাখতে হবে, নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত জাতি কখনো তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না। সমাজ আজ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। এই অসহনীয় অবস্থা থেকে পরিত্রাণ প্রয়োজন। দেশের মানুষ অনেক রক্ত দিয়েছে, অনেক অবিচার ও অত্যাচার সহ্য করেছে। বর্তমান অবস্থা মানুষের সহ্য ও ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের রক্ষা করুন। আমি বিশ্বাস করি, খুব দ্রুতই একদলীয় শাসনের অবসান হবে ইনশা আল্লাহ।’ সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘জনগণের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে বর্তমানে কোনো সামঞ্জস্য না থাকায় সমাজে ভারসাম্য নাই এবং সর্বত্র সামাজিক অবক্ষয় বিদ্যমান। নিম্নমধ্যবিত্ত ও গরিবদের মধ্যে নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে। অন্যদিকে কিছু সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী দেশের টাকা লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করছেন। এতে করে দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভ বৃদ্ধি অর্থনৈতিক উন্নতির মানদন্ড নয়। সুতরাং এতে আনন্দিত হওয়ার কিছুই নাই। সমাজে অর্থনৈতিক সমতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সঠিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আর্থিক খাতে জরুরি ভিত্তিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।’ মুক্তিযোদ্ধারা অবমূল্যায়িত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছি। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য খেতাব পেয়েছি। কিন্তু পদে পদে আমাদের অসম্মান করা হচ্ছে। যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি বা মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্মগ্রহণ করেনি, তারা আজ মুক্তিযুদ্ধের ওপর আমাদের দেওয়া তথ্য-উপাত্তকে ভুল বলে প্রমাণ করতে চায়। এর চেয়ে দুঃখের বিষয় আর কিছুই হতে পারে না। এ ধরনের সোনার বাংলার জন্য জাতি মুক্তিযুদ্ধ করে নাই।’ অলি আহমদ বলেন, ‘মেরুদন্ডহীন নির্বাচন কমিশনের আমূল পরিবর্তন ও সংস্কার প্রয়োজন। জনগণের ভোটের অধিকার, সুশাসন এবং সর্বোপরি সবার জন্য নির্বাচনে সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। জাল ভোট প্রদান বা প্রদানকারীদের সাহায্য করার সঙ্গে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকবে, তাদের ন্যূনতম ১০ বছর সশ্রম কারাদন্ড দেওয়ার জন্য আইনি ব্যবস্থা করতে হবে।’ এলডিপি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বর্তমান দুর্নীতি দমন আইনে যথেষ্ট বৈষম্য রয়েছে। এ আইন শুধু অসহায় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রীসহ সব নাগরিকের বিরুদ্ধে দুদক স্বাধীনভাবে প্রয়োজনে তদন্ত করতে এবং মামলা করতে পারবে। এ ধরনের বিধান রেখে আইন সংশোধন করতে হবে। দেশের সব নাগরিকের জন্য আইন সমানভাবে প্রযোজ্য হতে হবে (শুধু রাষ্ট্রপতি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকা অবস্থায় এ আইন তার জন্য প্রযোজ্য হবে না)। নতুন সংবিধান রচনা এবং আইনের সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতিবাজ, অস্ত্রবাজ, সন্ত্রাসী ও মাদকের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সুষ্ঠু বিচারের জন্য বিভিন্ন জেলায় একাধিক বিশেষ আদালত ও দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।’ সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘এ অবস্থায় আমরা মধ্যবর্তী বা পুনর্নির্বাচন কোনোটাই চাই না। নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন পদ্ধতিসহ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত দেশে কখনো সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করা উচিত হবে না। প্রথমে প্রয়োজন সংস্কার এবং কিছু ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন। অতঃপর জাতীয় সংসদসহ সব স্তরে নতুনভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। এতে জনগণের অংশগ্রহণ শতভাগ নিশ্চিত হবে। সুতরাং এমতাবস্থায় আমাদের প্রত্যাশা, বর্তমান সরকার পদত্যাগ করে শান্তিপূর্ণ পন্থায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। এতে করে দেশে শান্তি ফিরে আসবে। অন্যদিকে দক্ষ, অভিজ্ঞ, সৎ, শিক্ষিত ও দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদদের দ্বারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।’ তিনি বলেন, ‘সমাজকে সঠিক পথে পরিচালনা করার দায়িত্ব আমাদের সবার। সমাজের প্রতি আমাদের সবার দায়বদ্ধতা রয়েছে। প্রতিহিংসা, লোভ ও অহংকার মানুষকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়। এ ছাড়া ভুলে গেলে চলবে না যে, সব কর্মকান্ডের জন্য আমাদের মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর