মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ডোপ টেস্টের পরিধি বাড়ছে

সরকারি সব দফতর, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের মাদক গ্রহণের টেস্ট করাতে পারবে

মাহবুব মমতাজী

বাধ্যতামূলক ডোপ টেস্টের পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। এ সংক্রান্ত বিধিমালা চূড়ান্ত হলেই সরকারি সব দফতর, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের মাদক গ্রহণের পরীক্ষার আওতায় আনতে পারবে। স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ে বিধিমালা তৈরির কাজ চলছে।  

সংশ্লিষ্টরা জানান, মাদক নির্মূলে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে ডোপ টেস্ট শুরু হলেও সরকারি সব দফতরে তা এখনো শুরু হয়নি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্ট করানোর সুপারিশ থাকলেও বিধিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় সেটি আটকে আছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর বলছে, বিধিমালা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। এটি সম্পন্ন হলেই বাধ্যতামূলক ডোপ টেস্টের আওতা বাড়বে। মাদক গ্রহণের অভিযোগে ডোপ টেস্ট এবং পরে বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ১০ সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। ১৮ জন সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে ৭৩ পুলিশ সদস্যকে।

ডিএমপির উপ-কমিশনার (ডিসি-মিডিয়া) ওয়ালিদ হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, প্রত্যেক বিভাগের প্রধানেরা প্রথমে নজরদারির মাধ্যমে সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করেন। এরপর রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ডোপ টেস্টের মাধ্যমে মাদকাসক্ত কি না তা চিহ্নিত করা হয়। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ জনের ডোপ টেস্ট করানো হয়েছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।  পুলিশ সদর         দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, পুলিশকে জনবান্ধব করতে আইজিপি ৫টি মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো মাদক। পুলিশের কেউ মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকতে পারবে না। মাদক গ্রহণ কিংবা ব্যবসায় কাউকে সহযোগিতা করবে না। নিজেরাও মাদক সেবন করবে না। যদি কোনো পুলিশ সদস্যকে মাদক সেবনে সন্দেহ হয় তাহলে তাকে ডোপ টেস্ট করে সংশ্লিষ্ট ইউনিট। ডোপ টেস্টে কেউ পজিটিভ হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর মধ্যে অনেককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

এর আগে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২০১৮ সালে প্রথমে পুলিশে ডোপ টেস্ট করানো শুরু করেন মুন্সীগঞ্জের তৎকালীন পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম। বর্তমানে তিনি নারায়ণগঞ্জের এসপি। জানতে চাইলে জায়েদুল আলম বলেন, প্রথম আমরা নিজেদের বাহিনীর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরীক্ষা করি। প্রথম দিনে পাঁচজনকে পাই। এরপর দুজনকে পাওয়া যায়। নারায়ণগঞ্জে আসার পর সেখানে ২০ জনের ডোপ টেস্ট করানো হয়েছে। এর মধ্যে দুজনের চাকরি চলে গেছে। আর তিন-চারজনকে চিকিৎসকের কাছে পাঠানো হয়েছে সুস্থ হওয়ার জন্য।  

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্র জানায়, ডোপ টেস্টের পরিধি বাড়াতে বিধিমালা তৈরি করে গত বছরের জানুয়ারিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় সংস্থাটি। এরপর আইন মন্ত্রণালয় কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে সেটি ফেরত পাঠায়। সেগুলো ঠিক করে গত বছরের ২৮ অক্টোবর আবারও ফাইলটি পাঠানো হয়। যাচাই-বাছাই শেষে কিছু সংশোধনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের মাধ্যমে গত ৩ ডিসেম্বর সেই ফাইল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে ফেরত এসেছে। সংস্থাটির সহকারী পরিচালক সুব্রত সরকার শুভ জানান, বিধিমালা প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষ। আশা করা যাচ্ছে, নতুন বছরের শুরুতে সেটি গেজেট আকারে প্রকাশ পাবে। এই বিধিমালা না থাকার কারণে সরকারি-আধা সরকারি সব প্রতিষ্ঠানে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা যাচ্ছে না। জানা গেছে, ডোপ টেস্টের জন্য ১০২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘মাদকাসক্ত শনাক্তকরণে ডোপ টেস্ট প্রবর্তন’ নামে একটি প্রকল্প নেয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। এটি এখনো একনেকের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ওই প্রকল্পে ১৯ জেলায় ২১টি ডোপ টেস্টে মিনিল্যাব করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিটি মিনিল্যাবে একটি করে জিসিএমএস মেশিন বসানো হবে। এজন্য কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, পটুয়াখালী, বরিশাল, খুলনা, পাবনা, সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, যশোর ও নরসিংদী জেলাকে প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর সরকারি-আধা-সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে ডোপ টেস্ট (মাদক পরীক্ষা) বাধ্যতামূলক করা হয়। এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (চিকিৎসা ও পুনর্বাসন) উর্মি দে বলেন, আমাদের কাছে কোনো প্রতিষ্ঠান তালিকা পাঠালে আমরা তা তেজগাঁওয়ের মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে ডোপ টেস্ট করিয়ে দিই। এখন পর্যন্ত কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চাকরিপ্রত্যাশীদের তালিকা দিয়ে ডোপ টেস্ট করিয়েছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিয়োগ, এনএসআইতে নিয়োগ, ফায়ার সার্ভিস এবং ঢাকা ইলেকট্রিক পাওয়ার সাপ্লাই রয়েছে। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্তদের ডোপ টেস্ট করানোর কাজ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া বলেন, তালিকা পেলে জেলা পর্যায়ে হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাধ্যমে ডোপ টেস্ট করানো হয়। গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানো ও সড়ক দুর্ঘটনা রোধে গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে পরিবহন শ্রমিকদের ডোপ টেস্ট শুরুর কথা ছিল। কিন্তু পরিবহন কর্মীদের আপত্তির মুখে বাস মালিকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের অবস্থান থেকে পিছিয়ে আসে। গত ২৯ অক্টোবর সংসদীয় ওই কমিটির বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির আগে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, করোনার কারণে ইউজিসি ডোপ টেস্টের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর