শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
৭৯তম বিএমএ লং কোর্স সমাপনীতে প্রধানমন্ত্রী

করোনা মোকাবিলায় সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে

প্রতিদিন ডেস্ক

করোনা মোকাবিলায় সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও আমাদের সেনাবাহিনী যথেষ্ট অবদান রাখছে। প্রতিটি দেশেই আমাদের সেনাবাহিনীর প্রশংসা করা হচ্ছে। এই প্রশংসা যখন আমরা শুনি তখন সত্যিই গর্বে বুক ভরে যায়। বর্তমান কভিড-১৯ সময়কে বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশে^র জন্যই একটি ‘ক্রান্তিকাল’ আখ্যায়িত করে সরকারপ্রধান বলেন, এর ফলে অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ছে, জীবনযাত্রা সীমিত হয়ে যাচ্ছে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষের জীবনে দুর্ভোগ আসছে। তিনি বলেন, এই করোনা মোকাবিলায় আমাদের সেনাবাহিনী দেশের মানুষকে সচেতন করা, তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং সাহায্য করায় বিরাট অবদান রাখছে। খবর বাসসের।

গতকাল সকালে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারির বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে অনুষ্ঠিত ‘রাষ্ট্রপতি প্যারেড ডিসেম্বর-২০২০ এবং ৭৯তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্স সমাপনী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্যের আলোকে নবীন সেনা অফিসারদের উদ্দেশে বলেছেন, জীবনে সব থেকে বড় জিনিস হচ্ছে সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা এবং দেশমাতৃকাকে ভালোবাসা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবীন সেনা অফিসারদের বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার মতো নিজেদের যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘দেশে-বিদেশে আমাদের সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাই, সর্বক্ষেত্রে তারা দক্ষ থাকবে, উপযুক্ত থাকবে এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হবে। সারা বিশে^র যেখানেই যাবে সেখানেই যেন দেশের সুনাম অক্ষুণœ রাখতে পার সেদিকে সর্বদা সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিভিন্ন কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য নবীন ক্যাডেটদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার অফিসার মাহমুদুল হাসান শ্রেষ্ঠ চৌকস ক্যাডেট হিসেবে ‘সোর্ড অব অনার’ লাভ করেন। তিনি সেনাবাহিনীর বিষয়ে সর্বোচ্চ নম্বর অর্জন করায় ‘সেনাবাহিনী প্রধান স্বর্ণপদক’ও অর্জন করেন। অনুষ্ঠানে নবীন ক্যাডেটদের শপথবাক্য পাঠ করানো হয়। প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয় এবং প্রধানমন্ত্রী নবীন ক্যাডেটদের মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ’৪১ সালে বিশে^ বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। সেই সময় দেশ পরিচালনায় আরও উঁচুমানের অফিসার হিসেবে আজকের যারা নবীন সেই তোমরাই দায়িত্ব পালন করবে। সে কথাটা মাথায় রেখেই নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব তোমাদের পালন করতে হবে। তিনি এ সময় শতবর্ষ মেয়াদি ‘ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০’ এর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এই ভূখন্ড একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে এবং জাতির পিতার এই স্বপ্ন আমরা পূরণ করব। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ‘জনগণের সেনাবাহিনী’ আখ্যায়িত করে আরও বলেন, এ জন্য যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় বা যে কোনো সমস্যায় আমি দেখেছি আমাদের সেনাসদস্যরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা তাঁর দূরদর্শী চিন্তার মাধ্যমে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের উপযোগী উন্নত ও পেশাদার সশস্ত্র বাহিনীর অপরিসীম গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন এবং সে কারণেই একটি প্রশিক্ষিত, শক্তিশালী ও দক্ষ সেনাবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে তিনি কুমিল্লা সেনানিবাসে ‘বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি’র উদ্বোধন করেন। যা ছিল বাংলাদেশের জন্য এক ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

জাতির পিতা ১৯৭৪ সালেই আমাদের জন্য ‘প্রতিরক্ষা নীতি’ প্রণয়ন করেন উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতা প্রণীত সুদূরপ্রসারী প্রতিরক্ষা নীতির আলোকেই সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য আমরা ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ প্রণয়ন করেছি। এর আওতায় আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নতুন নতুন পদাতিক ডিভিশন, ব্রিগেড, ইউনিট ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সার্বিক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে। তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সকল স্তরে নারীর অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমাদের সরকার ২০০০ সালে সর্বপ্রথম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে মহিলা অফিসার নিয়োগ এবং ২০১৩ সালে সর্বপ্রথম মহিলা সৈনিক ভর্তির যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি প্রসঙ্গে আরও বলেন, উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান ও সুযোগ্য নেতৃত্ব তৈরিতে বঙ্গবন্ধু যে মিলিটারি একাডেমির স্বপ্ন দেখেছিলেন, তারই বাস্তবায়িত রূপ আজকের এই একাডেমি। এখানে ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণের সব ধরনের অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স’সহ বিবিধ অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও তিন বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণের পাশাপাশি চার বছর মেয়াদি অনার্স কোর্স নিঃসন্দেহে সামরিক ও বৈশ্বিক জ্ঞানের মিশ্রণে সামরিক পেশাগত উৎকর্ষতার শিখরে পৌঁছাতে সহায়ক হবে। তিন বছর মেয়াদি কঠোর প্রশিক্ষণ শেষ করে আজ ৭৯তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে বাংলাদেশসহ বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র প্যালেস্টাইন ও শ্রীলঙ্কার প্রশিক্ষণার্থীরা ‘লেফটেন্যান্ট’ হিসেবে কমিশন লাভ করতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী পাসিং আউট ক্যাডেটদের উদ্দেশে বলেন, আজকের দিনটি তোমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ প্রশিক্ষণের পর কাক্সিক্ষত কমিশন প্রাপ্তির মাধ্যমে তোমরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন গর্বিত অফিসার হিসেবে আজ যোগদান করতে যাচ্ছ। তিনি বলেন, দেশকে ভালোবাসতে হবে এবং দেশের জন্য কর্তব্য পালন করতে হবে। কারণ, তোমরা যে শপথ গ্রহণ করেছ এই শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে তোমাদের এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য বিরাট দায়িত্ব কাঁধে পড়ল। সে কথা সবসময় মনে রাখতে হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার পাসিং আউট প্যারেডে প্রদত্ত ভাষণের উদ্ধৃতি দেন। জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘আমি তোমাদের জাতির পিতা হিসেবে আদেশ দিচ্ছি, তোমরা সৎ পথে থেকে মাতৃভূমিকে ভালো বাইসো। ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াবা, গুরুজনকে মেন, সৎ পথে থেক, শৃঙ্খলা রেখ, তা হলে জীবনে মানুষ হতে পারবা।’ তিনি বলেন, জাতির পিতার এই নির্দেশনাটা আমি মনে করি, চলার পথে সবসময় মনে রাখতে হবে। তোমরা এদেশের সন্তান। এদেশের গ্রাম, গঞ্জে, শহরে তোমাদের মা-বাবাসহ সবাই ছড়িয়ে আছেন। কাজেই, দেশের উন্নতি হলে সবারই উন্নতি হবে। দেশ শান্তিতে থাকলে সবাই শান্তিতে থাকবে। সে কথাটা সবসময় মনে রেখে এ দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের জীবন মান উন্নয়নের জন্য যথাযথভাবে অবদান রেখে যাবে সেটাই আমরা চাই। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জনকারী একটা দেশ। আমরা বিজয়ী জাতি। জাতির পিতার নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। কাজেই, সেই কথাটা মাথায় রেখে সবসময় যেন মাথা উঁচু করে আমরা বিশ^দরবারে চলতে পারি সেভাইে নিজেকে তৈরি করতে হবে এবং দেশের মান-মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে।

সর্বশেষ খবর