শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

দুর্যোগ মোকাবিলায় ১২ সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্যোগ মোকাবিলায় ১২ সুপারিশ

দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ যথেষ্ট সুনাম অর্জন করলেও এ খাতে এখনো যথেষ্ট উৎকর্ষ অর্জনের সুযোগ আছে এবং এখনই আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। কারণ ক্রমবর্ধমান প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং বিদ্যমান সুশাসনের ঘাটতির কারণে বছরে জাতীয় আয়ের প্রায় দুই দশমিক দুই শতাংশ ক্ষতি হয়। এসব ঘাটতি নিরসন করা গেলে দেশের জাতীয় আয়ের বিশাল এই ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব। ‘দুর্যোগ মোকাবিলায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায় : ঘূর্ণিঝড় আম্ফানসহ সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দুর্যোগ মোকাবিলায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে তা থেকে উত্তরণে ১২ দফা সুপারিশ করে সংস্থাটি। টিআইবির ১২ দফা সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- বিদ্যমান সতর্কবার্তা প্রদান পদ্ধতি হালনাগাদ করে সহজ ভাষায় প্রচার করা, ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে যথাসময়ে পূর্বাভাস ও সতর্কবার্তা প্রদান করা, অধিকতর বিপদাপন্ন পরিবার ও এলাকাকে প্রাধান্য দিয়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালনা করা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত তথ্য জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে তথ্য বাতায়নের মাধ্যমে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা, আপদকালীন পরিস্থিতি ও দুর্যোগের সম্ভাব্য ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ের কমিটি, স্বেচ্ছাসেবক দল ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের কার্যকর অংশগ্রহণে দুর্যোগ প্রস্তুতি গ্রহণ করা, নারী শিশু বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ সুবিধা সংবলিত এবং এলাকাভিত্তিক পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র নিশ্চিত করা, দুর্যোগ সহনশীল এবং টেকসই অবকাঠামো নির্মাণ, সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ করা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত কার্যক্রমে দুুুর্নীতি, অনিয়ম এবং অপচয় বন্ধে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা, অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া ইত্যাদি। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানসহ সাম্প্রতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সুশাসনের অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জসমূহ পর্যালোচনা করার উদ্দেশ্যে চলতি বছরের ১৮ মে থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই গবেষণার তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সুনাম অর্জন করেছে এবং অনেক ক্ষেত্রে কোনো কোনো দেশ আমাদের মডেল অনুসরণও করছে। কিন্তু ব্যাপক অগ্রগতি সত্ত্বেও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার, জাতীয় আইন, নীতিমালা এবং আদেশাবলি প্রতিপালনে এখনো উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঘাটতি রয়ে গেছে। পাশাপাশ বিদ্যমান গবেষণায় সুশাসনের প্রতিটি নির্দেশেই ব্যাপক ঘাটতি দেখা গেছে। যেহেতু বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবিলায় ভালো করেছে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে যথেষ্ট প্রস্তুতি ও সক্ষমতাও আছে, তাই বিদ্যমান ঘাটতি ও চ্যালেঞ্জসমূহ এড়িয়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় আরও ভালো করা সম্ভব। বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবিলায় অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ায় এক ধরনের আত্মতুষ্টি আছে মন্তব্য করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই আত্মতুষ্টির কারণে দুর্যোগ মোকাবিলায় দীর্ঘকালীন যে চ্যালেঞ্জগুলো এখনো বিদ্যমান সেগুলো অবহেলা করা হয় এবং চ্যালেঞ্জসমূহ নিরসন করে আরও অগ্রগতির প্রয়াসে ঘাটতি দেখা যায়। তাই আমরা যদি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আরও উৎকর্ষ সাধন করতে পারি তাহলে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে জাতীয় আয়ের গড়ে ২.২ শতাংশ বার্ষিক যে বিশাল ক্ষতি হয় তা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

সর্বশেষ খবর