শিরোনাম
শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

রাজনীতিতে নৈতিকতার প্রচণ্ড অভাব

মাহমুদ আজহার

রাজনীতিতে নৈতিকতার প্রচণ্ড অভাব

মে. জে. (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নৈতিকতার প্রচ- অভাব। নৈতিকতার সঙ্গে ধর্মীয় মূল্যবোধের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। সরকার ধর্মীয় মূল্যবোধের শিক্ষাকে শিক্ষাঙ্গন থেকে দূরীভূত করেছে, ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিবেশ নষ্ট করেছে। তাই নৈতিকতাও ক্রমান্বয়ে অধঃপতনে গেছে। বাংলাদেশের কিশোর ও তরুণ সমাজের একটি বিশাল অংশ অনৈতিক ও দুর্নীতিগ্রস্ত পরিবেশে বেড়ে উঠছে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মহাখালীর বাসভবনে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে তিনি এ মন্তব্য করেন।

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আংশিক পরিকল্পিতভাবে, আংশিক অবহেলার মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গনেও দুর্নীতি-অনৈতিকতা গভীরভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অনৈতিকতার বৈশিষ্ট্যমন্ডিত কোনো জাতি পৃথিবীতে দাঁড়াতে পারেনি, পারবেও না। এই সরকার নিজেরা ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনকে ভোটের আগের রাতে হাইজ্যাক করে দুর্নীতি ও অনৈতিকতার চূড়ান্ত উদাহরণ স্থাপন করেছে। গত ১২ বছরে দুর্নীতি ও অনৈতিকতার শত শত ঘটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোনোটিই এখনো বিচারের মুখ দেখেনি।

সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলেছে। সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে ফেলেছে। আইনের শাসন সম্পূর্ণভাবে দূরীভূত করে ফেলেছে। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে প্রচুর সংখ্যক রক্ষক ভক্ষকের ভূমিকায়। বাংলাদেশের সমাজকে এই দুর্নীতি ও অনৈতিকতার আবহ থেকে উদ্ধার করতে গেলে শুধু একটি নৈতিকতাবান্ধব সরকার এলেই হবে না, এর জন্য স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।  কল্যাণ পার্টির রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের রাজনীতি পরিবর্তনের। তাই আমাদের দলের নীতি হচ্ছে ‘পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি’। আমরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের লক্ষ্যেই দল করেছিলাম। এখনো সেই লক্ষ্যই ধারণ করি। অসুস্থ রাজনীতির বদলে সুস্থ রাজনীতি চর্চা করে বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণ করার জন্যই আমরা দল করেছিলাম। সাংবিধানিক শান্তিপূর্ণ রাজনীতির কাঠামোর ভিতরে থেকেই আমরা পরিবর্তন আনতে চাই। পরিবর্তনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে, বাংলাদেশে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। রণাঙ্গনের এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি, সমাজনীতি ও অর্থনীতিতে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার কোনোমতেই সুপ্রতিষ্ঠিত নয়। এগুলো যেন প্রতিষ্ঠিত হয়, তার জন্য বিশেষ কোনো আগ্রহ বা চেষ্টা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমন্ডলে দর্শনীয় নয়। মুক্তিযুদ্ধের আদি ও অকৃত্রিম চেতনা থেকে আমরা অনেক দূরে। কিন্তু বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি এই আদি ও অকৃত্রিম চেতনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এই আদি ও অকৃত্রিম চেতনা বাস্তবায়ন করতে গেলে আমাদের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে। অসুস্থ রাজনীতির বদলে সুস্থ রাজনীতি চর্চা করতে হবে। ব্যক্তি-লোভের ও ব্যক্তি-লাভের আকর্ষণে রাজনীতি না করে দেশের কল্যাণের আগ্রহে রাজনীতি করতে হবে। পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য টেকসই নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।  তিনি বলেন, এ কাজ কোনো দিনই একা সম্ভব নয়, একটি দলের দ্বারা সম্ভব নয়। ‘দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ’ এই বাংলা প্রবাদকে মনে রেখে বলতে চাই যে, এই বিজয়ের মাসের দাবি হলো, সমমনা ব্যক্তিগণ, সমমনা দলগুলো পারস্পরিকভাবে একতাবদ্ধ হয়ে লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করতে হবে। দল বা দলগুলোর বাইরে দেশপ্রেমিক সচেতন নাগরিকরাও যথাসম্ভব একতাবদ্ধ হয়ে লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করতে হবে। আজকের এই দিনে আমি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি এবং বাংলাদেশের আপামর সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতি বিশেষ করে সচেতন তরুণ সমাজের প্রতি এই আবেদন করছি। 

সাম্প্রতিক সময়ে ২০-দলীয় জোটের নিষ্ক্রিয়তা প্রসঙ্গে সৈয়দ ইবরাহিম বলেন, এটা সত্য যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জোটের বৈঠক খুব একটা হয়নি। অনেকটা নিষ্ক্রিয়ই বলা চলে। তবে এটাকে সক্রিয় করতে হবে। এ নিয়ে আমি বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গেও কথা বলেছি। দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থেই জোটের সক্রিয় ভূমিকা জরুরি। সম্প্রতি ‘সরকার পতনের’ আন্দোলনের অংশ হিসেবে মুক্তাঙ্গনে উপস্থিত থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি এই প্রক্রিয়ায় সরকার পতনে বিশ্বাসী নই। সেদিন প্রেস ক্লাব অডিটরিয়ামে একটি পেশাজীবীদের সমাবেশ ছিল। সেখানে আমি উপস্থিত ছিলাম। সেখানে একজন আমাকে বললেন, পল্টনে মিছিল হচ্ছে, চলেন যাই। সেখানে আমি ও ড. রেজা কিবরিয়া হেঁটে যাই। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি বিচ্ছিন্নভাবে কিছু লোক মিছিল করছে। তারপর ১০ মিনিটের মতো সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে চলে আসি। অন্য কোনো উদ্দেশ্য আমার ছিল না। কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান আরও বলেন, অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এই সরকার ক্ষমতায় আছে। তাদের বিদায় করতে না পারলে এই জাতি ও দেশকে একতাবদ্ধ করা যাবে না।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম গতি পাবে না। নৈতিকতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা সফল হবে না। বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় টিকে থাকা এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে না পারলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা যাবে না। ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌত্ব অন্যদের হাতে জিম্মি হয়ে যাবে।

তাই, আসুন এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে সবাই একতাবদ্ধ হই। বাংলাদেশের আকাশে গণতন্ত্রের নতুন সূর্যকে আগমনের পথ করে দিতে হবে। তার জন্য আমাদের সবাইকে একতাবদ্ধ হতে হবে।

সর্বশেষ খবর