বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

জনতার হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে পেরেছি : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

জনতার হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে পেরেছি : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ দেশে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করেছে বলেই দেশ উন্নয়নের ধারায় ফিরতে পেরেছে এবং জনগণ যার সুফল পাচ্ছে। তিনি বলেন, জনতার ক্ষমতা জনতার হাতে আমরা ফিরিয়ে দিতে পেরেছি। যার ফলে আমাদের উন্নয়নের গতিধারা যথেষ্ট সচল হয়েছে। সাধারণ মানুষ, গ্রামের মানুষ তার সুফল পাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় দেওয়া প্রারম্ভিক ভাষণে এ কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২১-২০২৫) প্রণয়নে অনুষ্ঠিত এনইসির সভায় তিনি ভার্চুয়ালি অংশ নেন। বাসস।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার যে লক্ষ্য ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার, সে লক্ষ্য নিয়েই তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ আজ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। অথচ এক সময় বাংলাদেশ বললে লোকজন ভাবত এই বাংলাদেশ যেন সবার কাছে হাত পেতেই চলে। বঙ্গবন্ধুকন্যা আরও বলেন, যদিও তখন আমি বিরোধী দলে ছিলাম তবুও সেটা আমার আত্মসম্মানে বাধত, কষ্ট লাগত। কেননা, সারাটা জীবন জাতির পিতা সংগ্রাম করেছেন। লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছেন, সেই স্বাধীন দেশকে কেউ এরকম অবহেলার চোখে দেখলে তা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। তিনি এ সময় আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে দেশ সেবার সুযোগ দেওয়ায় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি, কেননা, তারা আমাদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে। পরপর তিনবার আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে বলেই আমরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে পেরেছি। তিনি বলেন, আমরা যেমন পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নিয়েছি তেমনি ২০১০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১০ বছর মেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছি। পরবর্তীতে তাঁর সরকার ২০২১ থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত পৃথক প্রেক্ষিত পরিকল্পনা এবং শতবর্ষ মেয়াদি ‘ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ থেকে ’৪১ এই সময়ের মধ্যে দেশকে কীভাবে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে যাব সেজন্য আরও কয়েকটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা আমাদের করতে হবে। যার মধ্যে আজ অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছি। আমরা সরকারে থাকি বা যারাই থাকুক তারা যদি এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন, তাহলে বাংলাদেশকে আমরা একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারব। জাতির পিতার হাত ধরেই এদেশে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের গোড়াপত্তন হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এদেশে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের ইতিবৃত্ত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তাঁর সরকার এই ডিসেম্বরের মধ্যেই ‘অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করার একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল, যাতে ২০২১ সালের শুরু থেকেই এর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়। কারণ, এর মধ্যেই সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাটি শেষ হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালেই যেমন দেশের সংবিধান দিয়ে যান তেমনি আইনকানুন যথাযথভাবে তৈরি করে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীন দেশের উপযোগী করে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা নেন। সেসময়ই তিনি প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন (১৯৭৩-’৭৮) এবং জাতীয় পরিকল্পনা কমিশনও গঠন করেন। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য জাতির পিতাকে হত্যার পর পরবর্তী পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাগুলোর আর যথাযথ বাস্তবায়ন হয়নি। ’৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে সেভাবে আর কোনো পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা না নিয়ে বরং অ্যাডহক ভিত্তিতে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনায় দেশ চালায় এবং ’৯৬ সালে ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসেই আওয়ামী লীগ আবার পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। সে সময় পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তাকারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ছাড়া একটা দেশ উন্নত হতে পারে না। তাই, ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেই আমরা স্বল্প সময়ের মধ্যে একটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন (১৯৯৭-২০০২) করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেই। তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি আবার ক্ষমতায় এসে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাতিল করে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে শুরু করে। যার ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়সহ মাঝে অনেক বছর আর কোনো পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা হয়নি। এরপর ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে ২০১০ সালে পুনরায় আওয়ামী লীগ সরকার ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সফলভাবে এমডিজি বাস্তবায়নের পর তাঁর সরকার জাতিসংঘ ঘোষিত ‘এসডিজি-২০৩০’ বাস্তবায়নেরও উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারপ্রধান হিসেবে জাতিসংঘ ঘোষিত এমডিজি এবং এসডিজি উভয় পরিকল্পনা প্রণয়নের সময়ই তাঁর সেখানে (জাতিসংঘে) থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল।

তিনি বলেন, এসডিজিতে যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তার মধ্যে যেসব বিষয় আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য সেগুলোতে গুরুত্ব দিয়েই আমাদের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাগুলো প্রণয়ন করে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা যে স্বল্পোন্নত দেশ রেখে যান সেখান থেকে তাঁর সরকার দেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে তুলে আনতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব যেখানে একেবারেই থমকে গেছে সেখানে বাংলাদেশ অর্থনীতির গতিধারা সীমিত আকারে হলেও চলমান রাখতে পেরেছে। যদিও কাক্সিক্ষত ৮ দশমিক ২ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়নি। তথাপি সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অর্থনীতির চাকা সচল রাখা সম্ভব হয়েছে। এ জন্য তিনি সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। করোনা মহামারীর মধ্যেও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন শেষ করতে পারায় সংশ্লিষ্টদেরও ধন্যবাদ জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর