শুক্রবার, ১ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

সভাপতিসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে সিআইডির চার্জশিট

নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণ ট্র্যাজেডি

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার তল্লায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে ৩৪ জন নিহতের ঘটনায় মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল গফুর মিয়াসহ (৬০) ২৯ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। নারায়ণগঞ্জের একটি আদালতে গতকাল এই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এর সত্যতা স্বীকার করেন আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান। আরও অভিযুক্ত আট সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রাপ্তিসাপেক্ষে। সন্ধ্যায় সিআইডি কার্যালয়ে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার নাসির উদ্দিন।

অন্য অভিযুক্তরা হলেন- সামসুদ্দিন সরদার, শামসু সরদার, শওকত আলী, অসিম উদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল, নাঈম সরদার, তানভীর আহমেদ, আল আমিন, আলমগীর সিকদার, মাওলানা আল আমিন, সিরাজ হাওলাদার, নেওয়াজ মিয়া, নাজির হোসেন, আবুল কাশেম, আবদুল মালেক, মনিরুল, স্বপন মিয়া, আসলাম আলী, আলী তাজম মিল্কী, কাইয়ুম, মামুন মিয়া, দেলোয়ার হোসেন, বশির আহমেদ হৃদয়, রিমেল, আরিফুর রহমান, মোবারক হোসেন ও রায়হানুল ইসলাম। এই অভিযুক্তদের মধ্যে দুজন বিদ্যুৎমিস্ত্রি। বাকি বেশির ভাগই মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য। গত ৪ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১০টায় নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটে। ঘটনার পাঁচ দিন পর ১০ সেপ্টেম্বর মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব নেয় সিআইডি। অগ্নিকান্ডের আগে থেকে প্রায় তিন মাস মসজিদের পাশে তিতাস গ্যাস পাইপের লিকেজ থেকে গ্যাস বের হয়ে মসজিদের অভ্যন্তরে জমা হতে থাকে। বাধাহীনভাবে গ্যাস উদগীরণ হয়ে মসজিদ গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়। ঘটনার ৭-৮ দিন আগে থেকে গ্যাসের তীব্রতা বাড়লে মুসল্লিরা বিষয়টি মসজিদ কমিটিকে জানায়। কিন্তু কমিটি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ঘটনার দিন এশার নামাজের সময় বৈধ বিদ্যুৎ লাইন চলে গেলে ম্যানুয়াল চেঞ্জওভারের মাধ্যমে অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন চালু করা হলে বিদ্যুতের স্পার্ক হয়। এই স্পার্ক ও মসজিদে জমে থাকা গ্যাসের সমন্বয়ে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়। কমিটির মসজিদ পরিচালনায় অবহেলা, গ্যাসের উপস্থিতি পেয়েও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নেওয়া, ডিপিডিসির মিটার রিডিং কালেক্টর ও ইলেকট্রিশিয়ানদের মসজিদে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া, ঝুঁকিপূর্ণভাবে মসজিদের অভ্যন্তরে বিদ্যুতের যন্ত্রপাতি স্থাপন করা এবং তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলা, গ্যাস লাইনের তদারকি না করা, পাইপের লিকেজ মেরামত না করা, গ্যাস লাইন ঝুঁকিপূর্ণভাবে স্থাপন বা স্থানান্তর করার কারণে ভয়াবহ এই অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয় বলে সিআইডির তদন্তে সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। সিআইডি ক্রাইমসিনসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে, বস্তুগত আলামত সংগ্রহ করে ও অগ্নিকান্ডের মূল কারণ উদঘাটন করে। দায়িত্বে অবহেলার জন্য তিতাস গ্যাস, টিএন্ডডি কো. লি.-এর ফতুল্লা জোনের আট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তাদের দুই দিন রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ডিপিডিসির একজন মিটার রিডার ও দুজন ইলেকট্রিশিয়ানসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার ইলেকট্রিশিয়ান মোবারক ও রায়হান অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

সর্বশেষ খবর