ভুল আসামি হয়ে প্রায় চার বছর কারাগারে থাকা রাজধানীর পল্লবীর বেনারসি কারিগর মো. আরমানকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। একই সঙ্গে তাকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি আরমানকে আসামি করার ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে ‘কারাগারে আরেক জাহালম’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, অপরাধী না হয়েও পাটকল শ্রমিক জাহালমকে জালিয়াতির ৩৩ মামলার আসামি হয়ে তিন বছর কারাভোগ করতে হয়েছিল। অনেক প্রক্রিয়া পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে তিনি কারামুক্ত হন। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা এখন মানুষের মুখে মুখে। এর রেশ না কাটতেই আরেক জাহালমন্ডকা বেরিয়ে এসেছে অনুসন্ধানে। জানা গেছে, পল্লবীর বেনারসি কারিগর আরমান নির্দোষ হয়েও ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে প্রায় চার বছর কারাভোগ করছেন। রাজধানীর পল্লবী থানার একটি মাদক মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি মাদক কারবারি শাহাবুদ্দিন বিহারি এ মামলার প্রকৃত আসামি। কিন্তু তার পরিবর্তে সাজাভোগ করছেন আরমান। পরে ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে হাই কোর্টে রিট দায়ের করা হয়। রিটে আরমানকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা ও মুক্তি চাওয়া হয়। ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব রিট আবেদনটি করেন। রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইজিপি, ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও পল্লবী থানার ওসিসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়। সেই রিটের শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল ভুল আসামি হয়ে প্রায় চার বছর ধরে কারাগারে থাকা রাজধানীর পল্লবীর বেনারসি কারিগর আরমানকে কেন মুক্তির নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাই কোর্ট। রুলে নির্দোষ আরমানকে কারাগারে রাখায় কেন পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়। দীর্ঘদিন পর সে রুলের শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করল হাই কোর্ট।
