শনিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

নতুন বই পেয়ে খুশির ঝিলিক শিক্ষার্থীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন বই পেয়ে খুশির ঝিলিক শিক্ষার্থীদের

বছরের প্রথম দিন বই পেয়ে উৎফুল্ল শিক্ষার্থীরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নতুন বছরের প্রথম দিনে নতুন বইয়ের গন্ধে মাতোয়ারা হয়েছে শিক্ষার্থীরা। বই পেয়ে খুশির ঝিলিক দেখা গেছে তাদের মধ্যে। নতুন বই যেন শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল নববর্ষেরই এক উপহার।

দেশের বিভিন্ন স্কুলে, মাদ্রাসায় গতকাল বিতরণ করা হয়েছে নতুন বই। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বই বিতরণ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকায় সব শিক্ষার্থী গতকাল বই পায়নি। এ ছাড়া গতকাল সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় অনেক স্কুল বই বিতরণ করেনি। মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে এবার স্কুলে স্কুলে বই উৎসবের আয়োজন করা হয়নি।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, চলতি শিক্ষাবর্ষে ৪ কোটি ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ২২৬ জন ছাত্র-ছাত্রীর হাতে ৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬২ হাজার ৪১২টি বই বিনামূল্যে তুলে দেবে সরকার। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রাথমিক পর্যায়ের বই বিতরণ ১ জানুয়ারি শুরু হলেও মাধ্যমিক পর্যায়ের বইগুলো এবার ১ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের হাতে বিতরণ করা হবে। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণির বই বিতরণের জন্য তিন দিন করে সময় থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুলগুলোতে বই বিতরণ করতে হবে।

গতকাল বছরের প্রথম দিনে শীত মাড়িয়েই ছাত্র-ছাত্রীরা বই সংগ্রহ করেছে স্কুল থেকে। তবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীরা বই সংকটের কারণে সব বই পায়নি বলে জানা গেছে। রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম প্রতিবেদককে বলেন, ছুটির দিন হওয়ায় গতকাল বই বিতরণ করা হয়নি। রবিবার থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হবে। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নবম শ্রেণির কয়েকটি বইয়ের সংকট রয়েছে বলে জানান অধ্যক্ষ। রাজধানীর সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন বই বিতরণ শুরু হয়েছে। তবে বিভিন্ন শ্রেণিতে নতুন বইয়ের সংকট রয়েছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা গতকাল এ প্রতিবেদককে বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিতরণ চলবে। অনেক স্কুলে শুক্রবার হওয়ায় বই বিতরণ শুরু হয়নি। তিনি বলেন, দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই পৌঁছে গেছে। তবে বিভিন্ন শ্রেণিতে কিছু বইয়ের সংকট রয়েছে যেগুলো আগামী ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে পৌঁছে যাবে।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিরা জানান, রাজশাহীতে স্কুলে স্কুলে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে অন্যান্য বছরের মতো বই উৎসব না হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণিকক্ষেই এ বই বিতরণ কার্যক্রম করা হয়। এই মহামারীকালেও নতুন বই পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়েছে রাজশাহীর শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া স্কুলে দীর্ঘদিন পর সহপাঠীদের দেখা পেয়ে আনন্দিত তারা। রাজশাহী সরকারি পিএন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করছেন শিক্ষকরা। স্কুলের শিক্ষার্থী সানজিদা বলে, করোনার এই সময়ে নতুন বই পাব তা ভাবতেই পারিনি। স্কুলে এসে অনেক দিন পরে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। সেই সঙ্গে নতুন বই পেয়েছি। অনেক ভালো লাগছে। সরকারি পিএন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৌহিদ আরা বলেন, ২০২১ সালে শিক্ষার্থীদের হাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা যে নতুন বই দিতে পারছি এ জন্য ভালো লাগছে।

বরিশালে বছরের প্রথম দিন সীমিত পরিসরে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে নতুন বই। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান। সকাল ১০টায় নগরীর মল্লিকবাড়ি রোডের সিস্টারস ডে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে বই তুলে দেন জেলা প্রশাসক। প্রায় সাড়ে ৯ মাস পর করোনার কারণে বন্ধ স্কুলের আঙ্গিনায় পা রেখে আনন্দে উদ্বেলিত হয় শিশুরা। জেলায় মোট চাহিদার প্রায় ৩৩ শতাংশ বই পৌঁছেছে বলে জানা গেছে।

সিলেটের বিভিন্ন স্কুলে সকালে বই বিতরণ শুরু হয়, চলে দুপুর পর্যন্ত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পৃথক শ্রেণি কক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বই বিতরণ করেন শিক্ষকরা। করোনার কারণে এবার বই উৎসব না হলেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা গেছে আনন্দের ছাপ। নতুন বছরের প্রথম দিনে শীতকে উপেক্ষা করে সিলেটের স্কুলগুলোতে উপস্থিত হয় প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা। স্কুলের শিক্ষকরা একে একে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিতরণ করার পাশাপাশি অনেক দিন পর তাদের সঙ্গে খোশগল্পে মেতে ওঠেন। কিছু কিছু বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পরিবর্তে অভিভাবকদের ডেকে বই দেওয়া হয়।

নতুন বছরের প্রথম দিনে রংপুরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বই বিতরণ শুরু হয়েছে। তবে এবার করোনা মহামারীর কারণে অল্প কিছু শিক্ষার্থীকে স্কুলে এনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নতুন বই দেওয়া হয়েছে। বছরের প্রথম দিনে বই পেয়ে শিক্ষার্থীরা আনন্দে আত্মহারা।

গোপালগঞ্জে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের হাতে এবং হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের হাতে গতকাল নতুন বই তুলে দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকে একযোগে জেলার ৮৬২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও ২৬০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বই বিতরণ করা হয়।

মেহেরপুরে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন পাঠ্যবই বিতরণের উদ্বোধন করা হয়েছে। জেলায় ৩০৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ মোট ৫৭৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭৫ হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে ৩ লাখ ৯১ হাজার ৬২৮টি পাঠ্যবই বিতরণ করা হবে।

চুয়াডাঙ্গার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনানুষ্ঠানিকভাবে বই বিতরণ করা হয়েছে। এ জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনো আনুষ্ঠানিক আয়োজন ছিল না। নতুন বছরের শীতের সকালে বই পেয়ে খুশি শিক্ষার্থীরা। এবার জেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ে ১৬ লাখ ২৭ হাজার ৬৮৩ এবং প্রাথমিক পর্যায়ে জেলায় সাড়ে ৭ লাখ বই এসেছে এবং বই বিতরণ শুরু করা হয়েছে। সকালে অনানুষ্ঠানিকভাবে স্ব স্ব বিদ্যালয়ে বই বিতরণ শুরু হয়।

সিরাজগঞ্জে বই বিতরণ শুরু হয়েছে। সকালে হৈমবালা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নতুন বছরের প্রথম দিনেই আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেন জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মাদ। করোনা মহামারীর মধ্যে নতুন বই পেয়ে আনন্দিত শিক্ষার্থীরা। মহামারী করোনার মধ্যে দীর্ঘদিন পর স্কুল প্রাঙ্গণে ফিরে উচ্ছ্বসিত ছিল শিক্ষার্থীরা।

নতুন বছরের প্রথম দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। সকালে ঐতিহ্যবাহী অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান অতিথি থেকে কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খান। জেলায় প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের মাঝে ২৪ লাখ ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের মাঝে ৪২ লাখ ৬০ হাজার ৮০০ বই দেওয়া হবে।

করোনা মহামারীর মধ্যেও বছরের প্রথম দিন কুড়িগ্রামেও শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়। সকাল থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নতুন বই হাতে দেওয়া হলেও এবার মাধ্যমিকের সকল শ্রেণির সব শিক্ষার্থী পায়নি বছরের প্রথম দিনেই নতুন বই। প্রতি বছরের মতো এবার উৎসবে তেমন আয়োজন লক্ষ্য করা যায়নি।

নতুন বছরের প্রথম দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল সকালে ঐতিহ্যবাহী অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান অতিথি থেকে কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খান। জেলায় প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের মাঝে ২৪ লাখ ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের মাঝে ৪২ লাখ ৬০ হাজার ৮০০ বই দেওয়া হবে।

শীতকে উপেক্ষা করে বছরের প্রথম দিনে গতকাল দিনাজপুরে নতুন বই হাতে পেয়ে স্কুলে স্কুলে বই উৎসবে মাতোয়ারা শিক্ষার্থীরা। গ্রামে কিংবা শহরের স্কুল থেকে আনন্দ আর উল্লাসে বিনা মূল্যে বই নিয়ে বাড়ি ফিরে ছাত্র-ছাত্রীরা।

সর্বশেষ খবর