শনিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলার

বছর শেষে অনন্য রেকর্ড

আলী রিয়াজ

করোনা মহামারীর মধ্যে ২০২০ সালে দেশের অর্থনীতির সব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অনন্য রেকর্ড গড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। বছর শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৪৩ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করেই এই নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। তবে জুলাইয়ের পর দেশের রফতানি বাণিজ্যের পরিমাণও বেড়েছে। ফলে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাংলাদেশের। যা দিয়ে প্রায় এক বছরের আমদানি করা সম্ভব। জানা গেছে, ২০২০ সালে শুধু ডিসেম্বর মাসে ১৯১  কোটি ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আর এর ওপর ভর করেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলার বা ৪৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩ লাখ ৫৮ হাজার কোটি টাকা। ডিসেম্বর মাসেই রিজার্ভের দুটি মাইলফলক অর্জন করে বাংলাদেশ।

এর আগে ১৫ ডিসেম্বর রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা মহামারীর মধ্যে প্রবাসী শ্রমিকরা ফিরে এলেও আয় বাড়ছে। বিদেশে চলাচল সীমিত হয়ে পড়ায় অবৈধ পথে আয় আসা কমে গেছে। এ জন্য বৈধ পথে আয় বাড়ছে। আর আমদানি কমে যাওয়ায় রিজার্ভে নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। এ ছাড়া প্রবাসী আয় বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া শুরু করে সরকার। এরপর থেকেই প্রবাসী আয়ে গতি এসেছে। তবে করোনার পরে তাতে নতুন মাত্রা দেখা দিয়েছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয় ৪১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এই সময় মোট প্রবাসী আয় ছিল ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। পাঁচ মাসে আসা মোট প্রবাসী আয় হচ্ছে ১ হাজার ৯০ কোটি ৪৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬৯ কোটি ডলার, নভেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৫৫ কোটি ৫২ লাখ ৩০ হাজার ডলার। ২০২০ সালের নভেম্বরে আসে ২০৭ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এসেছিল ৭৭১ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার ডলার। তবে চলতি মাসের প্রথম ২৯ দিনেই আয় আসে ১৯১ কোটি ডলার। গত বছরের ডিসেম্বরের ২৯ দিনে এসেছিল ১৫৯ কোটি ডলার।

 বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। ভারতে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৫৮ হাজার ১১৩ কোটি ডলার। বিশ্বের রিজার্ভের ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান পঞ্চম। বাংলাদেশের অবস্থান ৪৫তম। পাকিস্তানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১ হাজার ৩১৫ কোটি ডলার। বিশ্বে অবস্থান ৭১তম। নেপাল ৭৪তম রিজার্ভ ১ হাজার ১৪৪ ডলার। এ ছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে বেশি রিজার্ভের পরিমাণ চীনের। দেশটিতে রিজার্ভ ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের অর্থনীতির কঠিন সংকটের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একটি সুখবর। তবে এই রিজার্ভ সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা প্রয়োজন। এখন প্রবাসী শ্রমিকরা অর্থ পাঠাচ্ছেন। সরকার প্রণোদনা দিয়ে একটি ভালো কাজ করেছে। পরিস্থিতি এখন অনুকূল না থাকায় প্রবাসীরা বৈধ পথে পাঠাচ্ছে রেমিট্যান্স। করোনার মধ্যে যারা দেশে চলে এসেছে তাদের পরিমাণ বেশি। তাই এটা নিয়ে শঙ্কাও রয়েছে। আগামীতে বড় ধরনের ঘাটতিও শুরু হতে পারে। তাই যতটুকু আশাবাদ তার সঙ্গে আশঙ্কাও রয়েছে। হুন্ডির সমস্যা এখন কমে গেলেও আবারও হবে। সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

সর্বশেষ খবর