মঙ্গলবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
ছাত্রলীগকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সৎপথে থাকলে সবকিছু অর্জন করা যায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

সৎপথে থাকলে সবকিছু অর্জন করা যায়

ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের রাজনীতিতে সৎ ও আদর্শবান হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাজনীতিবিদদের আদর্শ থাকা দরকার। সৎপথে থাকলে সবকিছু অর্জন করা যায়। তিনি বলেন, মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না, প্রত্যেক মানুষের ঘরে আমরা আলো জ্বালব।

গতকাল বিকালে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান   জয়ের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন ’৭৫-পরবর্তী দুঃসময়ে ছাত্রলীগের সভাপতি ও বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। অনুষ্ঠানে সাফল্যে ও ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ছাত্রলীগের দীর্ঘ ৭৩ বছরের দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি ছাত্রলীগের রক্তদান কর্মসূচিরও উদ্বোধন করেন। ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ছাত্রলীগের ভূমিকা উল্লেখ করে সংগঠনের অভিভাবক শেখ হাসিনা বলেন, যে কোনো আন্দোলন সফল করতে সংগঠন দরকার। ছাত্রলীগ যে কোনো আন্দোলনেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। বৈশ্বিক এ মহামারীর মধ্যে ছাত্রলীগ দেশের সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সংগঠনের ভূমিকাকে উজ্জ্বল করেছে। তিনি বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান খুনি, স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, একাত্তরের গণহত্যাকারীদের ক্ষমতায় বসায়। এরা ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করতেই ব্যস্ত ছিল, দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছাও তাদের ছিল না। বরং তাদের প্রধান লক্ষ্যই ছিল বাংলাদেশকে ব্যর্থ করে দিতে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নস্যাৎ করে দিতে চেয়েছিল। সে ষড়যন্ত্র এখনো চলছে, ষড়যন্ত্র যে থেমে গেছে তা একদম ঠিক না। আর যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ গড়ে উঠেছিল জিয়াউর রহমান সে আদর্শই ধ্বংস করতে চেয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু জিয়াউর রহমানই নয়, খালেদা জিয়াও একই কাজ করেছে। ছাত্রলীগের হাতে আমি খাতা কলম তুলে দিয়েছিলাম। কারণ খালেদা জিয়া ছাত্রদলকে বলেছিল, তাদের হাতে নাকি আওয়ামী লীগের বিনাশ ঘটবে। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করবে, অর্থাৎ তারা দিয়েছে অস্ত্র। এটা জিয়াউর রহমানেরই নীতি ছিল। আমাদের বহু মেধাবীর হাতে তারা অস্ত্র আর অর্থ তুলে দিয়ে তাদের বিপথে পরিচালিত করেছিল। আমরা চেয়েছি শিক্ষা। কারণ শিক্ষা ছাড়া একটা জাতি উন্নত হতে পারে না।

মাতৃভাষা থেকে স্বাধীনতা এবং পরবর্তী প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রলীগের অগ্রণী ভূমিকার কথা তুলে সংগঠনটির সাবেক নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোনো কিছু অর্জন এবং যে কোনো আন্দোলন সফল করতে হলে শক্তিশালী সংগঠন দরকার। আর এ কারণেই ১৯৬৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ গ্রহণ করেছিলেন। আমিও সংগঠনকে শক্তিশালী করার কাজে বেশি মনোযোগ দিয়েছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সারা বিশ্ব বাংলাদেশকে এখন ভিন্নভাবে দেখে। যারা একসময় বলত বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও কিছুই করতে পারবে না, বাংলাদেশ হবে তলাবিহীন ঝুড়ি। তারাই এখন বাংলাদেশকে ভিন্ন চোখে দেখে। বাংলাদেশের উন্নয়নের রোল মডেলের স্বীকৃতি দেয়। তিনি বলেন, করোনার কারণে হয়তো আমরা একটু থমকে গেছি। কিন্তু করোনার মধ্যেও আমরা দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। তবে করোনার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করা হচ্ছে। আমাদের দেশে যেন দুর্ভিক্ষের ছায়া না পড়তে পারে সেজন্য কৃষি উৎপাদনের চাকা সচল রাখতে হবে, দেশের এক ইঞ্চি মাটিও যেন অনাবাদি না থাকে সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসের কথা তুলে ধরে বলেন, আদর্শ নিয়ে নিজেকে যে গড়ে তুলতে পারবে সেই সফল হবে, আর যদি অর্থসম্পদের দিকে নজর চলে যায় সে কখনো সফল হতে পারবে না, ভোগবিলাস করতে পারবে; এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। কাজেই জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে নিজেদের গড়ে তোলো, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হও এবং ছাত্রলীগ বাংলাদেশের প্রতিটি অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে সে ঐতিহ্যের কথা মনে রেখে সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলবে। এটা আমি চাই।

করোনার দুঃসময়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ছাত্রলীগের কর্মকান্ডের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংগঠনটাই হচ্ছে সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। করোনা মহামারীর সময় ছাত্রলীগ অনবদ্য ভূমিকা রেখেছে। ধান কাটা, মানুষের সৎকার-দাফনসহ যখনই যে কথা বলেছি তারা তা করেছে। আর ছাত্রলীগ সব সময় অগ্রগামী দল। তারাই মানুষকে পথ দেখিয়ে এগিয়ে যায়। এ জন্য ছাত্রলীগের বয়সও আওয়ামী লীগ থেকে এক বছরের বড়, এটাও ঠিক। সে ক্ষেত্রে ছাত্রলীগ দেশের দেশের সব কর্মকান্ডে অগ্রগামী দল হিসেবেই কাজ করে।

‘কোনো কাজই ছোট নয়’- এটি ছাত্রলীগ দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো কাজই অবহেলার নয়, কোনো কাজ ছোট নয়। আমরা ভাত খাই, খাবার খাই, আর ফসল ফলায় আমাদের কৃষক। সেই কৃষককে তো অবহেলার চোখে দেখার নয়। তারাই তো আমাদের বেঁচে থাকার রসদ জোগায়। তাদের সম্মান অনেক বড়। আজকে যেমন তোমরা (ছাত্রলীগ) দুঃসময়ে কৃষকের পাশে দাঁড়িয়ে ধান কেটে বাসায় তা পৌঁছে দিয়েছো। এর মাধ্যমে ছাত্রলীগের ছেলেরা এটাই প্রমাণ করেছে যে, কোনো কাজকে তোমরা ছোট করে দেখ নাই।’

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘সবাইকে বলব গ্রামে যখন যাবে কাউকে ছোট করে দেখবে না। কোনো কাজকে ছোট করে দেখবে না। সব কাজেরই গুরুত্ব আছে, সব কাজেরই মূল্য আছে। এটাই মানতে হবে, এটাই দেখতে হবে। এটাই সব সময় নিজের আদর্শ হিসেবে নিতে হবে। আর বড় সে-ই হতে পারে যে নিজেকে ছোট করে দেখতে পারে। আর উপর দিকে তাকিয়ে চলতে গেলে হোঁচট খেতে হয়। সে জন্য মাটির দিকে তাকিয়ে চলতে হয়। এটাই আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন আমাদের বাবা-মা। দাদা-দাদিও সে শিক্ষাই আমাদের দিয়েছেন। এটা সবাই মেনে চলবে।’

ছাত্রলীগকেই আগামী দিনে দেশের নেতৃত্ব দিতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রলীগের বয়স ৭৩, আর আমি ৭৫ বছরে পা দিয়েছি। তাই আমাদেরও বয়স হয়ে গেছে। আগামীতে ছাত্রলীগকেই এ দেশের নেতৃত্বে আসতে হবে। সেভাবেই নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। করোনাকালে মানুষের সেবার যে কাজগুলো করেছ সেগুলো করে যাবে। আগামী দিনে তোমরাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। তোমাদেরই কিন্তু সামনে নেতৃত্ব দিতে হবে। সেভাবেই তোমরা নিজেদের গড়ে তুলবে। সবাই মনে রাখবে, আদর্শ, সততা ও লক্ষ্য স্থির থাকলে যে কোনো অর্জন করা সম্ভব।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান আরও বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছিলাম বলেই ভার্চুয়ালি এ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারছি। করোনাকালেও তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। তিনি বলেন, ২০০৯ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলাম, তখন অনেকেই এ নিয়ে অনেক কথা বলেছে। এখন তারা কোথায়? তারাও তো এখন এ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, অনেক কথা বলছে। আমরা ইউনিয়ন পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি সেবা পৌঁছে দিয়েছি, নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করেছি। সব দিক থেকে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে।

বর্তমান সরকার শিক্ষাকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি জেলায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। এ পর্যন্ত নতুন ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হয়েছে। অনেকটির কাজ চলমান। আবার বেসরকারি খাতে যারা বিশ্ববিদ্যালয় করতে চাচ্ছে তাদেরও সুযোগ করে দিচ্ছি। কারণ বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে আমরা পিছিয়ে থাকতে পারি না। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। তিনি বলেন, আমরা শিক্ষাকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। যেহেতু করোনাভাইরাসের কারণে সব স্কুল কলেজ বন্ধ, আমরা চালু করতে পারছি না। যখনই চালু করতে যাচ্ছি আবার দ্বিতীয় ঢেউ চলে আসছে। সে জন্য করতে পারলাম না। তার পরও আমার ঘর আমার বিদ্যালয় ব্যবহার করে তার মাধ্যমে শিক্ষার ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। ছাত্রদের বলব বসে না থেকে যা পারো নিজেরা কিছু পড়াশোনা কর। পাঠ্যপুস্তক তো আছেই, তা ছাড়া পড়ার অনেক সুযোগ আছে। জ্ঞান যত বেশি অর্জন করতে পারো ততই নিজেকে সম্পদশালী মনে করবে, ধনসম্পদ কোনো দিন কাজে লাগে না। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস একটা বিষয় শিক্ষা দিয়ে গেছে যে, যার যতই টাকা পয়সা থাকুক, যার যতই অর্থসম্পদ বাড়ি-গাড়ি থাকুক না কেন, সেগুলো যে একেবারেই ব্যর্থ, তার যে কোনো মূল্য থাকে না- করোনাভাইরাস অন্তত এ শিক্ষাটা মানুষকে ভালোভাবে দিয়েছে।

ছাত্রদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা, বিদ্যা বা জ্ঞান এটা এমন একটা সম্পদ যে সম্পদ কেউ কোনো দিন কেড়ে নিতে পারবে না। এ সম্পদ থাকলে জীবনে কখনো হোঁচট খাবে না। চলার পথ মসৃণ করে এগিয়ে যেতে পারবে। আমাদের ছেলেমেয়েদের আমি সে শিক্ষাই দিয়েছি। কাজেই তোমরাও সে শিক্ষা নেবে। ছাত্রলীগের সেটাই কাজ থাকবে। নিজেরা পড়বে অন্যকে পড়াও। আর করোনাভাইরাসের সময় নির্দেশ দিয়েছি- নিজের গ্রামে গিয়ে কেউ নিরক্ষর থাকলে তাকে অক্ষর জ্ঞান দাও।

সর্বশেষ খবর