মঙ্গলবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

বেড়েছে মানসিক রোগীর সংখ্যা

পুরনোদের সমস্যা বেড়েছে, নতুন করেও অনেকে আক্রান্ত

জিন্নাতুন নূর

দেশে আশঙ্কাজনক হারে মানসিক রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর মানসিক রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা করোনাভাইরাসের সংক্রমণকে দায়ী করছেন। সরকারি হিসাব বলছে, পাবনা মানসিক হাসপাতাল ও ঢাকার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগে মহামারীর আগের তুলনায় এখন মাসে গড়ে প্রায় ১ হাজার রোগী বেশি আসছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা মহামারীতে পুরনো রোগীদের সমস্যা আরও বেড়েছে এবং নতুন করে আরও অনেকেই মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অর্থাৎ মহামারীতে সব ধরনের মানসিক রোগীর সংখ্যাই বৃদ্ধি পেয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, করোনা মহামারীর পর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া না হলে মানসিক রোগের মহামারী শুরু হতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসেন ৪ হাজার ৭৪৭ জন রোগী। অক্টোবরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৩৭০ জনে। আবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির এক জরিপ বলছে, করোনায় ৮০ শতাংশ যুবকের আয় কমে গেছে। আর করোনার কারণে ৯৬ শতাংশ যুবকই বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ জানান, তারা প্রকট মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। আর গ্রামের তুলনায় শহরের যুবকরা বেশি চাপে আছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহামারীতে দুই ধরনের মানসিক রোগী পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে এক দল আছেন, যাদের করোনা সংক্রমণ না হলেও সংক্রমণের ভয়, আত্মীয়স্বজনকে করোনায় আক্রান্ত হতে দেখে উদ্বিগ্নতা থেকে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। আর আরেক দলের রোগীরা করোনা সংক্রমণের পর আবার সংক্রমণের ভয় ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে আতঙ্কিত হয়ে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এ ধরনের রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন।

মনোরোগ চিকিৎসকদের        মতে, দীর্ঘ সময় ঘরের বাইরে যেতে না পারা, চাকরি হারানো, জীবিকা ও ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, প্রিয়জনের মৃত্যু, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সব বয়সী মানুষই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছেন। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া না পর্যন্ত তারা মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, শরীরচর্চা করা, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা এবং ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টসের সভাপতি ও স্কয়ার হাসপাতালের মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. ওয়াজিউল আলম চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগে থেকেই যারা মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন মহামারীতে তাদের সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার নতুন করেও অনেকে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। বিশেষ করে এখন যারা আমাদের কাছে চিকিৎসা নিতে আসছেন, তারা উদ্বিগ্নতা, মাদকাসক্তি ও বিষণœতার মতো সমস্যায় ভুগছেন। যত দিন না ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত মানুষের মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক হবে না। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, মানসিক রোগী বৃদ্ধির পেছনে করোনার কিছুটা হলেও প্রভাব রয়েছে। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ঘরে বন্দী জীবন-যাপনের কারণে এবং জীবন ও জীবিকার অনিশ্চয়তার জন্য অনেকেই মানসিক চাপে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেকেই মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার পরও এটিকে রোগ হিসেবে মানতে নারাজ। এ বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’

 

সর্বশেষ খবর