বুধবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ভ্যাকসিন পেতে আশাবাদী দেশ

বাংলাদেশ ভ্যাকসিন পাবে মার্চ-এপ্রিলে : সেরাম সিইও

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভ্যাকসিন পেতে আশাবাদী দেশ

ভারত থেকে সব দেশে ভ্যাকসিন রপ্তানির অনুমোদন রয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউট প্রধানের এই বক্তব্য ঘিরে আগামী মাসে ভ্যাকসিন পেতে আশাবাদী দেশ। করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগে নীতিমালা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। করোনা ভ্যাকসিন ক্রয়, সংরক্ষণ ও সরবরাহ করতে ৪ হাজার ২৩৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ফেব্রুয়ারিতে টিকা পাওয়া যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও।

টিকা নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার প্রধান নির্বাহী আদর পুনাওয়ালা বলেছেন, ‘ভারত থেকে সব দেশেই ভ্যাকসিন রপ্তানির অনুমোদন আছে।’ এক সাক্ষাৎকারে তার বক্তব্য নিয়ে দুই দিন ধরে বিভ্রান্তি চলার পর গতকাল টুইট করে এ কথা জানালেন সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান। টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘যেহেতু সাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, তাই তিনি বিষয়টি স্পষ্ট করতে চান।’ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা মিলে করোনাভাইরাসের যে টিকা তৈরি করেছে, তার উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। কোভিশিল্ড নামের ওই টিকার তিন কোটি ডোজ কিনতে গত ৫ নভেম্বর সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর গত সোমবার এই টিকা আমদানি ও জরুরি ব্যবহারের অনুমোদনও দিয়ে দিয়েছে।

কভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস প্রকল্পের আওতায় করোনাভাইরাসের টিকা আমদানিতে ৪ হাজার ২৩৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দিল সরকার। এ ছাড়া করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কিনতে আরও ১ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত একনেক সভায় প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনীর অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে থেকে  ভার্চুয়ালি একনেক সভায় অংশ নেন। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, গত জুনে প্রকল্পটি যখন প্রথম অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, তখন টিকা আমদানির বিষয়টি ছিল না। এই প্রকল্পে নতুন করে টিকা আমদানির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী টিকা পাওয়া যাবে। আমরা আশা করছি এবং বিশ্বাস করি, ভ্যাকসিন আমরা পাব।’ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত স্বাস্থ্য সেবা সচিব মো. আবদুল মান্নানের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন, টিকা আমদানির চুক্তি জিটুজি (সরকারের সঙ্গে সরকারের) নাকি সেরাম ইনস্টিটিউট আর বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি ছিল। উত্তরে সচিব আবদুল মান্নান বলেন, ‘ভ্যাকসিন আনার প্রক্রিয়া যাই হোক না কেন, আমরা সময় মতো তা পাব।’ গতকাল করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগে নীতিমালা তৈরি করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

বাংলাদেশে সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত ভ্যাকসিনের ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোভিশিল্ড ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার এক মাসের মধ্যে ৫০ লাখ ডোজ টিকার প্রথম চালান পাঠানোর কথা সেরাম ইনস্টিটিউটের। ভারত গত রবিবার সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত টিকা ব্যবহারের চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে বাংলাদেশেও তা দ্রুত পাওয়ার আশা তৈরি হয়। কিন্তু সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী আদর পুনাওয়ালার বরাত দিয়ে রবিবার রাতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, রপ্তানি শুরুর আগে আগামী দুই মাস তারা ভারতের স্থানীয় চাহিদা পূরণ করতেই জোর দেবে। ওই খবরে বাংলাদেশের টিকা পাওয়া বিলম্বিত হতে পারে বলে শঙ্কা তৈরি হয়। এই প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান গত সোমবার দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলন করে সবাইকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘বেক্সিমকো, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ভারতের মিশনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা আশ্বস্ত করেছেন, আমাদের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে সেই চুক্তি ব্যাহত হবে না। কোনো সমস্যা হবে না, আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’ স্বাস্থ্য সচিব মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘যে নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞার কথা ভারত সরকার বলেছে শুধুমাত্র কমার্শিয়াল অ্যাকটিভিটিজের ওপর, আমাদেরগুলোর ওপর না। কারণ আমাদেরটা সরকার টু সরকার।’ পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওরা (ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) বলেছেন যে, টিকার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত যেহেতু সর্বোচ্চ পর্যায়ের ছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলাপ করেই এটা হয়েছে, বাংলাদেশ প্রথম টিকা পাবে। সুতরাং কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা এটার ওপরে হবে না। এটা নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নাই’। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান নিজের বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ‘নির্ধারিত সময়েই’ বাংলাদেশ টিকা পাবে, দেরি হওয়ার কোনো ইঙ্গিত তারা সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে পাননি। সত্যি কথা বলতে কী, আমি বা আমরা এটা নিয়ে অতটা চিন্তিত না। কারণ আমাদের চুক্তি হয়ে গেছে। ওই চুক্তিতে পরিষ্কার বলা আছে, আমাদের দেশে অনুমোদন দেওয়ার এক মাসের মধ্যে তারা আমাদের টিকা পাঠাবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর