বুধবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

শিক্ষানবিশ আইনজীবী হত্যার অভিযোগে তিন পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশালে গোয়েন্দা পুলিশের নির্যাতনে শিক্ষানবিশ আইনজীবী রেজাউল করিম রেজা হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলা হয়েছে। নিহতের বাবা ইউনুস মুন্সী বাদী হয়ে গতকাল গোয়েন্দা পুলিশের অভিযুক্ত উপ-পরিদর্শক মহিউদ্দিন এবং তার অজ্ঞাতনামা দুই পুলিশ সহযোগীর বিরুদ্ধে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা করেন। শুনানি শেষে বিচারক মো. আনিছুর রহমান ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পিবিআইর পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মহিউদ্দিনকে গোয়েন্দা বিভাগ থেকে প্রত্যাহার করে মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। বাদীপক্ষের আইনজীবী মহসিন মন্টু জানান, ২৯ ডিসেম্বর রাত ৮টায় শিক্ষানবিশ আইনজীবী রেজাউল করিম রেজাকে নগরীর সাগরদী হামিদ খান সড়ক থেকে ধরে নিয়ে যান মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মহিউদ্দিন। রাত সাড়ে ১০টায় তাঁকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে হাজির করা হয়। এ সময়ের মধ্যে রেজাউল করিমকে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন করেন উপ-পরিদর্শক মহিউদ্দিন। এমনকি গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে তীব্র শীতের মধ্যে তাঁকে খালি গায়ে রাখা হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ১৩৮ গ্রাম গাঁজা এবং চার পিস নেশাজাতীয় ইনজেকশন পাওয়ার অভিযোগে রেজাউলকে উপ-পরিদর্শক মহিউদ্দিন কোতোয়ালি মডেল থানায় সোপর্দ করে মাদক আইনে মামলা করেন। পরদিন ৩০ ডিসেম্বর ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে রেজাউলকে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। আদালতের নির্দেশে কারা কর্তৃপক্ষ কারাভ্যন্তরের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়। সেখানে ১ জানুয়ারি রেজাউলের অবস্থার অবনতি হলে ওই দিন রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে তাঁকে কারা হাসপাতাল থেকে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে ২ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১২টা ০৫ মিনিটে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রেজাউলের মৃত্যু হয়। পিবিআইর তদন্তে প্রকৃত ঘটনা উদ্্ঘাটন হবে এবং বাদী ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশা করেন অ্যাডভোকেট মহসিন মন্টু। আদালত চত্বরে রেজাউলের বাবা ইউনুস মুন্সী জানান, রেজাউলকে গোয়েন্দা পুলিশ নির্যাতন করে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাদের আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এ কারণে তিনি উপ-পরিদর্শক মহিউদ্দিন এবং তার দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। পিবিআইর তদন্তে প্রকৃত ঘটনা উদ্্ঘাটিত হবে এবং অভিযুক্ত পুলিশের কঠোর বিচার হবে আশা করেন তিনি। এদিকে প্রশাসনিক কারণে উপ-পরিদর্শক মহিউদ্দিনকে গতকাল মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ থেকে প্রত্যাহার করে মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান। তবে রেজাউলের মৃত্যুর পর থেকে লাপাত্তা রয়েছেন উপ-পরিদর্শক মহিউদ্দিন। ওই দিন থেকে তাকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। মহিউদ্দিনের অবস্থান বা তার রহস্যজনক আত্মগোপন সম্পর্কে সাংবাদিকদের কোনো সদুত্তর দেননি পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর