বৃহস্পতিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

নতুন মেয়াদে দুই বছর আজ

শেষ হলো এক যুগ, চলছে হিসাব-নিকাশ মেলানো, চলতি বছর গুরুত্ব দেওয়া হবে উন্নয়নের বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন ও দল গোছানোয়, শক্তিশালী আওয়ামী লীগ দেখতে চান শেখ হাসিনা

রফিকুল ইসলাম রনি

২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তৃতীয়বার শপথ নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। নতুন মেয়াদে সরকারের আজ দুই বছর পূর্ণ হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। গতকাল সরকারের টানা এক যুগ শেষ হয়। এখন চলছে নির্বাচনী ইশতেহার ধরে ধরে হিসাব-নিকাশ মেলানো। গত দুই বছর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করতে না হলেও সরকারকে নানা সামাজিক ইস্যু মোকাবিলা করতে হয়েছে। প্রায় এক বছর কেটে গেছে মহামারী করোনায়। চলতি বছর সরকারের অগ্রাধিকার পাবে মেগা প্রকল্পগুলো। একই সঙ্গে তৃণমূল আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো ঢেলে সাজিয়ে শক্তিশালী দল দেখতে চান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী, তিনজন উপমন্ত্রী শপথ নেন। ৪৭ জনের মন্ত্রিসভায় ৩১ জনই ছিলেন নতুন মুখ। একই বছরের ১৯ মে মন্ত্রিসভায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলামকে স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর স্বপন ভট্টাচার্যকে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, জুনাইদ আহমেদ পলককে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। একই বছরের ১৩ জুলাই প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা। তাঁকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদকে পদোন্নতি দিয়ে একই মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী করা হয়। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর গত বছরের ২৪ নভেম্বর ফরিদুল হক খানকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতের মতো গত দুই বছরেও দেশের রাজনীতিসহ সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে। মহামারী করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামনে থেকে প্রশংসনীয় ও দৃঢ়চেতা নেতৃত্ব দিয়েছেন। জীবন-জীবিকার চাকা রেখেছেন সচল। কভিড-১৯ মহামারীর সফল মোকাবিলা, অর্থনীতি পুনরুজ্জীবন ও জীবনমান সচল রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ এবং সারা বিশ্বে ২০তম অবস্থান অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিভিন্ন সংস্থা ও গণমাধ্যম তাঁর নেতৃত্বের প্রশংসা করছে। টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর নানামুখী চ্যালেঞ্জ পার করতে হয়েছে। এর মধ্যে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ ইস্যু নিয়ে উত্তাল ছিল দেশ। বিভিন্ন ইস্যুতে গুজব, পিঁয়াজের দাম বৃদ্ধিসহ নানামুখী চাপ ছিল। তবে তা শক্ত হাতে সামলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ধর্ষণের শাস্তি যাবজ্জীবনের পরিবর্তে মৃত্যুদন্ড করা হয়েছে। নিরাপদ সড়ক আইন বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

গত দুই বছরে নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের পথে হাঁটাসহ নানা ক্ষেত্রেই সাফল্য পেয়েছে বর্তমান সরকার। বিশেষত মাদক ও দুর্নীতি বিরোধী শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। করোনায় ৫০ লাখ পরিবারকে মানবিক সহায়তা প্রদান, ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি চাঙা করতে ১৯টি প্যাকেজে ১ লাখ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা, মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিনামূল্যে গৃহহীনদের টিনের ঘর ও পাকা ঘর প্রদান, প্রমত্তা পদ্মার বুকে দৃশ্যমান হয়েছে স্বপ্নের সেতু। করোনা, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান, দীর্ঘমেয়াদি বন্যার ধকল সামলে দৃশ্যমান হয়েছে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার একটি অংশকে উন্নত জীবন ও বাসস্থানের জন্য নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্নেষকরা বলছেন, বর্তমান সরকার গত দুই বছর উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে বেশ কিছু সাফল্য দেখিয়েছে। সরকারের দ্বিতীয় বছরের শুরুটা ছিল বিশ্বজয়ের। গত ৯ ফেব্রুয়ারি আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয় করে। সরকার প্রথম বছরে ক্যাসিনোকান্ডে জড়িত প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে প্রশংসা কুড়ায়। চাঁদা দাবির অভিযোগে পদ হারান ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা। দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। দুদকের দুয়ারে আসতে হয়েছে সরকারের প্রভাবশালী নেতা ও এমপিদের। ক্যাসিনোকান্ডের কারণে দলের সহযোগী সংগঠনের শীর্ষপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাদের। ২০১৯ সালের নভেম্বরে শুরু হয় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন। পাঁচটি সহযোগী সংগঠন এবং ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা হয়। ওই বছরই ২০-২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন হয়। এ সম্মেলনে দল ও সরকার আলাদা করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া অধিকাংশ নেতাকেই বাদ দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের প্রথম যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বছরের শুরুতেই জেলা সম্মেলন ও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি ভোট নিয়ে সময় পার করতে হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে ১০ মার্চ ক্ষণগণনা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। মার্চেই দেশে করোনার আঘাত শুরু হয়। বড় ধরনের আয়োজন থাকলেও মুজিববর্ষের কর্মসূচি সীমিত করা হয়। সীমিত পরিসরে ভার্চুয়ালি মুজিববর্ষের কর্মসূচি পালন করা হয়। একইভাবে দিবসভিত্তিক আলোচনা সভা ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। গত দুই বছর রাজনীতির মাঠ ছিল বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেকটাই শান্ত। এ সময় আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামতেই পারেনি বিএনপি। ‘রূপকল্প ২০২১’ শিরোনামে বাংলাদেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা তুলে ধরা হয়েছিল। যার অন্যতম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা, যুদ্ধাপরাধের বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর হয়েছে। অনেকের বিচারকাজ চলমান। ক্ষমতার ধারাবাহিকতার এক যুগে ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়েছে। প্রযুক্তির বদৌলতে প্রতিটি ঘরে এখন ডিজিটাল বাংলাদেশের ছোঁয়া। মোবাইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে হাতের মুঠোয় বিশ্ব। বৈশ্বিক মহামারী করোনা সংকটে যখন গোটা বিশ্ব বিচ্ছিন্ন তখন মানুষে মানুষে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হয়েছিল ইন্টারনেট। ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে দেশের জনগণ করোনা মহামারীতেও সংযুক্ত থাকতে পেরেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, আদালত, সরবরাহব্যবস্থা এমনকি বিচারিক কাজ সচল রাখা সম্ভব হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ ও মোকাবিলায় সতর্কবার্তা প্রচারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে প্রযুক্তি। দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলেও পৌঁছে গেছে ডিজিটাল সেবা। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসেই ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে সেবা নিচ্ছে প্রতিটি মানুষ।

২০১৮ সালের একাদশ নির্বাচনে ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত বিষয়গুলোর অগ্রগতির পাশাপাশি ২১০০ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। এতে উল্লেখ করা হয় ১০০ বছর মেয়াদি ‘ডেল্টা প্ল্যান’। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের পথে হাঁটছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

গত দুই বছরে সরকার পরিচালনায় সমালোচনা ছিল বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ও স্বাস্থ্য খাতের লাগামহীন দুর্নীতি। তার পরও সরকার সবকিছু দমন করেছে কঠোরভাবে। করোনাকালে জনপ্রতিনিধি যারা সরকারি অনুদানে অনিয়ম করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে দলীয় ও সরকারি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়েও মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। করোনা মহামারীর কারণে বেশ কিছু দিন কাজ বন্ধ থাকলেও এখন পুরোদমে এগিয়ে আনা হচ্ছে। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহারের অন্যতম লক্ষ্য ছিল স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ। নানা ষড়যন্ত্র ও দেশ-বিদেশের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের সেই সেতু এখন বাস্তবায়নের পথে। গত ১০ ডিসেম্বর সেতুর ৪১তম স্প্যান স্থাপনের মধ্য দিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে। রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগের পথ সুগম হয়েছে। চলছে রেলসংযোগের কাজও। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের নকশাও করা হয়েছে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালানোর জন্য। সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩১ শতাংশের বেশি ভৌতকাজ শেষ হয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের প্রথম মেট্রোরেল চালুর নতুন লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলছে কাজ। এমআরটি-৬ নামের এ প্রকল্পের উত্তরা থেকে আগারগাঁও ১১ দশমিক ২৯ কিলোমিটার অংশ পর্যন্ত ২০২১ সাল এবং আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে। ‘ওয়ান সিটি-টু টাউন’ মডেলে চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে আনোয়ারাকে যুক্ত করতে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে তৈরি হচ্ছে সাড়ে ৩ কিলোমিটারের সুড়ঙ্গপথ। চীনা অর্থায়নে চলমান বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পে কাজ করছে চায়না কমিউনিকেশন্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি)। ডিসেম্বর পর্যন্ত অগ্রগতি ৬১ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এক যুগে নতুন পরিচয় পেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন যে ধরনের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশটি হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ তাদের সর্বশেষ এক রিপোর্টে এ পূর্বাভাস দিয়েছে। ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল ২০২১’ নামের এ রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয় ডিসেম্বরে। এতে মূলত সামনের বছর এবং আগামী ১৫ বছরে বিশ্বের কোন দেশের অর্থনীতি কী হারে বাড়বে তারই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও যথাসময়ে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দিয়ে ১০ বছর ধরে সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখেছে সরকার। ১ জানুয়ারি সকালে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় বিনামূল্যে বই বিতরণ শুরু হয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উপহার হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন সংকট নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে ১৪ হাজার বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হবে মুক্তিযোদ্ধাদের। ২০২৩ সালের মধ্যে এসব বাড়ি হস্তান্তরের কথা।

করোনার সময় সরকারের দেওয়া সহায়তা সরাসরি পেয়েছে অন্তত ৭ কোটি মানুষ। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে নেওয়া হয়েছে পদক্ষেপ। কভিড-১৯ শনাক্তের পরীক্ষা সহজ ও দ্রুত করতে পরীক্ষা কেন্দ্র বৃদ্ধির কাজ করছে সরকার। বর্তমানে দেশের ১৮১ স্থানে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা করা হচ্ছে।

আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে সারা দেশের হাসপাতালে ১০ হাজার ৪৪৫টি শয্যা রয়েছে। করোনাভাইরাস নিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৬২৫ চিকিৎসক, ১ হাজার ৩১৪ নার্স ও ৫০০ প্রতিষ্ঠানের মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের। এ ছাড়া কভিড-১৯বিষয়ক অনলাইন প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেছেন ১০ হাজার ৮১২ জন চিকিৎসক। যেসব পেশার ব্যক্তি এ সংকট মোকাবিলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সামনে থেকে কাজ করছেন তাদের জন্য স্বাস্থ্যবীমার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা প্রাদুর্ভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন খেটে খাওয়া, হতদরিদ্র ও ভাসমান মানুষ। তাদের জন্য সরকার নিয়েছে বহুমুখী উদ্যোগ। সারা দেশে নিম্ন আয়ের মানুষকে ১০ টাকা কেজি দরে ৯০ হাজার টন চাল দেওয়া হয়েছে।

আগামী দিনে পদ্মা সেতুর দুই পারে সিঙ্গাপুরের আদলে শিল্পনগরী গড়ে তোলা, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পকে গ্রামভিত্তিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি গুচ্ছশিল্প কাঠামোয় সংযুক্ত, ঢাকা ঘিরে এলিভেটেড লিঙ্ক রোড ও ইস্টার্ন বাইপাস নির্মাণ করা হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে এবং এক্সপ্রেসওয়ে রেললাইন নির্মাণ, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, দিনাজপুর, পটুয়াখালী, খুলনা এবং কলকাতা পর্যন্ত বুলেট ট্রেন সার্ভিস সম্প্রসারণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনাল, নতুন রাডার স্থাপন ও জেট ফুয়েল সরবরাহের জন্য পাইপলাইন নির্মাণকাজ চলছে পূর্ণগতিতে। বাগেরহাটে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শেষ করা, কক্সবাজারে সুপিরিয়র বিমান অবতরণ ক্ষমতাসম্পন্ন বিমানবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। ঢাকায় পাতালরেল, মেট্রোরেল, সার্কুলার রেলপথ এবং নব্য ও প্রশস্ত নৌপথ নির্মাণ করে মেগাসিটিকে যানজটমুক্ত করতে নেওয়া হয়েছে উদ্যোগ। পাঁচ বছরে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খনন, ঢাকার আশপাশের চার নদ-নদী দখল ও দূষণ মুক্ত করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলায় জোর দিয়েছে সরকার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর