শুক্রবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ট্রাম্প সমর্থকদের নজিরবিহীন তাণ্ডব

রণক্ষেত্র ক্যাপিটল ভবন । গুলিতে নিহত ৪ । ওয়াশিংটনে কারফিউ । স্তম্ভিত বিশ্ব । আনুষ্ঠানিক জয়ী বাইডেন

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ট্রাম্প সমর্থকদের নজিরবিহীন তাণ্ডব

সমাবেশে (বাঁয়ে) ট্রাম্প উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার পরই ক্যাপিটল ভবনে (ডানে) গিয়ে শুরু হয় সমর্থকদের তান্ডব -এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে মার্কিন পার্লামেন্টে নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে পরাজিত প্রার্থী বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা। যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে পরিচিত ক্যাপিটল ভবনে হামলায় ভাঙচুর ও সহিংসতার মধ্যে নিহত হয়েছেন অন্তত চারজন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে তাঁর সমর্থকরা ব্যাপক সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে কার্যত ক্যাপিটল ভবন দখল করে নেয়। ফলে নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জয়ের স্বীকৃতি দিতে বসা অধিবেশন বাধ্য হয়ে মুলতবি করে কংগ্রেস। ছড়িয়ে পড়া ব্যাপক দাঙ্গা-হাঙ্গামার কারণে রাজধানী ওয়াশিংটনে দেওয়া হয় কারফিউ। দুই সপ্তাহের জন্য ঘোষণা হয়েছে জরুরি অবস্থা।

অবশ্য হামলার কয়েক ঘণ্টা পরে মুলতবি থাকা অধিবেশনে বসে বাইডেনের জয়ের স্বীকৃতি দিয়েছে  কংগ্রেস। কংগ্রেসের এই আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর নিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু এর আগেই যুক্তরাষ্ট্রের কপালে লেগে যায় কালিমা। ২০০ বছরেরও বেশি সময়ের ইতিহাসে মার্কিন গণতন্ত্রের প্রতীকের ওপর সবচেয়ে মারাত্মক হামলা হয়ে যায়। ট্রাম্প সমর্থকদের এই প্রাণঘাতী হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় হতবাক হয়েছে বিশ্ব। জানা যায়, গত ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে ক্রমাগতই উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কোনো প্রমাণ ছাড়াই ভোটে ব্যাপক কারচুপি করা হয়েছে বলে বারবার দাবি করে আসছিলেন ট্রাম্প। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথাও প্রত্যাখ্যান করে আসছিলেন। এর মধ্যেই চলছিল নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ প্রক্রিয়ার নানান আনুষ্ঠানিকতা। এ প্রক্রিয়ার একটি আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে গতকাল আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়ে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন বসে। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, কংগ্রেস যৌথ অধিবেশন শুরুর আগে ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের কাছে অধিবেশনের বিরোধিতা করে জড়ো হয়েছিলেন কয়েক হাজার ট্রাম্প সমর্থক। উপস্থিত ছিল উগ্রপন্থি বিভিন্ন গ্রুপের সদস্যরাও। সেই সমাবেশে বক্তব্য দেন ট্রাম্প। পরাজয় মেনে না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের ক্যাপিটলের দিকে মিছিল নিয়ে যেতে বলেন। নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করতে চাপ দেওয়ার জন্য সমর্থকদের ‘লড়াই করার’ আহ্বান জানান ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই সমাবেশ থেকেই মিছিল নিয়ে কয়েকশ ট্রাম্প সমর্থক ক্যাপিটল ভবনের নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। একপর্যায়ে কংগ্রেসের অধিবেশন চলার মধ্যেই পুলিশের বাধা ভেঙে ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে পড়েন তারা। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদুনে গ্যাস ও পেপার স্প্রে ব্যবহার করে পুলিশ। হামলার সময় অধিবেশনে ট্রাম্প সমর্থক কয়েকজন আইনপ্রণেতা নির্বাচনের ফল বাতিলের প্রস্তাব নিয়েই আলোচনা করছিলেন। এ সময় অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত আইনপ্রণেতাদের তাদের আসনের নিচ থেকে গ্যাস মাস্ক পরার জন্য বলে পুলিশ। ততক্ষণে হামলাকারীদের দখলে চলে যায় অধিবেশন কক্ষ তথা পুরো ক্যাপিটল ভবন। পরে সেখান থেকে পুলিশ পাহারা দিয়ে আইনপ্রণেতাদের সরিয়ে নেওয়া হয় আন্ডারগ্রাউন্ড টানেলে। যৌথ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করা ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকেও পাহারা দিয়ে অধিবেশন কক্ষ থেকে বের করে নেয় পুলিশ। সবাইকে সরিয়ে নেওয়ার পর ক্যাপিটলকে ট্রাম্প সমর্থকদের দখলমুক্ত করতে পুলিশ অভিযান শুরু করে। পরের তিন ঘণ্টায় হলওয়েগুলো দিয়ে ট্রাম্প সমর্থকদের ছোটাছুটি ও বিভিন্ন দফতরে গিয়ে খোঁজাখুঁজি, হাঙ্গামা-বিশৃঙ্খলায় এক নজিরবিহীন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ সময় চরম সহিংসতার মধ্যে গুলিতে নিহত হন এক নারী। পরে আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর জানায় ওয়াশিংটন ডিসির পুলিশ।  হাসপাতালে জরুরি বিভাগে এই তিনজনের মৃত্যু হয়। একপর্যায়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক ভিডিও বার্তায় তাঁর সমর্থকদের ‘বাড়ি ফেরার’ আহ্বান জানান। যদিও তিনি ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে টুইটার ও ফেসবুকে অনবরত দাবি চালিয়েই যাচ্ছিলেন। তাই টুইটার ও ফেসবুক তাঁর অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মার্কিন সময় বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে কারফিউ জারি করা হয়। শহরে ১৫ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেন ডিসির মেয়র মুরিয়েল বাউজার। দাঙ্গাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ক্যাপিটলের ভিতরে কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার করে। অন্তত ৫২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে ৪৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে কারফিউ ভঙ্গ করার জন্য।  ওয়াশিংটন মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রধান রবার্ট কন্টি জানিয়েছেন, আক্রমণকারীরা যন্ত্রণাদায়ক রাসায়নিক নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে, এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৫টার একটু পরে ক্যাপিটল ভবন নিরাপদ বলে ঘোষণা করে পুলিশ। ক্যাপিটল পুলিশকে সহায়তা করতে কংগ্রেস ভবনে ন্যাশনাল গার্ডের সেনা, এফবিআই এজেন্ট এবং মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। কারফিউ শুরু হওয়ার পর ন্যাশনাল গার্ড সেনা ও পুলিশ প্রতিবাদকারীদের ক্যাপিটলের আশপাশ থেকে সরিয়ে দেয়। রাত ৮টার পর ফের নির্বাচনী জয়ের স্বীকৃতির প্রক্রিয়া শুরু করতে অধিবেশন শুরু করেন আইনপ্রণেতারা। এ সময় অধিবেশনের সভাপতিত্ব করা ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেন, আজ যারা আমাদের ক্যাপিটলে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছ, তোমরা জয়ী হতে পারবে না। চলুন আমরা কাজ শুরু করি। কংগ্রেস সদস্যরা হাততালি দিয়ে তাঁকে অভিনন্দিত করেন। কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনল ঘটনাটিকে ‘ব্যর্থ বিদ্রোহ’ আখ্যা দিয়ে বলেন, আমরা অনাচার ও হুমকির কাছে মাথা নত করব না। আমরা আমাদের অবস্থানে ফিরে এসেছি। সংবিধানের অধীনে এবং আমাদের জাতির জন্য আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করব। আর আজ রাতেই আমরা তা করতে যাচ্ছি।

বাইডেনের জয়ের স্বীকৃতি দিল যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস : রাতেই অধিবেশনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের জয়ের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিল কংগ্রেস। কংগ্রেসের এই যৌথ অধিবেশনে পেনসিলভেনিয়া ও আরিজোনা রাজ্যের ভোট নিয়ে রিপাবলিকানদের তোলা আপত্তি সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদ, কংগ্রেসের এই উভয়কক্ষ প্রত্যাখ্যান করার পর ইলেকটোরাল ভোটের ফলাফল অনুমোদন করা হয়। কংগ্রেস রাজ্যগুলোর ফলাফলের ইলেকটোরাল কলেজ টালি নিশ্চিত করেছে আর তাতে ৩ নভেম্বরের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্ষমতাসীন ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বাইডেন জয়ী হয়েছেন, এমনটি দেখা গেছে বলে ঘোষণা করেন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করা যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। ইলেকটোরাল কলেজে বাইডেন ৩০৬ ও ট্রাম্প ২৩২ ভোট পেয়েছেন বলে অধিবেশন স্বীকৃতি দেয়। এর মাধ্যমে জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসকে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা ট্রাম্পের : কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আনুষ্ঠানিক বিজয় ঘোষণার পর এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। তবে বিবৃতিতেও বাইডেনকে অভিনন্দন জানাননি ট্রাম্প। নিজের ক্ষমতা আমলকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম সেরা সময় বলে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, বাইডেনের আনুষ্ঠানিক জয় ঘোষণার মধ্য দিয়ে তাঁর প্রেসিডেন্ট আমলের সমাপ্তি টানা হলো। যদিও নির্বাচনের ফলাফলে আমি খুবই হতাশ; তারপরও ২০ জানুয়ারি নিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। আমি সব সময় বলে এসেছি, আমার লড়াইটা হলো শুধু বৈধ ভোট গণনা নিশ্চিত করার।  ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ এর লড়াই সবে শুরু হলো বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ট্রাম্পের উসকানিতেই হামলা বললেন ওবামা : ক্যাপিটলে নজিরবিহীন হামলার ঘটনা রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উসকানিতে ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। হামলার পর এক বিবৃতিতে ওবামা বলেন, ক্যাপিটলে আজকের সহিংসতার ঘটনা আমাদের জাতির জন্য বড় ধরনের অসম্মান ও লজ্জার মুহূর্ত হিসেবে ইতিহাস ঠিক মনে রাখবে, যা উসকে দিয়েছেন একজন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট, যিনি একটি বৈধ নির্বাচনের ফল নিয়ে ভিত্তিহীনভাবে মিথ্যা বলে চলছেন। ইউএস ক্যাপিটল হিস্টোরিক্যাল সোসাইটির তথ্য মতে, ১৮১৪ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী পুড়িয়ে দেওয়ার পর থেকে গণতন্ত্রের প্রতীকে পরিণত হওয়া এ ভবনটিতে এটিই ছিল সবচেয়ে ক্ষতিকারক হামলা।

হামলায় স্তম্ভিত বিশ্ব : ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় হতবাক হয়ে পড়ার কথা জানিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা। জাতিসংঘের মুখপাত্র জানান, মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নেতারা তাদের সমর্থকদের সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে বলবেন। পাশাপাশি সমর্থকদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করাতে ভূমিকা রাখবেন। হামলায় উদ্বেগ জানিয়ে এক টুইট বার্তায় মোদি লিখেছেন, ওয়াশিংটন ডিসিতে দাঙ্গা ও সহিংসতার খবর দেখে খারাপ লাগছে।  বেআইনি প্রতিবাদের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অচল করতে দেওয়া যাবে না। নিয়মমাফিক ও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর অবশ্যই অব্যাহত রাখতে হবে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ টুইটারে ইংরেজিতে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ওয়াশিংটন ডিসিতে আজ যা হয়েছে, তা মোটেও যুক্তরাষ্ট্রের মতো নয়। আমরা আমাদের গণতন্ত্রের শক্তিতে বিশ্বাসী; আমরা যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের শক্তিতেও বিশ্বাসী। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন টুইটারে মার্কিন কংগ্রেস ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা, দাঙ্গা ও হতাহতের ঘটনাকে ‘কলঙ্কজনক’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন। বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সারা দুনিয়ায় গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নেয়, এ কারণেই সেখানে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মমাফিক ক্ষমতা হস্তান্তর খুবই জরুরি। জাপানের মুখ্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব কাতসুনোবো কাতো বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র এ কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠেছে, প্রশান্তি ও সম্প্রীতি ফিরে এসেছে এবং শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে- এমনটা দেখব বলেই আশা করছি আমরা। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নভেম্বরের ভোটের ফল মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, গণতন্ত্রের শত্রুরা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে হওয়া সহিংসতার চিত্র দেখে উল্লসিত। উসকানিমূলক কথাবার্তার কারণেই এই সহিংসতা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকদের উচিত মার্কিন ভোটারদের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া এবং গণতন্ত্রকে পদাঘাত বন্ধ করা। ন্যাটোর মহাসচিব ইয়ান স্টল্টেনবার্গ ওয়াশিংটনের সহিংস বিক্ষোভের চিত্রকে ‘অতিশয় বেদনাদায়ক দৃশ্য’ বলে অভিহিত করেছেন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলের প্রতি সবার শ্রদ্ধা জানানো উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ টুইটারে বলেছেন, ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল হিল থেকে আসা খবর উদ্বেগের সঙ্গে অনুসরণ করছি আমি। আমি যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের শক্তিতে আস্থা রাখি। আশা করছি নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই উত্তেজনাকর সময় কাটিয়ে উঠে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারবেন। আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সায়মন কোভনির  বলেছেন, ওয়াশিংটনে যে দৃশ্য দেখা গেছে তা হচ্ছে গণতন্ত্রের ওপর ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ও তাঁর সমর্থকদের সুপরিকল্পিত আক্রমণ। তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল। বিশ্ব দেখছে। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ওয়াশিংটনে হওয়া সহিংসতায় উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি সবাইকে শান্ত হতে ও কান্ডজ্ঞান কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতাদের চেয়ারম্যান শার্ল মিশেল টুইটারে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস হচ্ছে গণতন্ত্রের মন্দির। যুক্তরাষ্ট্রে জো বাইডেনের হাতে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি। ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডে লাইয়েন বলেছেন, ‘আমি যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তির ওপর আস্থাশীল, যার মূল হচ্ছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর। জো বাইডেন নির্বাচনে জিতেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে আছি আমি।’ কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ওয়াশিংটনের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী বলেই মনে করি আমি, শিগগিরই সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে বলে আশা করছি। সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্তিয়েফান লোফভেন ক্যাপিটল ভবনে হামলার ঘটনাকে ‘গণতন্ত্রের ওপর আঘাত’ বলে অভিহিত করেছেন। নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী আর্না সোলবার্গ লিখেছেন, মার্কিন গণতন্ত্রের ওপর এ আঘাত মেনে নেওয়া যায় না। এটা থামানোর দায়িত্ব প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সানা ম্যারিন বলেছেন, সব সময়ের জন্য গণতন্ত্রকে কেন দৃঢ় ও শক্তিশালীভাবে রক্ষা করা দরকার তার গুরুত্বও দেখাচ্ছে এ ঘটনা। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেছেন, আমেরিকান গণতন্ত্রের অসাধারণ চর্চার অংশ হিসেবে নির্বাচিত নতুন প্রশাসনের হাতে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের দিকে তাকিয়ে আছি।

 নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন বলেছেন, গণতন্ত্র- এতে জনগণের ভোট দেওয়ার অধিকার, তাদের কথা শোনার এবং সেই সিদ্ধান্তের শান্তিপূর্ণ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে, তা একদল দুর্বৃত্তের কারণে অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে না। কোনো সন্দেহ নেই, গণতন্ত্রই শক্তিশালী হিসেবে আবির্ভূত হবে। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবের্তো ফের্নান্দেজ বলেছেন, সেখানে জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর হবে বলে আস্থাশীল আমরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর