রবিবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

চীনা টিকা হালাল ঘোষণা

প্রতিদিন ডেস্ক

করোনা প্রতিরোধক ভ্যাকসিন বাজারজাতের সময় যখন দেশে দেশে নানা বিতর্ক ও সন্দেহ দেখা দিয়েছে তখন ইন্দোনেশিয়ার ওলামা কাউন্সিল চীনের তৈরি ভ্যাকসিনকে হালাল হিসেবে ঘোষণা (ফতোয়া) দিয়েছে। অন্যদিকে ‘আস্থা নেই’ উল্লেখ করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা

আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের তৈরি ভ্যাকসিনকে তাঁর দেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এএফপি, রয়টার্স, ডয়েসে ভেলে।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, চীনের তৈরি সিনোভ্যাকের করোনা টিকার ব্যবহার অনুমোদন করেছে ইন্দোনেশিয়ার ওলামা কাউন্সিল। শুক্রবার দেশটির ইসলামী নিয়মকানুন-সংশ্লিষ্ট এই সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে জানানো হলো, ইসলামী নিয়মকানুন অনুযায়ী সিনোভ্যাকের টিকা ব্যবহারের যোগ্য। ওলামা কাউন্সিল বলেছে, চীনের টিকা পবিত্র ও হালাল। এর ফলে ইন্দোনেশিয়ায় এ টিকার প্রয়োগে আর বড় কোনো বাধা থাকল না। যদিও এই টিকার ব্যবহার এখনো ইন্দোনেশিয়ার চিকিৎসা-সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিবেচনাধীন। মুসলিম জনসংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বড় দেশ ইন্দোনেশিয়া। দেশটি করোনাভ্যাকের প্রায় ৩০ লাখ ডোজ গ্রহণ করেছে সিনোভ্যাকের কাছ থেকে। কিছু দিনের মধ্যেই এর প্রয়োগ শুরু হওয়ার কথা। ইন্দোনেশিয়ার ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, সিনোভ্যাকের করোনা টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ফলাফল নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। এরপরই টিকার অনুমোদন দেওয়া হবে। এদিকে দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বলেছেন, টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে শুরুতে অগ্রাধিকার পাবেন রাজনীতিবিদরা। তিনিসহ কয়েকজন মন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এই টিকা নেবেন। এরপর স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্য সরকারি কর্মকর্তাদের করোনার টিকা দেওয়া হবে।

ইরানে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের ভ্যাকসিন নিষিদ্ধ : যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে করোনার টিকা কেনায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইরান। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি টিকা আমদানি নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেন। শুক্রবার টেলিভিশনে প্রচারিত এক বক্তৃতায় খামেনি জানান, ‘পশ্চিমা দেশে তৈরি টিকায় আস্থা পাচ্ছেন না’। আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ওপরের দিকেই আছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। দুটি দেশে এরই মধ্যে ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি টিকার ব্যবহার শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র মডার্নার টিকার ব্যবহারও করছে। ওদিকে যুক্তরাজ্য অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনার টিকার ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। কিছু দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফাইজারের তৈরি করোনার টিকা দেশে আনার পরিকল্পনা করছিল ইরান। সেই পরিকল্পনা এবার বাতিল করে দিলেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা খামেনি।

খামেনি বলেছেন, ‘যদি আমেরিকানরা একটি টিকা তৈরিই করতে পারত, তবে তাদের দেশে করোনা পরিস্থিতি এত খারাপ হতো না। যদি ফাইজারের কারখানায় টিকা তৈরিই হয়ে থাকে, তবে তা নিজেরা না নিয়ে কেন আমাদের দিতে চাইছে? তাদের আগে টিকা নেওয়া উচিত, যাতে করোনায় মৃত্যুর পরিমাণ বেশি না হয়।’

যুক্তরাজ্যের বিষয়েও একই বক্তব্য দেন খামেনি। তিনি বলেন, এসব টিকায় তাঁর আস্থা নেই। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এসব টিকা ইরানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানোর চেষ্টা চলছে বলে তিনি মনে করেন। ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পক্ষে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ নেতার বক্তব্য অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি ঠিক-বেঠিক নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য মেনেই করোনার টিকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

চীনের মানুষ টিকা পাবে বিনা মূল্যে : করোনাভাইরাসের টিকার সরবরাহ সহজলভ্য হওয়ার পর দেশের জনগণকে এটি বিনা মূল্যে দেবে চীন। গতকাল দেশটির সরকারি কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের কর্মকর্তা ঝেং ঝংওয়েই বলেন, টিকা তৈরি ও পরিবহনে অর্থ খরচ হলেও সরকার নাগরিকদের এটি বিনা মূল্যে দেবে। বেইজিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ‘টিকার জন্য আমাদের নাগরিকদের এক পয়সাও খরচ করতে হবে না।’ প্রসঙ্গত, গত ডিসেম্বরের শেষনাগাদ চীন সাধারণ জনগণের মধ্যে প্রথমবারের মতো টিকা দেওয়া শুরু করে। এর আগে টিকার জরুরি ব্যবহার কর্মসূচির আওতায় স্বাস্থ্যকর্মীসহ করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের টিকা প্রদানের অনুমোদন দেওয়া হয়। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি দেশে টিকাদান কর্মসূচি সম্প্রসারিত করে চীন। শীত ও বসন্ত মৌসুমে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া ঠেকানোর চেষ্টায় এই কর্মসূচির আওতায় খাদ্য ও গণপরিবহন খাতের মতো আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাতের কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের কর্মকর্তা ঝেং জিজিন বলেন, ওইসব টিকাও বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে ঝেং বলেন, ‘কয়েকটি স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষকে আমরা টিকার জন্য লোকজনের কাছ থেকে অর্থ নিতে দেখেছি। আমরা দ্রুত এ অবস্থার পরিবর্তন চেয়েছি। তবে এখন স্থানীয় সরকার বিনা মূল্যে টিকাদান কর্মসূচি যথাযথভাবেই কার্যকর করা শুরু করেছে।’

ভ্যাকসিন নিলেন সৌদি বাদশা : ৮৫ বছর বয়সী সৌদি বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ফাইজারের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন নিয়েছেন। গতকাল আরব নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে। এ বিষয়ে সৌদি আরবের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তৌফিক আল-রাবিয়া জানান, গত শুক্রবার টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন বাদশা সালমান। নিজের সুরক্ষার পাশাপাশি ‘প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয়’ সরকারের এই নীতি জনগণের সামনে তুলে ধরতেই টিকা নিয়েছেন তিনি। মহামারী শুরুর প্রথম দিন থেকেই তিনি জনগণের স্বার্থে সব ধরনের পদক্ষেপে সমর্থন দিয়ে আসছেন। করোনাভাইরাস মহামারীর বছর গড়ানোর পর এখন বিভিন্ন দেশেই টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। জনগণকে টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করতে রাষ্ট্রনায়করা এভাবে প্রকাশ্যে টিকা নিচ্ছেন। মধ্যপ্রাচ্যে বাহরাইনের পর সৌদি আরব প্রথম দেশ, যেখানে টিকা অনুমোদন পেয়েছে। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, তাঁর ভাই খালিদ বিন সালমানসহ রাজপরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা এরই মধ্যে ভ্যাকসিন বা টিকা নিয়েছেন বলে আরব নিউজ জানিয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর