রবিবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

অন্যায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় দল উন্মাদ বলছে : মির্জা কাদের

নোয়াখালী প্রতিনিধি

অন্যায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় দল উন্মাদ বলছে : মির্জা কাদের

নোয়াখালী কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবদুল কাদের মির্জা বলেছেন, আমি যখন

অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলি, অপরাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলি, এলাকার মানুষের গ্যাসের জন্য কথা বলি, তখন আমাকে বলা হয়, আমি নাকি পাগল, উন্মাদ। জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন করে তিনি বলেন, আমি পাগল? এ সময় উপস্থিত জনগণ সমস্বরে বলেন, না না। আমি পাগল কি না তা ১৬ তারিখ প্রমাণ করব। গতকাল সকালে বসুরহাট পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন। কারও নাম উল্লেখ না করে মির্জা কাদের বলেন, যিনি আমাকে পাগল আর উন্মাদ বলেছেন, গোপালগঞ্জে যেখানে ৯৯ ভাগ আওয়ামী লীগ, সেখান থেকে তিনি এমপি হয়েছেন। আগে মন্ত্রী ছিলেন, এখন নেই। ওনার সম্পর্কে সবাই জানেন। কী কী অনিয়ম তিনি করেছেন। অনিয়ম না করলে ওনাকে মন্ত্রী বানায়নি কেন? উনি আমাকে বলেন, পাগল-উন্মাদ। আওয়ামী লীগের আরেক নেতা সম্পর্কে তিনি বলেন, আপনি তো দায়িত্বশীল ব্যক্তি। আপনার বাড়ি কুষ্টিয়া। কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য যারা ভেঙেছে, আপনি কি দায়িত্বশীল লোক? এগুলো বন্ধ করেন। কী করবেন? বহিষ্কার করবেন? জেলে দেবেন? মেরে ফেলবেন? আমি সারা দেশের কথা বলিনি, আমি আপনাদের কথা বলিনি। আমি বলেছি, নোয়াখালী-ফেনীর অপরাজনীতির কথা। আপনারা কেন নিজেদের গায়ের ওপর নিচ্ছেন? তিনি বলেন, আমি সবার বিরুদ্ধে বলি না। দলের মধ্যে ভালো লোকও আছেন। কিন্তু অধিকাংশ শেখ হাসিনাকে অসহযোগিতা করেন। মির্জ কাদের বলেন, আমি মনে করি শেখ হাসিনা অসহায়। কেন অসহায়? শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। দেশের মৌলবাদী অপশক্তি, সাম্প্রদায়িক শক্তি শেখ হাসিনাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। দলের অভ্যন্তরে চাটুকারেরা রাতদিন শেখ হাসিনাকে উত্ত্যক্ত করছে। তাঁকে দল দেখতে হয়, দেশ দেখতে হয়, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হয়। তাঁর কি সময় আছে আমার কোম্পানিগঞ্জ দেখার, নোয়াখালী দেখার, ফেনী দেখার? মির্জা কাদের দলীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, দেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা সব ব্যবস্থা করতে হবে শেখ হাসিনার, তাহলে আপনাদের কাজ কী? আপনারা কী করছেন? আমি সবার কথা বলি না। ভালো লোক মন্ত্রীদের ভিতর আছেন। তা না হলে দেশ চলে কীভাবে। আমলাদের ভিতর, সাংবাদিকদের ভিতর ভালো লোক আছেন। কিন্তু অধিকাংশ আজ শেখ হাসিনাকে অসহযোগিতা করছেন। তিনি বলেন, চোর ও দুর্নীতিবাজ নেতাদের যে বিচার হয়েছে, এটা কেউ কি অতীতে করতে পেরেছেন? পিন্টুর বিচার কি খালেদা জিয়া করতে পেরেছেন? শেখ হাসিনা করেছেন। মিথ্যা কথা বলছি? আমি বলেছি, সাহস করে সত্য কথা বলব। বিএনপি ওয়ালারা মনে কষ্ট নিলে আমাদের কিছু যায় আসে না। না হয় ভোট দেবেন না, এই তো। পিন্টুর বিচার তারা করেনি। কিন্তু শেখ হাসিনা সাহসী, তিনি পেরেছেন। তিনি বিচার করছেন। আমি নেত্রীর কাছে আবেদন করব, দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের বিচার করবেন। মির্জা কাদের বলেন, অস্ত্রের ঝনঝনানি চলছে। কবিরহাটে এক বাড়িতে আমাদের পৌরসভার নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করেছে। ফেনীতে একটা বাসায় বসে আমাদের নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করেছে। তারপর এখানে কিছু কিছু লোকের কাছে অস্ত্রশস্ত্র পাঠিয়েছে। গত পরশুদিন চট্টগ্রাম থেকে কবিরহাটে অস্ত্র এসেছে। আমি প্রশাসনকে জানিয়েছি। ওনাদের কথা কী বলব? এখানকার প্রশাসনকে দোষ দিয়ে লাভ নাই। এরা তো বাঁধা। তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব রাগ করলে আমি কী করব? আমি আর কতক্ষণ বরদাস্ত করব? এসপি সাহেবকে আমার এলাকার সব ঘটনা বলেছি, এখন পর্যন্ত কোনো আওয়াজ নেই। বিগত কয়েকটি নির্বাচন ও অতীতে পুলিশের ওপর জামায়াতের হামলার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, এখনো সে অস্ত্রগুলো উদ্ধার হয়নি। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যদি কোম্পানীগঞ্জের নির্বাচন নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র চলে, নির্বাচনে রং লাগানোর জন্য ষড়যন্ত্র চলে, যদি কোম্পানীগঞ্জে কোনো মায়ের বুক খালি হয়, যদি কোম্পানীগঞ্জে আমার কোনো কর্মীর গায়ে কেউ হাত দেয়, এখানে যদি অস্থিতিশীল পবিবেশ সৃষ্টি হয়, কারও ঘরে আগুন লাগায়, কারও চিনে (খড়েরগাদা) আগুন লাগায়, সব দায়িত্ব ডিসি-এসপি আপনাদেরকে নিতে হবে। জনতার কাতারে আপনাদের বিচার করা হবে। তিনি বলেন, উন্নয়ন অনেক হয়েছে। কোনোটা বাকি নেই। যেগুলো বাকি আছে সেগুলোও বলেছি। গ্যাসের বিষয়ে মন্ত্রী ডেকে নিয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের কাছে পাঠিয়েছিল। জরিপও হয়েছে। দুই বছর পর্যন্ত আমরা গ্যাস পাইনি। কী জন্য পাইনি আপনারা জানেন না?

গ্যাসক্ষেত্রের নামকরণ প্রসঙ্গে মির্জা কাদের বলেন, কেউ তাদের কনস্টিটিউয়েন্সি পলিটিক্স করে। আমার কনস্টিটিউয়েন্সি পলিটিক্সের দরকার নাই। সিন্দুরপুর এলাকায় গ্যাসক্ষেত্রের নাম সাহজাদপুর করলে কেউ কি মানবে? আমার এলাকার স্বার্থ আমাকে প্রথম দেখতে হবে। তারপর অন্যদিকে। আমার এলাকার সম্মানহানি হয়েছে। আমি এটার প্রতিবাদ করলে অপরাধ। করা যাবে না। এগুলো দুঃখজনক।

মির্জা কাদের বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে আমার বক্তব্য স্পষ্ট। সেটা হচ্ছে ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে ইচ্ছা তাকে দেব’। সেটা নিশ্চিত করতে হবে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা এনেছেন কী জন্য? জীবন যৌবন সবকিছু ক্ষয় করে দিয়ে স্বাধীনতা এনেছেন। এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আন্দোলন করেছি এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। আজকে ভাতের অধিকার শেখ হাসিনা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। কিন্তু ভোটের অধিকার কি প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন? ভোটের অধিকার এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমি কি বলেছি, শেখ হাসিনা ভোটের অধিকার হরণ করেছেন? কিছু পত্রপত্রিকায় আমাদের ওই তথাকথিত নেতারা বসে বসে সমালোচনা করেন, শেখ হাসিনাকে খ্যাপানোর জন্য। খ্যাপিয়ে লাভ হবে না। নেত্রী সব বুঝেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনাই পারেন ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। আর কেউ পারবে না। খালেদা জিয়া ঘরে ঢুকে গিয়েছে। হাওয়া ভবনের চোর তারেক জিয়া। তার কি দেশে কোনো ভালো কাজ করার মানসিকতা আছে? অতীতে ছিল? সে পারবে না। তাহলে শেখ হাসিনা ছাড়া আর কোনো উপায় আছে? শেখ হাসিনার বাবা এ দেশের স্বাধীনতা দিয়েছেন। শেখ হাসিনা মানুষের ভাতের অধিকার দিয়েছেন। এখন শেখ হাসিনাকেই এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকারের জন্য কাজ করতে হবে। আমরা এখান থেকে সহযোগিতা করব। রাতারাতি তো পারবেন না। আর শেখ হাসিনা কি বলেন, ভোট চুরি কর? জীবনে কোনো দিন এলাকায় যায়নি, কাউকে ১০ টাকার চা খাওয়ায়নি। একটা গরিব মানুষ চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে, সাহায্য করেনি। সে সব প্রার্থী ভোটে দাঁড়ায়। তারা ভোট চুরির জন্য শক্তি প্রয়োগ করে। মাস্তান ভাড়া করে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা কতক্ষণ পাহারা দেবেন? আবার কিছু কিছু জায়গায় যে ভালো ভোট হচ্ছে, সেটা কি মিথ্যে নাকি? এ সময় তিনি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের উদাহরণ দেন।

তিনি বলেন, যারা পপুলার নেতা যেমন হামিদ সাহেব আমাদের রাষ্ট্রপতি, সবসময় পার্লামেন্ট মেম্বার। সরকারি দল, বিরোধী দল সবসময়। জনপ্রিয়তা আছে। তাকে শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দিয়েছেন। যোগ্য নেতাকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে আমি মনে করি। আমি ভালোকে ভালো বলব, খারাপকে খারাপ বলব।

এ সময় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাহাব উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির হায়াত খানসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর