সোমবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
সরকারি দলের পাল্টাপাল্টি

ওবায়দুল কাদেরকে সতর্ক হতে বললেন ভাই কাদের মির্জা

নোয়াখালী প্রতিনিধি

ওবায়দুল কাদেরকে সতর্ক হতে বললেন ভাই কাদের মির্জা

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবদুল কাদের মির্জা তার বড় ভাই সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে সতর্ক হতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ওবায়দুল কাদেরকে জিততে হলে আমাদের লাগবে। নচেৎ এত সহজ নয়। উনার ওপর আমার ক্ষোভ আছে। আর ওনার সঙ্গে যারা হাঁটেন এবং মাসোহারা নেন, তাদেরও খোঁজখবর নিতে হবে।’ দেশব্যাপী আলোচিত-সমালোচিত সরকারদলীয় মেয়র প্রার্থী মির্জা কাদের বলেন, ‘আমার সঙ্গে ওবায়দুল কাদের নেই, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ আমার সঙ্গে নেই। নোয়াখালী আওয়ামী লীগ আমার বিরুদ্ধে অস্ত্রশস্ত্র পাঠিয়েছে। ফেনী আওয়ামী লীগ আমার বিরুদ্ধে অস্ত্রশস্ত্র পাঠিয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ আওয়ামী লীগ আমার সঙ্গে নেই, পৌরসভা আওয়ামী লীগ আমার সঙ্গে নেই, ডিসি-এসপি-নির্বাচন কমিশনারও আমার সঙ্গে নেই। আমি সত্য কথা বলায় কেউ আমার সঙ্গে নেই।’ তিনি গতকাল বসুরহাট পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হাজীপাড়া এলাকায় এক নির্বাচনী সভায় এসব কথা বলেন। এর আগে মির্জা কাদের বলেন, ‘আমি যখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি, তখন আমাকে পাগল, উন্মাদ বলে আখ্যায়িত করা হয়। মূলত সত্য কথা বলায় অনেকের গায়ে আগুন জ্বলে। ১৬ তারিখে প্রমাণ করব আমি পাগল, নাকি উন্মাদ।’ আবদুল কাদের মির্জা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কিছু নেতার উদ্দেশে বলেন, ‘আমি বেইমানের চেহারা দেখব না। তাদের ওপর আল্লাহর গজব পড়বে, কেন্দ্র থেকে যারা এসব করছে। আমি ইমানদার, আমি নেক্কার, আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। তোরা বেইমান, তোরা মুনাফেক, তোরা মানুষের সঙ্গে কথা বলে ওয়াদা রাখিস না। আমি ওয়াদা রক্ষা করি, কয়েক বছর ওয়াদা রক্ষা করেছি।’ তিনি বলেন, ‘বসুরহাটের নেতারা, আমাদের উপজেলার নেতারা ওবায়দুল কাদেরকে ভয় পান, একরাম চৌধুরীকে ভয় পান, নিজাম হাজারীকে ভয় পান। আসতে-যেতে মেরে ফেলে কি না! এটা হচ্ছে মূল ঘটনা। আপনারা সাধারণ কর্মীরা থাকলে আমি ভোট করব, না হয় বাড়ি গিয়ে শুয়ে থাকব। ভোট একটা পেলে একটা। ভোট দিলে দেবে, না হয় না দেবে। তিনবার নির্বাচন করেছি, আর খায়েশ নেই। আপনারা থাকলে আমি বের হব, নয় তো বের হব না।’ আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘করোনার সময়ও সঙ্গে ছিলাম। যারা বকবক করে, তারা কোনো নেতা ছিল না। দলের কেউ ছিল না। অধিকাংশ মানুষ আমার সুনাম করে। এক আনা মানুষ আমার সমালোচনা করে।’

আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতি, নোয়াখালীর রাজনীতি, ফেনীর রাজনীতি আমার অনুভূতিতে আঘাত করেছে। আমরা কোথায় যাচ্ছি। আমি শপথ করেছি, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করব। আমি কি এটার বাইরে গেছি? এ নির্বাচনকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে নিয়েছি। নির্বাচন আমার কাছে মুখ্য নয়। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। কষ্ট লাগে কেন্দ্রীয় নেতা, প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাড়ি গোপালগঞ্জ, ওখানে এমপি হয়েছেন। আগে মন্ত্রী ছিলেন। এখন নেই। অনিয়মের কারণে মন্ত্রিত্ব নেই। আমি আর বেশি বলব না। বললে বিপদ। আমাকে একটা জায়গায় নিয়ে ঠেকায়, ওবায়দুল কাদের সাহেব অসুস্থ, যখন বলেন আমি মরে যাব, আমাকে এটা দুর্বল করে। ওনার বোঝা উচিত। উনি জাতীয় নেতা। গোপালগঞ্জের ওই নেতা আমাকে পাগল বলেন, উন্মাদ বলেন। আমি তো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি। ফেনীর অপরাজনীতির বিরুদ্ধে বলি। ভোট কারচুপির প্রতিবাদ করি।’ তিনি বলেন, ‘আমি আমার এলাকার মানুষের নায্য অধিকার, মানুষের অধিকারের জন্য বলি। ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, ঘরে ঘরে চাকরি দেবেন। কোথায় সে চাকরি? আমি যখন এটার প্রতিবাদ করি, তখন আমি পাগল। আরেক নেতা বলেন, আমার দায়িত্বশীলতার যথেষ্ট ঘাটতি আছে। আমি ৪৭ বছর রাজনীতি করি। ওনারা কয় বছর করেন?’

আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘নজরুল ইসলাম বাবু, আমার সঙ্গে পরিচয় আছে। আমার জুনিয়র। তিনি টক শোতে এসে বলেন, আমি নাকি জামায়াত-বিএনপির ভোট নেওয়ার জন্য এসব বলি। আমার অবস্থা নাকি খারাপ। এখানে দল নাকি দুই ভাগ। দলে নাকি অভ্যন্তরীণ কোন্দল আছে। এখন জিতব না, সে জন্য নির্বাচনী কৌশল নিয়েছি।’ তিনি নজরুল ইসলাম বাবুকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি বয়সে আমার বড় নন। আল্লাহ আপনাকে দিয়েছেন। আমাদের দেননি।’ তিনি বলেন, এরা একসময় ওবায়দুল কাদেরকেও আগোতে দেননি। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা চেয়েছেন ফল। দুর্নীতিবাজ প্রশাসন গাছসহ ফল দিয়ে দিয়েছে। বৃহত্তর নোয়াখালীতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসন পেয়েছিল ২টা। সারা দেশে আওয়ামী লীগের জয়জয়কার, ফেয়ার ভোট হয়েছিল তখন। একরাম চৌধুরীর নেতৃত্বে নাকি বিএনপির দুর্গ ভেঙেছে। কে ভেঙেছে? কোন জায়গায় ভেঙেছে? তিনি জিতেছেন মেজর মান্নান প্রার্থী হওয়াতে। লজ্জা লাগে না? নিজাম হাজারী নাকি ফেনীর বিএনপির দুর্গ ভেঙেছেন? এ কথাগুলো বলছি, যাতে নেত্রী এখন থেকে সজাগ হন। এখনো তিন বছর সময় আছে। এদের লুটপাটের ইতিহাস, এদের অনিয়মের ইতিহাস- এগুলো আমাকে বলতে হবে। আমি বলেছি ফেয়ার ইলেকশন হলে এরা পালানোর জন্য দরজা খুঁজে পাবেন না। যদি এটার ব্যতিক্রম হয় তাহলে জিহ্বা কেটে ফেলব, বাংলাদেশ থেকে চলে যাব, হিজরত করব। যদি একরাম চৌধুরী ফেয়ার ভোটে জামানত ফেরত পান, যদি নিজাম হাজারী জামানত ফেরত পান, তাহলে হিজরত করব।’ আবদুল কাদের মির্জা বলেন, সেনবাগে আরটিভির মোরশেদ সাহেবকে দেওয়া হয়েছে। তিনি কি দলের রাজনীতিতে আছেন? কিছু লোক প্রতিযোগিতা করে এদের দেওয়ার জন্য। তাদের দিলে টাকা-পয়সা আছে, মানুষের ভোট কিনতে পারবে। তারাই দেশের ভোটের রাজনীতি ধ্বংস করেছে।’ এ সময় দলের উপজেলা ও পৌর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর