সোমবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

স্বাধীনতাকে যারা ব্যর্থ করতে চেয়েছিল তারাই আজ ব্যর্থ : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাধীনতাকে যারা ব্যর্থ করতে চেয়েছিল তারাই আজ ব্যর্থ : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করতে চেয়েছিল, তারাই আজ ব্যর্থ। বাংলাদেশ আজ স্বাধীন দেশ হিসেবে সারা বিশ্বে যে মর্যাদা পেয়েছে, তা ধরে রেখে আমরা  দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাব। জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলব।

গতকাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের যদি অতীত ইতিহাস দেখেন, একমাত্র ভূমিপুত্র বলতে বা এই দেশের মাটির সন্তান বলতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই প্রথম এ দেশের শাসনভার হাতে নিয়েছিলেন। বাকিরা কেউ কিন্তু এই দেশের মাটির সন্তান ছিল না। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে যে দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন, সেটা বাস্তবায়ন করতে পারলে পরবর্তী পাঁচ বছরেই বাংলাদেশ ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে উঠতে পারত, এতে কোনো সন্দেহ নেই। দেশ পরিচালনা করতে বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন।

এই স্বল্প সময়ে জাতির পিতা এত কাজ করে গেছেন, তা সত্যিই বিস্ময়কর। এটা গবেষণা করলেই বেরিয়ে আসবে মাত্র সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধু সবকিছুই করেছিলেন। জাতির পিতা পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা এই জাতিকে চিরদিন ভালোবেসেছেন, আত্মত্যাগ করেছেন। আমাদের একটাই লক্ষ্য, আমাদের মহান নেতা যে জাতির জন্য শেষ পর্যন্ত নিজের জীবন পর্যন্ত দিয়ে গেছেন, সেই জাতির কল্যাণ করা, সেই লক্ষ্য নিয়েই আমি কিন্তু কাজ করে যাচ্ছি। আগামী ১০০ বছরের ডেল্টা প্ল্যান ঘোষণার কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাংলাদেশ ২১০০ সাল পর্যন্ত উন্নয়ন কীভাবে হবে, সেই পরিকল্পনা নিয়েই আমরা ১০০ বছরের ডেল্টা প্ল্যান করে দিয়েছি। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ সালে বাংলাদেশ কেমন হবে সেটাও দিয়েছি। ২০৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপন হবে। আমাদের আগামী প্রজন্ম কীভাবে এটা উদযাপন করবে, সেই কথা চিন্তা করেই আমরা কিন্তু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। সেগুলো আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

জাতির পিতার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের কথা স্মরণ করে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, সব থেকে বড় কথা জাতির পিতা মুক্তি পেয়ে ফিরে এলেন স্বদেশের মাটিতে, তাঁর প্রিয় মানুষের কাছে। আমি একজন পরিবারের সদস্য হিসেবে শুধু এইটুকুই বলব, আমার আব্বা (বঙ্গবন্ধু) দেশে ফিরে প্রথমে কিন্তু আমাদের কাছে আসেন নাই। তিনি কিন্তু পরিবারের কাছে না, বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রিয় জনগণের কাছে সবার আগে ছুটে গিয়েছিলেন। কারণ তিনি বাংলার মানুষকে সব থেকে বেশি ভালোবাসতেন। সেই মানুষের কাছেই তিনি ছুটে গিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, দীর্ঘ নয়টা মাস বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী ছিলেন। সেখানে তাঁর ওপর যে অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে, প্রায় ৪০ পাউন্ড ওজন তাঁর কমে যায়। তারপরও তিনি সেই কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে চলে যান লন্ডনে। সেখানে প্রেস কনফারেন্স করেন। দিল্লি হয়ে ঢাকায় এসে সরাসরি তিনি রেসকোর্স ময়দানে চলে যান তাঁর প্রিয় জনগণের কাছে। সেখানে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক যে ভাষণটা দিয়েছিলেন, সেখানে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পরিচালনা করার সমস্ত দিকনির্দেশনা ছিল তাঁর ওই ভাষণে। সেখানেও কিন্তু কোনো লেখা কাগজ বা কোনো কিছু ছিল না বঙ্গবন্ধুর কাছে। ভাষণে তিনি যা বলেছেন নিজের মন থেকে বলেছেন।

আবেগজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন মানুষ (বঙ্গবন্ধু), একটা জাতি ও মানুষের প্রতি কতটা নিবেদিত হলে এবং কতটা ভালোবাসতে পারলে এভাবে জীবনে এতটা আত্মত্যাগ করতে পারেন আর এভাবে মানুষের কথা বলতে পারেন। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ এরপর ১০ জানুয়ারির ভাষণ; আমি বলব, আমাদের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ সবারই পুনরায় সেই ভাষণগুলো আবার নতুন করে শোনা উচিত। আমাদের নতুন প্রজন্মেরও শোনা উচিত। তাহলেই রাজনীতি করার একটা প্রেরণা এবং দিকনির্দেশনা সবাই পাবেন। স্বাধীনতা পরবর্তী কিছু মানুষের বিরোধিতা ও ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশ পরিচালনায় মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। এর মধ্যে একটা বিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে উন্নীত করেন। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে সবাইকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু পাঁচ বছরের একটা কর্মসূচি নিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, আমাদের দেশের কিছু মানুষ এত বেশি বুঝে গেল এবং তাদের অপপ্রচার ও অপকর্মে ব্যতিব্যস্ত করে তোলা হয়, বঙ্গবন্ধু যা কিছু করতে যান সেখানেই বাধা দেওয়া হয়। শেখ হাসিনা বলেন, শুধু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই মানুষ আস্তে আস্তে সত্য ইতিহাস জানতে পারে। আর এখন আমাদের যারা নতুন প্রজন্ম তাদের একটা আগ্রহ জন্মেছে সত্য ইতিহাসটা জানার, এটাই সবচেয়ে আমাদের আশার বিষয়। করোনাভাইরাস মহামারীর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে করোনাভাইরাস আমাদের অগ্রযাত্রায় কিছুটা ব্যাহত তো করেছে। এতে সন্দেহ নেই। আমরা মুজিববর্ষ উদযাপন করছি। আর কিছুদিন পর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। ২৬ মার্চ জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেই স্বাধীনতার আমরা ৫০ বছর পূর্তি উৎসব পালন করব। করোনাভাইরাসের জন্য যেভাবে করার কথা সেভাবে করতে পারছি না। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যে জাতির জন্য বঙ্গবন্ধু এত ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন, সেই বাঙালি জাতির প্রত্যেকের একটা ঠিকানা, প্রতিটি গৃহহীন মানুষকে আমরা ঘর করে দেব। দেশের একটি মানুষও ভূমিহীন বা গৃহহীন থাকবে না।

এ দেশের পরিবেশ রক্ষায় আমরা যে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছি, ইতিমধ্যে অনেক গাছ লাগিয়ে পরিবেশ রক্ষা করেছি। সেটা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। আওয়ামী লীগসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, যুব মহিলা লীগ আমাদের যত সংগঠন আছে প্রত্যেককে আমি অনুরোধ করব- আপনার বাড়ির পাশে যদি কেউ ভূমিহীন থাকে, গৃহহীন থাকে, নিঃস্ব কেউ থাকে- তাদের কথা আমাদের জানাবেন। তাদের আমরা সরকারের পক্ষ থেকে বিনা পয়সার ঘর করে দেব। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার, জনগণের সেবক। আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। এই সরকার মানে জনগণের সেবক। কাজেই আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন হয়তো ঘটা করে করতে পারিনি, কিন্তু দেশের সেবা, মানুষের সেবা করেই সেটা আমরা উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, খুব শিগগিরই আমরা গৃহহীন প্রায় ৪৬ হাজার মানুষকে ঘর দেব। ৭৬ হাজার মানুষের জন্য নতুন ঘর তৈরি হচ্ছে। কত লোক আমাদের গৃহহীন বা ভূমিহীন আছে- তালিকা নিয়েই আমরা তাদের ঘর করে দিতে চাই। শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে মানুষের ঘরে ঘরে। দেশের প্রতিটি ঘর আলোকিত করব। চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি।

করোনার মধ্যে দেশের সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের জন্য ইতিমধ্যে ভ্যাকসিন ক্রয় করার সব ব্যবস্থা আমরা করে ফেলেছি। ভ্যাকসিন এসে যাবে। তারপরও বলব সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে নিজেকে রক্ষা করতে হবে, অপরকে রক্ষা করতে হবে। এটাই হচ্ছে সব  থেকে বড়। যত ভ্যাকসিন আমরা নিই না কেন, তারপরও কিন্তু সবাইকে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, ভিটামিন সি এবং ডি- এ ধরনের খাবার খাওয়া, এগুলো আমাদের সবাইকে মানতে হবে। এগুলো মেনেই কিন্তু আমরা করোনাভাইরাস কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। কাজেই এটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, মার্চ মাসে করোনা সব থেকে বেশি ক্ষতি করেছিল আমাদের। কাজেই সেই সময় হয়তো আবার একটা ধাক্কা দিতে পারে। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বঙ্গবন্ধুর নিজের চিন্তা থেকে দেওয়া ঐতিহাসিক ছয় দফার ভিত্তিতে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আসে সত্তরের নির্বাচন। পাক শাসকগোষ্ঠী কোনো দিন চিন্তাও করেনি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতবে। তিনি বলেন, ৭ মার্চের ভাষণেই একটা গেরিলা যুদ্ধের সব দিকনির্দেশনা বঙ্গবন্ধু দিয়ে যান। পরবর্তীতে লন্ডনে বসেই পরিকল্পনা করেন মুক্তিযুদ্ধে কে অস্ত্র দেবে, ট্রেনিং দেবে, সহায়তা দেবে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুযায়ী নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আসে মহার্ঘ্য স্বাধীনতা। আর সেই স্বাধীনতা পূর্ণতা পায় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্তে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আরও বক্তব্য রাখেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, রমেশ চন্দ্র সেন, আবদুল মতিন খসরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শেখ বজলুর রহমান, আবু আহমেদ মন্নাফী, এস এম মান্নান কচি ও হুমায়ুন কবির। গণভবন প্রান্ত থেকে আলোচনা সভা পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর