শিরোনাম
সোমবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ব্যবসায়ীরা সেই টাকা ফেরত পাননি ১৪ বছরেও

ওয়ান-ইলেভেন সরকার ভয় দেখিয়ে নেয় ১২৩২ কোটি টাকা

রুহুল আমিন রাসেল

বিগত ১/১১ সরকার ব্যবসায়ীদের জরিমানার নামে শুধু হয়রানিই করেনি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনও করে। সেই নির্যাতনের বিচার ও জোর করে নেওয়া অর্থ বছরের পর বছর ফেরত চাচ্ছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা। কিন্তু গত ১৪ বছরেও সেই ১ হাজার ২৩২ কোটি টাকা ফেরত পাননি ব্যবসায়ীরা। তথ্য সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

জানা গেছে, কোনো কারণ ছাড়াই ব্যবসায়ীদের তুলে নেয় তখনকার সরকার ও তাদের বিভিন্ন সংস্থা। দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগের রায়েও টাকা ফেরতের নির্দেশনা আছে। রায়ে আদালত বলেছে, রিট আবেদনকারীদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ ফেরত দিতে আইনগত কোনো বাধা নেই। তবে রায় পুনর্বিবেচনার যে আবেদন রাষ্ট্রপক্ষ করেছে, তার শুনানি এখনো হয়নি। নির্যাতিত ব্যবসায়ীরা এখন সুদে-আসলে ওই টাকা ফেরত চান। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন- এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে নির্যাতনের শিকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ রায় পুনর্বিবেচনার যে আবেদন করেছে, তার ওপর বিগত তিন বছরেও কোনো শুনানি হয়নি। আমরা ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা ওই টাকা সুদে-আসলে ফেরত চাই। ওই টাকার সুদ এখনো গুনতে হচ্ছে। বর্তমানে ওই টাকা কী অবস্থায় আছে, জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, টাকাগুলো কীভাবে আছে, তা সরকার জানে। তবে চলতি হিসাবে টাকাগুলো জমা হওয়ায় এ টাকার কোনো সুদ হয়নি। টাকাগুলো সরকার ফেরত দেওয়ার চিন্তা করতে পারে বলে মত দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা। ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে ডেপুটি গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন ড. মুরশিদ কুলি খান। বর্তমানে অবসরে থাকা এই অর্থনীতিবিদ বলেন- টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য এখন সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত। সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে, যা মোটেই যৌক্তিক নয়। 

জানা গেছে- আজও কোনো অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকে প্রমাণিত হয়নি। বারবার প্রমাণিত হয়েছে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ ভুল ছিল। তারা মিথ্যা প্রচারণার শিকার ছিলেন। হয়রানি ও অর্থ আদায় করতেই মামলা করা হয় ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। ওই টাকা ফেরত না দিয়ে সরকার প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ করেছে। ওই টাকা ফেরতে আদালতের রায়ের বাস্তবায়ন চায় এফবিসিসিআই। এফবিসিসিআই সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে নির্যাতিত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেওয়া বৈধ টাকা ফেরত দেওয়া উচিত। ব্যবসায়ীদের অন্যায়ভাবে যে নির্যাতন করা হয়েছে, তারও ন্যায়বিচার হওয়া উচিত। সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, জোর-জবরদস্তি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে নেওয়া সেই ১ হাজার ২৩২ কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ওই টাকা ফেরত চেয়ে আসছেন নির্যাতিত ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী টাকাগুলো প্রকৃত মালিকদের ফেরত দেওয়া। সরকার সেটি না করে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে। সর্বশেষ আপিল বিভাগও ব্যবসায়ীদের টাকা ফেরত দেওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছে। তারা আরও বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও ওই টাকা ফেরত দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। জানা গেছে, ২০০৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০০৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত একটি গোয়েন্দা সংস্থা এবং তৎকালীন টাস্কফোর্স ইন্টেলিজেন্টস (টিএফআই) কর্মকর্তারা প্রায় ৪০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১ হাজার ২৩২ কোটি টাকা আদায় করে। এই টাকা দুই শতাধিক পে-অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের ০৯০০ নম্বর হিসাবে জমা হয়। শুধু টাকা আদায়ই নয়, অনেক ব্যবসায়ী তখন জেলও খাটেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার এক যুগ আগে ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন সময় মন্ত্রী-এমপিদের অনেকেই এভাবে অর্থ আদায়ের ওই ঘটনাকে অনৈতিক এবং বেআইনি বলে মন্তব্য করেছিলেন। এর মধ্যে ৬১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকার বিষয়ে পৃথক ১১টি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাই কোর্ট তিন মাসের মধ্যে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয়। বিভিন্ন সময়ে হাই কোর্টের দেওয়া এ রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক আপিল করে। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ রায় দেয় দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর