মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ফ্ল্যাট জমি বিক্রি ও শেয়ারবাজারে রেকর্ড

অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের শীর্ষে এ দুই খাত

রুহুল আমিন রাসেল

অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে এবার শীর্ষে রয়েছে আবাসন খাত ও শেয়ারবাজার। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে দায়মুক্তি সুবিধা পেয়ে অভূতপূর্ব সাড়া দিয়েছেন করদাতারা। ফলে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হয়েছে। পুঁজিবাজারসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে। অপ্রদর্শিত অর্থের মালিকরা এখন সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করছেন আবাসন খাতে। তারা এখন জমি আর ফ্ল্যাট কেনাকাটায় ব্যস্ত। শেয়ারবাজারেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের ঢেউ লেগেছে। লেনদেনের নতুন নতুন রেকর্ডে খুশি অংশীজনরা। জানা গেছে, আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগে গত ছয় মাসে ফ্ল্যাট, জমি, বিল্ডিং ও অ্যাপার্টমেন্টের বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ। ক্রেতারা এখন আবাসন প্রকল্প ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ সুবিধা দেওয়ার সবচেয়ে বড় প্রভাব হলো- মানুষ এখন সেকেন্ড হোমে যেতে পারছে না। ফলে অর্থপাচার কমছে। আবার আগে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক যেখানে প্রশ্ন করত, এখন সেটা করার সুযোগ নেই। ফলে অপ্রদর্শিত অর্থ আবাসন খাতে বিনিয়োগে ক্রেতাদের আগ্রহ বেড়েছে। শেয়ারবাজারে গত ডিসেম্বরে যেখানে প্রতিদিনের গড় লেনদেন প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ছিল, সেখানে চলতি জানুয়ারিতে প্রতিদিনের গড় লেনদেন প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআর সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ) হাফিজ আহমেদ মুর্শেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করদাতাদের রিটার্নের গতি-প্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে, আবাসন খাত ও শেয়ারবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হয়েছে আবাসনে। তার পরেই রয়েছে শেয়ারবাজার। এখনো বড় বড় করদাতারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। ফলে আরও প্রচুর অর্থ মূলধারায় আসবে। তার মতে, দেশের ইতিহাসে কোনো একক অর্থবছরে এত অপ্রদর্শিত অর্থ প্রদর্শনের রেকর্ড নেই। অর্থবছর শেষে এই আয় আরও অনেক বাড়বে। রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের মাঝে একটা বার্তা পৌঁছে গেছে। এই বার্তা হলো- অপ্রদর্শিত অর্থ দেশে রাখুন। বিনিয়োগ করুন। সরকার আপনাকে সহযোগিতা করছে। অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে আইনি প্রতিবন্ধকতা নেই। এ নিয়ে কোনো সংস্থা প্রশ্নও করতে পারবে না। তাই ক্রেতাদের প্রতি আহ্বান, অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের অবাধ সুবিধা নিন। ঢাকা স্টক একচেঞ্জ-ডিএসই পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, শেয়ারবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগের জোয়ার এসেছে। আগামীতে এটা আরও অনেক বাড়বে। আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রধানমন্ত্রী এই সুবিধা দিয়েছেন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বিনিয়োগের জন্য। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের এই সুবিধা আগামীতে আরও বাড়বে। এদিকে দেশের প্রচলিত আইনে যা-ই থাকুক না কেন, অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগ নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে এই আইনি নির্দেশনা পেয়ে অপ্রদর্শিত আয় প্রদর্শনের রেকর্ড গড়েছেন করদাতারা। এনবিআর চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশের ব্যক্তি-শ্রেণির করদাতার আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন দাখিলের তথ্য প্রকাশ করেছে। সর্বশেষ হিসাবে, দেশের ব্যক্তি-শ্রেণির ৭ হাজার ৪৪৫ করদাতা তাদের বার্ষিক আয়কর বিবরণীতে অপ্রদর্শিত আয়ের ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকা প্রদর্র্শন করেছেন। বিপরীতে এসব করদাতা সরকারি কোষাগারে আয়কর পরিশোধ করেছেন প্রায় ৯৩৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। যা অপ্রদর্শিত আয় প্রদর্শনের ইতিহাসে রেকর্ড হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। এনবিআর বলেছে, আয়কর অধ্যাদেশ ১৯-এর এএএএ অনুযায়ী ২০৫ জন করদাতা প্রায় ২২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা কর পরিশোধ করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করেছেন। এ ছাড়া ১৯-এর এএএএএ ধারা অনুযায়ী ৭ হাজার ৪৪৫ জন করদাতা প্রায় ৯৩৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা আয়কর পরিশোধ করে অপ্রদর্শিত আয় প্রদর্শন করেছেন। ফলে দেশের আনুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে প্রায় ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকা প্রবেশ করেছে। যা বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও কর জিডিপির হার বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে এনবিআর। করদাতাদের জন্য এই সুযোগ থাকবে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত। অপর দিকে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে থাকা আইনি নির্দেশনা অনুযায়ী, করদাতাদের অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে জমি, ফ্ল্যাট, বিল্ডিং ও অ্যাপার্টমেন্ট, ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র, শেয়ারবাজার, বন্ড বা অন্য কোনো সিকিউরিটিজে। এই সুবিধা নিতে ১০ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হবে। থাকবে না কোনো জরিমানা। প্রসঙ্গত, দেশে এ পর্যন্ত ১৭ বার অপ্রদর্শিত অর্থ মূল ধারায় আনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা প্রদর্শিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি টাকা সাদা হয়েছে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। ওই সময় ৩২ হাজার ৫৫৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই সুযোগ নিয়েছিল। তখন ৯ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা প্রদর্শিত হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর