বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

৪৫ সেবা সংস্থার সমন্বয় প্রয়োজন

-------- মোবাশ্বের হোসেন

৪৫ সেবা সংস্থার সমন্বয় প্রয়োজন

স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ মোবাশ্বের হোসেন বলেছেন, ঢাকা সিটির উন্নয়নে সাতটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৪৫টি সেবা সংস্থা রয়েছে। এগুলোর সমন্বয় না হলে রাজধানীর উন্নয়ন হবে না। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের বই খুললেই দেখা যাবে, সবাই রাজধানীর উন্নয়নে নিজেকে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী মনে করে। ফলে কেউ কারও নির্দেশ শোনে না। কোনো বৈঠকেই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কেউ থাকতে চান না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সত্ত্বেও মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা বৈঠকে থাকতে চান না। এমন কাউকে পাঠানো হয়, যিনি কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। তাহলে কেন তিনি আসছেন? শুধুই চা-নাস্তা খাওয়ার জন্য? কার্যত বাসযোগ্য ঢাকা নগরী গড়তে হলে সব সেবা সংস্থার সমন্বয় চাই। গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে ফোনালাপে তিনি এসব কথা বলেন। আলাপচারিতায় মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘রাজধানীর খালের ময়লা এক দিনে জমেনি। এখন ৭০ টন ময়লা এক দিনে ওঠানো হচ্ছে। মেয়ররা কাজ কতটুকু করছেন এ নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও এটা সত্য যে, খালের দায়িত্ব দেওয়ার পরই এই ময়লাগুলো উঠছে। একটি রাষ্ট্রে গণতন্ত্র থাকলে সেখানে উন্নতি রাতারাতি হয় না। ধীরগতিতেই হয়। তবে তা টেকসই বেশি হয়। কারণ জনপ্রতিনিধিরা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন। ঢাকা শহরে দুজন নগরপিতা রয়েছেন জনগণের ভোটে নির্বাচিত। কিন্তু দেখা যায়, ঢাকা সিটির পিতা ৪৫ জন। এক ছেলের ৪৫ পিতা থাকলে যে অবস্থা হয়, আমাদের নগরের সেই অবস্থা আর-কি।’

তিনি বলেন, রাজধানীর নানা বিশৃঙ্খলা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে পর্যায়ক্রমে নগর সরকারের দিকে যেতে হবে। এখন একটি খাল খারাপ হলে বা কোনো সমস্যা হলে মেয়র বা তার প্রতিনিধিকে ধরা যাবে। কিন্তু আগে ওয়াসার কাছে কেউ যেতে পারতেন না। একজন মেয়রকে চাইলেই কেউ সরাতে পারবে না। কিন্তু একজন যুগ্ম-সচিব পর্যায়ের আমলাকে দায়িত্ব দেওয়া হলে তিনি যে কোনো দিন বদলি হয়ে যেতে পারেন। সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের ইঙ্গিত ছাড়া তিনি কারও কথাই শুনবেন না। কাজ হোক না হোক এতে তার কিছু আসে-যায়ও না। তার চাকরিও কেউ ইচ্ছা করলেই ছাড়াতে পারবে না। বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সাবেক সভাপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ঢাকাকে বাসযোগ্য করা সবচেয়ে বেশি সহজ। পৃথিবীর অন্য কোনো শহরকে এমন করা সম্ভব নয়। এখানে বিভিন্ন জায়গায় যে ক্ষমতা দেওয়া আছে, এর সমন্বয় করতে হবে। নগর সরকার গঠন করে তাকে দায়িত্ব দিতে হবে। তাহলেই নগরীর সব উন্নয়ন করা সম্ভব। কিন্তু সেবা সংস্থাগুলো পৃথকভাবে দায়িত্ব পালন করলে একদিকে একজন পিচ ঢালাই করবে, অন্য প্রতিষ্ঠান রাস্তা কাটবে। এটাই হচ্ছে ঢাকায়। কিন্তু জনগণ সারা বছরই দুর্ভোগে থাকছেন। কেউ দেখছেন না রাস্তা কাটার টেন্ডারে কী লেখা আছে। নগরপরিকল্পনাবিদ মোবাশ্বের হোসেন বলেন, রাজধানীতে ড্রেনেজের কাজ বা ক্যাবল বসানোর জন্য যখনই রাস্তা কাটতে বলা হয়, নিয়ম আছে সংশ্লিষ্ট স্থানে ট্রাক দাঁড় করিয়ে সরাসরি ট্রাকে মাটি তুলতে হবে, যাতে যাতায়াতের কারও সমস্যা না হয়। অধিকাংশ কাজই করতে হবে রাতের বেলায়। যে পরিমাণ কাটা হবে, সেই পরিমাণই পূর্ণ করে ফেলতে হবে। পরদিন কেউ যেন বুঝতে না পারেন, সেখানে গর্ত করা হয়েছিল। এক রাতে ১০০ পাইপ বসানোর সক্ষমতা থাকলে ওই পরিমাণ রাস্তাই কাটতে হবে। সারা বিশ্বেই তা হয়। রাস্তায় মাটি রাখার বিধান কোথাও নেই। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হলে দুই সিটিতেই দায়িত্ব দিতে হবে। একসঙ্গে রাস্তা কেটে কাজ করতে হবে। রাতারাতিই দিতে হবে এমনটি নয়। ঢাকার যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে তা মেয়রকেই নিতে হবে। সেই সক্ষমতাও তার থাকতে হবে। মেয়রকে এই ৪৫টি সংস্থার ওপর ছাতার মতো কাজ করার দায়িত্ব দিতে হবে। কোনো কাজই করা যাবে না সিটি করপোরেশনের অনুমোদন ছাড়া। তাদেরও কোনো কাজের সিদ্ধান্ত জানাতে হবে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে। প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, রাজধানীতে এখন বিল্ডিং ভাঙা হচ্ছে। এটা সিটি করপোরেশনকে কেন করতে হলো? এত দিন ধরে বিল্ডিং কীভাবে দাঁড়িয়ে ছিল? রাজউক কোটি কোটি টাকা কীভাবে আয় করল? তাদের তো প্রধান কাজ হচ্ছে নির্মাণ-সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা। এই বিল্ডিংগুলো অবৈধভাবে কীভাবে দাঁড়িয়ে ছিল? রাজউক চাঁদা খাচ্ছে এসব বিল্ডিং থেকে। এর সঙ্গে জড়িতদের জেলে পাঠানো উচিত।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর