বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে রাতভর সংঘর্ষ নিহত ১, আসামি ৪০

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নগরীর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর এবং বিদ্রোহী আবদুল কাদেরের সমর্থকদের মধ্যে মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত সংঘর্ষ হয়েছে। উভয় পক্ষ আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ালে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ডবলমুরিং থানার পাঠানটুলীর মগপুকুর পাড় এলাকা। এ সময় একজন নিহত এবং একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

নিহত আজগর আলী বাবুল (৫৫) পাঠানটুলী এলাকার বাসিন্দা। গুলিবিদ্ধ আরেক যুবককে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সদীপ কুমার দাশ জানান, খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থলে  পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, গুলি ও সংঘর্ষের ঘটনায় বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল কাদেরসহ প্রায় ৪০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। এ মামলায় গ্রেফতারও হয়েছেন কাদেরসহ ২১ জন। ডবলমুরিং থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদ রানা বলেন, পাঠানটুলীতে সহিংসতায় নিহত আজগর আলী বাবুলের ছেলের দায়ের করা মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করবে। ২১ জনকে আটক করার পর আবদুল কাদেরসহ ২১ জনকেই গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

দলীয়, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নগরীর ২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর এবং বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল কাদেরের (মাছ কাদের হিসেবে পরিচিত) সমর্থকদের মধ্যে মঙ্গলবার রাতে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি শুরু হয়। গোলাগুলিতে আজগর আলী বাবুল নিহত হয়েছেন। আসন্ন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী সহিংসতায় এটিই প্রথম মৃত্যুর ঘটনা। নগরীর ডবলমুরিং থানার ২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডের মগপুকুর পাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। এতে আরেকজন গুলিবিদ্ধও হয়েছেন। এ ঘটনায় এই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল কাদের প্রধান আসামি এবং ১৩ জন এজাহারনামীয়সহ অজ্ঞাতনামা ৪০ জনের বিরুদ্ধে ডবলমুরিং থানায় নিহত আজগর আলী বাবুলের ছেলে সেজান মাহমুদ সেতু বাদী হয়ে মামলা (মামলা নম্বর-১০) করেছেন। তাছাড়া গত ৮ জানুয়ারি থেকে চসিক নির্বাচনের প্রচারণার পর থেকেই বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. মো. শাহাদাত হোসেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ ও ব্যানার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মোট ৯টি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগও। অভিযোগ দেওয়া কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মো. নুরুল ইসলাম, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মো. সোয়েব খালেদ, ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী হাজী মো. মহসীন, ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল কাদের এবং সংরক্ষিত ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মনোয়ারা বেগম। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. হাসানুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ পর্যন্ত ৯টি বিষয়ে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। মেয়র প্রার্থী ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে যেসব অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে তদন্তও চলছে। তাছাড়া নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ নানা কারণে ১৪ জন ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে রয়েছেন।

১১ জনের রিমান্ড মঞ্জুর : এদিকে চট্টগ্রাম নগরীর পাঠানটুলীর গোলাগুলিতে নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামি বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আবদুল কাদেরসহ ১১ জনকে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল আসামিদের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক শাহাদাত হোসেন খান বলেন, আদালত শুনানি শেষে প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। রিমান্ডে আদেশপ্রাপ্ত ১১ জন হলেন- আবদুল কাদের (৫০), হেলাল উদ্দিন প্রকাশ হেলাল (৪০), ওবাইদুল করিম মিন্টু (৪৫), আসাদ রায়হান (৩৫), ইমরান হোসেন ডলার (২৪), দিদার উল্লাহ (৪৮), মিনহাজ হোসেন ফরহাদ (২০), শহিদুল ইসলাম প্রকাশ সাহেদ (৩৭), জাহিদুল আলম জাহিদ (২৫), শহিদুল ইসলাম (৩৩) এবং আবদুর রহমান (৪৪)। তাছাড়া রয়েছেন মিনহাজ হোসেন ফরহাদ, শহিদুল ইসলাম প্রকাশ সাহেদ, জাহিদুল আলম জাহিদ, শহিদুল ইসলাম, আবদুর রহমান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর