বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
অভিযোগ আনুশকার মায়ের

আমার নিষ্পাপ মেয়ের চরিত্র হরণ করা হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর কলাবাগানে ও-লেভেলের শিক্ষার্থী ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় শিক্ষার্থীর মা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা যেভাবে করতে চেয়েছি পুলিশ সেভাবে মামলাটি নেয়নি। একটি মহল দিহান ও তার সঙ্গীদের আড়াল এবং আমার নিষ্পাপ মেয়ের চরিত্র হননের চেষ্টা করছে। বলা হচ্ছে আমার মেয়ের সঙ্গে দিহানের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এটি একদমই ঠিক না। কিছু কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার বিকৃত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।’

গতকাল দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করেন নিহত স্কুলছাত্রী আনুশকার মা। চার দফা দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দ্রুত বিচার আইনে দিহান ও তার সঙ্গীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। স্বচ্ছ ও সঠিক ডিএনএ পরীক্ষা করা হোক। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হোক। আমার নিষ্পাপ মেয়েকে বিকৃতভাবে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ- আপনি একজন মা, আমি আমার মেয়ে হত্যার স্বচ্ছ ও ন্যায়বিচার চাই।’ সেদিনের ঘটনা উল্লেখ করে আনুশকার মা বলেন, ‘৭ জানুয়ারি দিহান ও তার সঙ্গীরা আমার মেয়েকে অপহরণ করে তার বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে আমার মেয়েকে নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার পর আমাকে ফোন করা হয়। দিহান আমাকে ফোন করে জানায় সে (আনুশকা) অজ্ঞান হয়ে গেছে। আমি হসপিটালে এসে দেখি দিহানসহ তার তিন সঙ্গী বসে আছে। তারা আমার পা জড়িয়ে ধরে বলে আন্টি আমাদের বাঁচান। দিহানের কাছে জিজ্ঞেস করি আমার মেয়েকে তোমরা কোথায় পেলে, কেন মারা গেল? তখন সে আমাকে বলে আমরা চারজন ওকে আমাদের বাসায় নিয়ে যাই এবং সেখানে সে সেন্সলেস হয়ে যায়। আবার জিজ্ঞেস করি বাসায় আর কোনো মেয়েবন্ধু ছিল কিনা বা তোমার বাবা-মা ছিলেন কিনা? তখন বলে না, আমরা চারজনই তাকে নিয়ে গিয়েছিলাম। এরপর আমার বুঝতে বাকি থাকে না সেখানে কী হয়েছে।’ সংবাদ সম্মেলনে ওই শিক্ষর্থীর বাবা বলেন, ‘আমার মেয়েকে প্রতিটি মুহূর্তে আমি আমার মায়ের মতো করে আগলে রেখেছি। আমার অনুমতি ছাড়া অথবা আমার সঙ্গে কথা না বলে সে কোথাও কিছু করত না। আমার একটাই চাওয়া- আমি যা হারিয়েছি এ রকম যেন আর কোনো বাবা-মা কখনো না হারান।’ সংবাদ সম্মেলনে মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘বর্তমানে অনেক শিক্ষার্থী প্রযুক্তির অপব্যবহারের শিকার হচ্ছে। প্রযুক্তির অপব্যবহারে শিশু ও কিশোরী ধর্ষণ ক্রমাগত বাড়ছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে অভিযুক্ত দিহানের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, লিগ্যাল এইড সম্পাদক শামীমা আফরোজ, ঢাকা মহানগরীর আন্দোলন সম্পাদক জেবুন্নেসা প্রমুখ।

দিহান যৌনশক্তির ওষুধ ব্যবহার করেছে কি না পরীক্ষার নির্দেশ আদালতের : স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর হত্যা মামলার আসামি দিহান যৌনশক্তিবর্ধক ওষুধ ও মাদক সেবন করেছিল কি না তা পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরা এ আদেশ দেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আ ফ ম আসাদুজ্জামান আদালতে এ বিষয়ে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, কারাগারে থাকা আসামি দিহান কোনো মাদক সেবন করেছিল কি না তা জানার জন্য তার ডোপ টেস্ট করা প্রয়োজন। এ ছাড়া সে কোনো যৌনশক্তিবর্ধক ওষুধ সেবন করেছিল কি না এবং সেবন করলে কোন ধরনের ওষুধ সেবন করেছিল দিহানের রক্ত থেকে তার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞদের মতামত প্রয়োজন। মামলাসূত্রে জানা গেছে, ৭ জানুয়ারি মাস্টারমাইন্ড স্কুলের এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় দিহানকে একমাত্র আসামি করে কলাবাগান থানায় মেয়ের বাবা ধর্ষণ ও হত্যা মামলা করেন। ৮ জানুয়ারি দিহান দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়। বর্তমানে সে কারাগারে আছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর