বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ভ্যাকসিনের দাম যেখানে কম সেখান থেকে আনার চেষ্টা করব : অর্থমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভ্যাকসিনের দাম যেখানে কম সেখান থেকে আনার চেষ্টা করব : অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, কোনো দেশ যদি ভ্যাকসিনের দাম বেশি বলে আমরা অন্য দেশে যেখানে দাম কম সেখান থেকে কেনার চেষ্টা করব। সরকারের এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় কাজ দেশের সব মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা। পাশাপাশি ভ্যাকসিন আনার চেয়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করাটা আরও কঠিন। গতকাল সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়ালি বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের দাম এক দেশে বেশি হলে প্রয়োজনে আমরা অন্য দেশে যাব। তবে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট তো ভ্যাকসিন উৎপাদন করবে। আর আমরা তাদের কাছ থেকে কিনব। ফলে দাম একই রকম হবে না, এটাই স্বাভাবিক। বরং আমাদের এখানে দাম কিছুটা বেশি পড়বে। ভারতের তুলনায় ৪৭ শতাংশ বেশি দামে ভ্যাকসিন কেনা হচ্ছে, এর ফলে বাজেটে কী প্রভাব পড়বে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তা জানি না, প্রাইস (দাম) বেশি হয়েছে কি না। ইন্ডিয়া যদি তৈরি করে তাহলে তাদের কস্ট অব প্রোডাকশন তো কম হবেই। তারা যখন বিক্রি করবে ডেফিনেটলি সেলস প্রাইসটা তাদের খরচ, প্রফিট এ দুটি একত্র করে তারা এ কাজটি করবে। তাদের যে খরচ হবে সে দামে আমরা পাব, তাদের দেশে যদি তৈরি করা হয় এটা প্রত্যাশা করা ঠিক হবে না। তবে আমরা দেখব যে আন্তর্জাতিক বাজারে ভ্যাকসিনের দাম কত এবং আমরা কত দামে পাচ্ছি। তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করব। কারণ একক কোনো দেশ তো আর ভ্যাকসিন তৈরি করবে না, অনেক দেশই ভ্যাকসিন তৈরি করবে। এক দেশ থেকে যদি বেশি দাম বলে আমরা অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা অবশ্যই করব। সে সুযোগ আমাদের আছে।’ আগামী বাজেটে ভ্যাকসিন কতটা গুরুত্ব পাবে এবং জনস্বাস্থ্যের কোন বিষয়কে বাজেটে গুরুত্ব দিচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এ মুহূর্তে জাতির যে চাহিদা তা হলো সবাই অপেক্ষা করে আছে আমরা কবে ভ্যাকসিনের কাজটা শুরু করতে পারব এবং কবে ভ্যাকসিন সবাইকে দেওয়া শেষ করতে পারব। ভ্যাকসিন আনা কঠিন কাজ নয়। ভ্যাকসিন প্রয়োগ করাটাই কঠিন। সবাইকে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসা খুব জটিল কাজ। আমরা বিশ্বাস করি আমরা এখানে সফল হব।

এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন : বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে যেতে প্রস্তুত। এখন জাতিসংঘ আমাদের এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবে। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি এ বিষয়টা দেখাশোনা করে। কোনো দেশকে নিম্নস্তর থেকে উঁচুস্তরে ওঠানোর জন্য এ কমিটিই কাজ করে থাকে। আমরা আশা করি আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই এটা হবে। কেননা স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে যেতে যে তিনটি ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল করতে হয় (মাথাপিছু আয়, অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা, মানবসম্পদ উন্নয়ন) এ তিনটিই ফুলফিল করেছি। এটার জন্য পরপর দুই সভায় পর্যালোচনা করা হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় দুবারই যে দেশ উপর্যুপরি এগুলো ফুলফিল করতে পারবে সে দেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে চলে যাবে। এটার প্রথম সভা ২০১৮ সালে হয়েছিল। আর দ্বিতীয় সভা হওয়ার কথা রয়েছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। আমরা আশা করি সেখানে এটাকে উতরিয়ে যাব। তিনি বলেন, এ গ্র্যাজুয়েশন করতে হলে একটি দেশের অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে কমপেক্ষ ৩৩ পয়েন্ট পেতে হয়।

আমরা কিছুটা কমই অর্জন করেছি। এটাতে আমাদের ২৭ পয়েন্ট রয়েছে। এ ছাড়া মানবসূচক উন্নয়নে পেতে হবে ৬৬ পয়েন্ট। এটা আমাদের আছে ৭৫ পয়েন্ট। মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে হতে হবে ১ হাজার ২১০ ডলার।

এটা আমাদের উন্নীত হয়েছে ১ হাজার ৬৪০ ডলারে। বলা যায় এর তিনটিই আমরা পূরণ করতে পেরেছি। ফলে আমরা আশা করব দ্বিতীয় সভায় আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ করব। তিনি বলেন, এটা একটা ঐতিহাসিক সময়। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী। স্বাধীনতার ৫০ বছর। এ সময়েই যদি আমরা এ অর্জনটা করতে পারি সেটা হবে আমাদের জন্য অনেক অর্জন। আমরা এটাতে আশাবাদী। শুধু তাই নয়, এটা করতে পারলে এ অর্জন আমরা আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, নির্যাতিত মা-বোনদের প্রতি এটা উৎসর্গ করব। এতে দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে যে তাদের অবদান এবং ত্যাগ আর সেখানে যে আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে, এতে আমরা কিছুটা হলেও দায়মুক্ত হব বলে মনে করি।

সর্বশেষ খবর