শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
৬২ সহযোগীর মাধ্যমে অর্থ পাচার

পি কে হালদারের হাজার কোটি টাকা ফ্রিজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ মাথায় নিয়ে বিদেশে পলাতক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার ৬২ সহযোগীর মাধ্যমে অর্থ পাচার করেছেন বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে তাদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত পি কে হালদারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতায় এ ৬২ জনের নাম পেয়েছেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা। দুদক সচিব বলেন, আসলে পি কে হালদারের বিষয়টি এখন অনেক বড়। দেখা যাচ্ছে তার বিভিন্নজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে। আমরা ইতিমধ্যে অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। মোটামুটি ৬২ ব্যক্তির সঙ্গে তার লিঙ্ক বা সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।

দুদক সচিব জানান, এ ৬২ জনের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৫৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা দুদক জব্দ করেছে। পি কে হালদারের বান্ধবী অবন্তিকা বড়ালকে গ্রেফতারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পি কে হালদারের সংশ্লিষ্টতায় একজন নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ হয়ে গেলে আমরা বিস্তারিত জানাতে পারব।

এর আগে বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে পি কে হালদারের বান্ধবী অবন্তিকাকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে তিন দিনের রিমান্ডের অনুমতি পেয়েছে দুদক। দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, পি কে হালদারের অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের মামলার তদন্তে অবন্তিকার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এ কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে এর আগে ২৮ ডিসেম্বর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করলে অবন্তিকা বড়াল দুদকে হাজির হননি। মামলার তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় ৪ জানুয়ারি পি কে হালদারের আরেক ‘সহযোগী’ শংখ ব্যাপারীকে গ্রেফতার করা হয়। দুদকের দাবি, শংখ ব্যাপারীর নামে ধানমন্ডি এলাকায় একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া যায়, যা পি কে হালদারের টাকায় কেনা।

 পি কে হালদারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে তিনি নানা কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু, সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে অন্তত চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন। এ চার কোম্পানি হলো ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যানশিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যানশিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। এসব কোম্পানি থেকে তিনি ঋণের নামে বিপুল অঙ্কের টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন বলে দুদকের দাবি। এর মধ্যে আইএলএফএসএল গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে গত বছরের শুরুতে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দুদক ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে। দুদকসূত্র জানান, পি কে হালদার তার নিজের, আত্মীয়দের, বন্ধু ও কর্মচারীদের নাম ব্যবহার করে আটটি কোম্পানিতে ৬৭ কোটি ৩৫ লাখ ৪৪ হাজার ১৯৯ টাকা বিনিয়োগ করেছেন, যার বৈধ কোনো উৎস অনুসন্ধানে মেলেনি। পি কে হালদারকে গ্রেফতারে এরই মধ্যে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করা হয়েছে। তার মা লীলাবতী হালদারসহ ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর