শনিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
চসিক নির্বাচনে সহিংসতায় খুন

পূর্ববিরোধের জের নাকি ভুল নিশানা?

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম নগরীর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের পেছনে রয়েছে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজি। সাদা চোখে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত বলে ধারণা করা হলেও ভিতরে রয়েছে ‘অন্য কারণ’। এলাকায় চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির নিয়ন্ত্রণ, মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রায় সংঘাতে জড়াত বিবদমান দুই গ্রুপ। দীর্ঘদিনের বিরোধের জেরেই মঙ্গলবার তাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। যাতে নিহত হন আওয়ামী লীগ কর্মী আজগর আলী বাবুল। বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনুসন্ধানে এমন তথ্য মিলেছে। মামলার তদন্তকারী সংস্থা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) মনজুর মোরশেদ বলেন, ‘ওই দিনের সংঘাতের কারণ নিয়ে মন্তব্য করার মতো সময় এখনো আসেনি। ঘটনার কারণ উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ। তবে বিবদমান দুই গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। বিরোধের জের ধরে সংঘাতও হয়েছে একাধিক বার। খুনের ঘটনাও ঘটেছে। তাই সব কিছু মাথায় রেখে এ খুনের তদন্ত করা হচ্ছে।’ অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরীর বাণিজ্যিক এলাকা হিসাবে খ্যাত আগ্রাবাদ এলাকায় রয়েছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়। ওই এলাকায় রয়েছে দেশের প্রধান তেল বিপণন প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা, যমুনা কার্যালয়, পিডব্লিউডি ও পিডিবি অফিস, শিপিং এজেন্সির অফিস, নৌঘাট এবং বন্দরের ট্রান্সপোর্ট অফিসসহ গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয়। এ ছাড়া ফুটপাথে চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাসহ নানা কারণে অপরাধের জনপদে পরিণত হয়েছে আগ্রাবাদ। ওই এলাকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখল-বেদখলের নেতৃত্বে রয়েছে বিদায়ী কাউন্সিলর আবদুল কাদের ওরফে মাছ কাদের, আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুরের সেকেন্ড ইন কমান্ড খ্যাত মোস্তফা কামাল টিপু ওরফে কসাই টিপু, মাহমুদ জুয়েল ওরফে পিডিবি জুয়েল, আবদুল মামুন জামশেদ, খলিলুর রহমান নাহিদ, জহির উদ্দিন বাবর, এস এম পারভেজসহ কমপক্ষে ১০টি সন্ত্রাসী গ্রুপ এখানে সক্রিয়। বিশেষ করে ওই এলাকায় নির্মাণাধীন ভবন, ফুটপাথের হকার, শিপিং অফিসে জাহাজের পরিত্যক্ত তেল সরবরাহ, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি, পিডিবি ও রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণন প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ ও ফুটপাথ দখল নিয়ে সাবেক কাউন্সিলর শীর্ষ সন্ত্রাসী মাছ কাদের ও মোস্তফা কামাল টিপুর মধ্যে সংঘর্ষ লেগেই থাকে। চসিক নির্বাচনে পাঠানঠুলী ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর পদে নজরুল ইসলাম বাহাদুরকে মনোনয়ন দেওয়ার পর মাছ কাদের ও টিপুর বিরোধ প্রকাশ্যে ব্যাপকতা লাভ করে। মঙ্গলবার রাতে সংঘাতের আগ পর্যন্ত মাছ কাদের ও টিপুর অনুসারীদের মধ্যে একাধিকবার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। পূর্ব ঘটনাগুলোর জের ধরে মঙ্গলবার রাতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয় দুই গ্রুপের মধ্যে। এতে আজগর আলী বাবুল নিহত হন।

কী ঘটেছিল সেই রাতে : মঙ্গলবার রাতে গণসংযোগ করতে করতে মগপুকুর পাড় এলাকায় আসেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল কাদের ওরফে মাছ কাদের। পাশেই নাজির টাওয়ার এলাকায় ছিল আওয়ামী লীগ মনোনীত নজরুল ইসলাম বাহাদুরের নির্বাচনী অফিস। ওই অফিসে ২০ থেকে ২৫ জন সহযোগী নিয়ে বসা ছিলেন মোস্তফা কামাল টিপু। মাছ কাদেরকে দেখেই গুলি ছুড়তে ছুড়তে এগিয়ে আসেন টিপু। কাদের গ্রুপ পাল্টা গুলি ছোড়ে পার্শ¦বর্তী তাহের ভবনে আশ্রয় নেয়। এ সময় উভয় গ্রুপের মধ্যে কয়েক শ রাউন্ড গুলিবিনিময় হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন আওয়ামী লীগের কর্মী বাবুল। ঘটনার পর ওই এলাকার অনেক সিসিটিভি ভাঙচুর করে সংঘাতে জড়িয়ে পড়া একটি গ্রুপ।  সেই সঙ্গে নিয়ে যায় সিসিটিভির ফুটেজ সংরক্ষণের ‘ডিভিআর’।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর