মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ভোজ্য তেল আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে ৬৩ শতাংশ

উৎপাদন ও ব্যবসায়িক পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির সুপারিশ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ভোজ্য তেল নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক রিপোর্টে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন জানিয়েছে, গত ছয় মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে এই নিত্যপণ্যটির দাম প্রায় ৬৩ শতাংশ বেড়েছে। কমিশনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী বর্তমানে প্রতি মেট্রিক টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল টনপ্রতি প্রায় ১২০০ মার্কিন এবং পামতেল ১১৮০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারের এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা থেকে দেশের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভোজ্য তেলের তিন স্তরের ভ্যাটের পরিবর্তে শুধু এক স্তরে ভ্যাট নির্ধারণ করতে বলেছে। এ ক্ষেত্রে পণ্যটির উৎপাদন ও ব্যবসায়িক পর্যায়ে ভ্যাট থেকে অব্যাহতির সুপারিশ জানিয়েছে কমিশন।

আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের মূল্যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ও স্থানীয় পরিশোধনকারী মিলগুলোর ব্যয় বিবরণী পর্যালোচনা সংক্রান্ত এই রিপোর্টটি সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ট্যারিফ কমিশন। বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনা মহামারীর কারণে সরবরাহ সংকট দেখা দেওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের দাম বাড়ছে। আমরা স্থানীয় এবং বিশ্ব বাজারের মূল্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। কর কমানোর বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর)ও চিঠি দেওয়া হয়েছে। এনবিআর বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে যে দামে ভোজ্য তেল বিক্রি হচ্ছে, দেশের বাজারে ওই অনুপাতে মূল্য নিয়ন্ত্রণে আছে। রিফাইনারি কোম্পানিগুলো এসব তেল আগে আমদানি করায় আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির তুলনায় কম দামে পণ্যটি বিক্রি করতে পারছে। ট্যারিফ কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রায় দেড় মাস আগে অপরিশোধিত ভোজ্য তেলের টনপ্রতি দাম ছিল ৯২০ ডলার। আমদানিকৃত ওই তেল দেশে পরিশোধিত হওয়ার পর স্থানীয় বাজারে বর্তমানে প্রতি লিটার সয়াবিন ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা এবং পামতেল ১০২ থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত দেড় মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত ভোজ্য তেলের দাম টনপ্রতি বেড়ে ১২০০ ডলারে উঠেছে। এর ওপর তিন স্তরের ভ্যাট যুক্ত করে স্থানীয় বাজারে পরিশোধিত ভোজ্য তেল বিক্রি করতে গেলে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি লিটারের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে অপরিশোধিত ভোজ্য তেল (পাম ও সয়াবিন) আমদানিতে ১৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও ৪ শতাংশ হারে অগ্রিম কর আরোপিত আছে। শুধু তাই নয়, পণ্যটির উৎপাদন ও ব্যবসায় পর্যায়ে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট কেটে নেওয়া হচ্ছে। একই পণ্যের ওপর এই তিন স্তরের ভ্যাট আরোপের কারণে স্থানীয় বাজারে পণ্যটির দাম বাড়ায় প্রভাব রাখছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্রগুলো জানায়, বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখতে ভ্যাট কমানোর নজির রয়েছে। ২০১১ সালে ভোজ্য তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার পর বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভ্যাট কমানো হয়েছিল। ওই সময় অপরিশোধিত সয়াবিন, পামতেল ও পামঅলিনের আমদানি পর্যায়ে শুল্কায়নযোগ্য মূল্যের ৬৭.৬৭ এর ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট নির্ধারণ করা হয়েছিল। অর্থাৎ এর ফলে ভ্যাটের হার একই রেখে শুল্কায়নযোগ্য মূল্য প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমানোর কারণে সরকারের রাজস্ব আয় না কমলেও পণ্যটি আমদানিতে ব্যবসায়ীদের খরচ কমেছিল। এ ছাড়া ২০১৫ সালেও ভোজ্য তেলের বাজার স্থিতিশীল রাখতে পণ্যটির উৎপাদন ও ব্যবসায় পর্যায়ে শর্তসাপেক্ষে ভ্যাট কমানোর কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণে ছিল। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য (বাণিজ্য নীতি) শাহ মো. আবু রায়হান আলবেরুনী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যেভাবে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ছে, সে তুলনায় স্থানীয় বাজার যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে আছে। আন্তর্জাতিক বাজারের দাম অনুসারে পণ্যটির দাম আরও বাড়ার কথা। এ অবস্থায় আমরা উৎপাদন ও ব্যবসা পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছি। এ ছাড়া সরকার বিকল্প হিসেবে অপরিশোধিত ভোজ্য তেলের আমদানি মূল্যের ওপর সুনির্দিষ্ট ভ্যাট আরোপ করতে পারে। এটি করা হলে সরকারের রাজস্ব কমবে না, বরং পণ্যটির বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। উদাহরণ দিয়ে এই কর্মকর্তা জানান, এনবিআর গত বছরের মে মাসে ভোজ্য তেলের আন্তর্জাতিক বাজার দর সাড়ে ৬০০ ডলার ধরে ভ্যাট আদায়ের টার্গেট করেছিল। এখন পণ্যটির দাম বেড়ে ১২০০ ডলারে পৌঁছেছে। ফলে এখন তিন স্তরের পরিবর্তে যদি আমদানি মূল্যের ওপর টনপ্রতি একটি পর্যায়ে নির্দিষ্ট ভ্যাট কেটে রাখা হয়, তাহলে রাজস্ব আয়ের ওই টার্গেট কমবে না। কারণ আমদানি মূল্য বৃদ্ধির ফলে এর ওপর আরোপিত ভ্যাট আরও বাড়বে। তবে বহু স্তরে ভ্যাট না থাকায় আমদানি ব্যয় কমার কারণে স্থানীয়ভাবে পণ্যটির দাম কমবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর