মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ

নিরবচ্ছিন্ন উন্নয়নে দল শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে ঐকমত্য গড়ে তুলুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিরবচ্ছিন্ন উন্নয়নে দল শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে ঐকমত্য গড়ে তুলুন

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দেশের গণতন্ত্রায়ণ, সুশাসন ও নিরবচ্ছিন্ন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সব রাজনৈতিক দল, শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে ঐকমত্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রায় সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে।

গতকাল একাদশ জাতীয় সংসদের শীতকালীন ও নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। সরকার খুব শিগগির জনগণকে কভিড-১৯ টিকা প্রদান করতে পারবে বলে রাষ্ট্রপতি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বিকাল সাড়ে ৪টায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে একাদশ জাতীয় সংসদের একাদশতম অধিবেশনের কার্যক্রম শুরু হয়। মাস্ক পরে স্পিকার সংসদের কার্যক্রম শুরু করেন। এ সময় সংসদনেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কভিড-১৯ নেগেটিভ সনদধারী সরকারি ও বিরোধীদলীয় সদস্যরা মাস্ক পরে সংসদের বৈঠকে অংশ নেন। অসুস্থতার কারণে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, করোনা আক্রান্ত থাকায় বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের অধিবেশনে যোগদান করেননি।

১৪৭ পৃষ্ঠার ভাষণে রাষ্ট্রপতি দেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য-বিনিয়োগ, খাদ্য-কৃষি, পরিবেশ-জলবায়ু, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, করোনা মহামারী মোকাবিলাসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের কার্যক্রম ও সাফল্য তুলে ধরেন। এ ছাড়া তিনি দেশে আইনের শাসন সুসংহত ও সমুন্নত রাখা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনসহ সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। রাষ্ট্রপতির ভাষণের পর সংসদ অধিবেশন আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হয়।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, এ বছর মধ্য-আয়ের দেশ হিসেবে আমরা ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’ পালন করব। তবে আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালে বিশ্বসভায় একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়া। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা একটি কল্যাণমূলক, উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে সক্ষম হব।

আর্থিক খাত ব্যবস্থাপনায় সরকারের প্রশংসা করে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিক অর্জন বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারীতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। তবে একইসময়ে মাথাপিছু জাতীয় আয় ৮ দশমিক ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৪ মার্কিন ডলারে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। আইএমএফ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা শীর্ষ দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, ‘কভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এবং ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অব লাইফ সাইনসেস প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরাসরি ক্রয়ের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় সিএমএসডির মাধ্যমে জরুরিভিত্তিতে ভ্যাকসিন ক্রয় বাবদ ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রদান করা হয়।  আমি আশা করছি, সরকার খুব শিগগিরই দেশের জনগণকে কভিড-১৯-এর টিকা প্রদান করতে পারবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশে আইনের শাসন সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারসহ চাঞ্চল্যকর অন্যান্য মামলার রায় দ্রুত প্রদান করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও শক্তিশালীকরণের পাশাপাশি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দুর্নীতি, মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে এবং জনজীবনে স্বস্তি বিরাজ করছে।

রাষ্ট্রপতি করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের প্রশংসা করে বলেন, সামাজিক সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সংবলিত ১ লাখ ২১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান অব্যাহত রাখায় প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক-কর্মচারীর চাকরি সুরক্ষা হয়েছে। তিনি বলেন, বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয় এবং নগদ অর্থ বিতরণ ইত্যাদি সরকারি কর্মসূচির কারণে দেশের একটি মানুষও করোনাকালে না খেয়ে থাকেনি। তিনি বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় প্রথিতযশা সাময়িকী ‘ফোর্বস’ কর্তৃক প্রকাশিত নিবন্ধে করোনা মোকাবিলায় সফল নারী নেত্রীদের তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। কভিড-১৯ জনিত প্যানডেমিকের সফল মোকাবিলা, অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন ও জীবনমান সচল রাখার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ প্রণীত ‘কভিড-১৯ সহনশীল র‌্যাংকিং’-এ বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ এবং বিশ্বে ২০তম স্থান অর্জন করেছে। এর মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়, প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের জন্য এ অর্জন সম্ভব হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সরকার সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে সব ক্ষেত্রেই অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরিভিত্তিতে ২ হাজার চিকিৎসক ও ৫ হাজার ৫৪ জন নার্সকে নিয়োগদান করা হয়েছে। চিকিৎসা শিক্ষাকে বিশ্বমানে উন্নীত করার লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ চিকিৎসা শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন আইন, ২০২০’ প্রণীত হচ্ছে। চিকিৎসা শিক্ষার সম্প্রসারণ ও গুণগত মানোন্নয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি ৪টি বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিশ্বে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। কভিড মহামারী, পর পর পাঁচ দফা বন্যা এবং আম্ফান মোকাবিলায় ত্বরিত সাড়া প্রদান ও মানবিক সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশ কার্যকরভাবে দুর্যোগ মোকাবিলা করেছে। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকাজ সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে চলছে। মুজিববর্ষে সবার জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করার মাধ্যমে প্রতিশ্রুত ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ-ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের প্রশংসা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে নিজস্ব অর্থায়নে ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু’র দুই প্রান্তের মাওয়া ও জাজিরা সংযোগকারী সর্বশেষ ৪১তম স্প্যান স্থাপন করার মাধ্যমে সেতুর ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার মূল অবকাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ জুলাই ২০২২ সাল নাগাদ সমাপ্ত হবে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহুলেন টানেলের নির্মাণকাজ ডিসেম্বর ২০২২ সাল নাগাদ সম্পন্ন হবে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত র‌্যাম্পসহ ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ জুন ২০২৩ সাল নাগাদ সম্পন্ন হবে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সাভার ইপিজেড পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’ নির্মাণ প্রকল্প চলমান রয়েছে। ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে ১১টি রুটের ২৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সাবওয়ে নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ২০২১ সালের জুন নাগাদ সমাপ্ত হবে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বালিয়াপুর থেকে নিমতলী-কেরানীগঞ্জ-ফতুল্লা-বন্দর হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দ পর্যন্ত ৩৯ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসনে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের আওতায় সরকার ৬টি এমআরটি লাইন নির্মাণের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা-২০৩০ গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে ডিপোর অভ্যন্তরে ও ভায়াডাক্টের ওপর প্রায় ১৪ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে। পাতাল ও উড়াল মেট্রোরেলের সমন্বয়ে ৩১ দশমিক ৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-১ নির্মাণের লক্ষ্যে ডিটেইলড ডিজাইনের কাজ চলমান রয়েছে।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ২৪টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। ২০২০ সালে উন্নয়ন খাতে প্রায় ১ হাজার ৫৩২ কিলোমিটার মহাসড়ক মজবুতিকরণসহ প্রায় ১ হাজার ৪১৬ কিলোমিটার মহাসড়ক প্রশস্তকরণ, ৮৫টি সেতু ও ৭৫২টি কালভার্ট নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি জানান, ‘সরকার ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত ৪৫৩ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক চার লেন বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করেছে। বর্তমানে প্রায় ৪৪১ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেনসহ চার লেনে উন্নীতকরণ ও প্রায় ১৭৬ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক সার্ভিস লেন ব্যতীত চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘মুজিববর্ষ’ পালনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু অভিন্ন সত্তা। জীবিত বঙ্গবন্ধুর মতোই অন্তরালের বঙ্গবন্ধু শক্তিশালী। মুজিববর্ষ উদযাপনের লক্ষ্যে গৃহীত কর্মসূচিসহ কভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর কারণে নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব না হওয়ায় সরকার মুজিববর্ষের মেয়াদকাল ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করেছে। মুজিববর্ষে গৃহীত সব কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে ১৪ হাজার গৃহ নির্মাণ করে বিনামূল্যে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রদান করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণ স্থানকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ‘মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র স্থাপন’- এর নির্মাণকাজ শুরু হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন শীর্ষক প্রকল্প এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্যানোরমা নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।

রাষ্ট্রপতি দেশের প্রতিরক্ষা খাতে গৃহীত সরকারের পদক্ষেপর প্রশংসা করে বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখ-তা রক্ষায় ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’-এর আলোকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কোরের ১৭টি ইউনিট গঠন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যানবাহন ও আধুনিক সরঞ্জাম সংযোজিত হয়েছে। ২টি সাবমেরিন সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী আজ ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী হিসাবে বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করেছে। গত ২০০৯ সাল থেকে অদ্যাবধি নৌবাহিনীতে ৩১টি জাহাজ, ২টি মেরিটাইম হেলিকপ্টার এবং দুটি মেরিটাইম প্যাট্রোল এয়ারক্রাফট সংযোজিত হয়েছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে আধুনিক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিমান, হেলিকপ্টার, রাডার, অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র এবং যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসাবে গত ৩১ আগস্ট প্রথম স্থান পুনরুদ্ধার করেছে। বর্তমানে ৭টি দেশের ৭টি মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশের মোট ৬ হাজার ৮৬৫ জন শান্তিরক্ষী শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

দেশের বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি বলেন, বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নে নতুন বিচারক নিয়োগ, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ এবং বিচারকদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। অসহায় ও দুস্থদের আইনি সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে সংবিধান প্রদত্ত বিচার প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। মামলা ব্যবস্থাপনা ডিজিটাইজেশনে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আইনি কাঠামো সুসংহতকরণে ২০২০ সালে ১৮টি আইন, ৪টি অধ্যাদেশ, ২৭৩টি সংবিধিবদ্ধ প্রজ্ঞাপন এবং ৫৮টি চুক্তি নিরীক্ষা করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, মুজিববর্ষের উপহার হিসাবে ১৪ হাজার গৃহ নির্মাণ করে বিনামূল্যে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রদান করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণ স্থানকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ‘মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র স্থাপন’-এর নির্মাণকাজ শুরু হচ্ছে। ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন শীর্ষক’ প্রকল্প এবং ‘মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্যানোরমা নির্মাণ’ প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন দর্শন ‘রূপকল্প-২০৪১’ এর প্রধান অভীষ্ট হলো ২০৩১ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্যের অবসান, উচ্চ-মধ্য আয়ের দেশের মর্যাদায় উত্তরণ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের অবলুপ্তিসহ উচ্চ আয়ের দেশের মর্যাদায় আসীন হওয়া। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার এ লক্ষ্যসমূহ অর্জনে সম্পূর্ণরূপে সক্ষম হবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, কৃষিবান্ধব সরকার সারসহ কৃষি উপকরণে উন্নয়ন সহায়তা প্রদান, কৃষি যান্ত্রিকীকরণে ভর্তুকি, প্রতিকূলতা সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন, প্রতি ইঞ্চি জমি আবাদের আওতায় আনয়ন ইত্যাদি নীতি গ্রহণ করেছে। ফলে খাদ্যশস্য উৎপাদন ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। তিনি বলেন, কভিড-১৯ পরিস্থিতির মধ্যেও ফসল উৎপাদন ধারা অব্যাহত রেখে বাংলাদেশ বিশ্বে ধান এবং সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, আম উৎপাদনে সপ্তম, আলু এবং পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ আজ মাছ, মাংস ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘মুজিববর্ষে বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’- প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত মোট ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৪৭৩টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৬০০টি পরিবারের জন্য বিশেষ ডিজাইনের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ মানবিক বিবেচনায় বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিকের বাসস্থানের জন্য আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্প বাংলাদেশ নৌবাহিনী কর্তৃক নোয়াখালী জেলার ভাসানচরে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ৩ হাজার ৪৭৬ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, জাতীয় সংসদ দেশের জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। আমি সরকারি দল ও বিরোধী দল নির্বিশেষে মহান জাতীয় সংসদে যথাযথ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর