বুধবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

নজিরবিহীন নিরাপত্তায় শপথ নিতে যাচ্ছেন জো বাইডেন

নাগরিকত্বের রোডম্যাপে লক্ষাধিক বাংলাদেশি

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

নজিরবিহীন নিরাপত্তায় শপথ নিতে যাচ্ছেন জো বাইডেন

ঘটনাবহুল ও নাটকীয়তায় ভরা নির্বাচনের আড়াই মাস পর আজ (বুধবার) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন জো বাইডেন। একদিকে ক্যাপিটল হিলে নতুন প্রেসিডেন্টকে বরণের প্রস্তুতি অন্যদিকে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থকদের হামলার আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে নজিরবিহীন নিরাপত্তা- সব মিলিয়ে এবার শপথ অনুষ্ঠানও বহুল আলোচিত। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েই অবৈধ অভিবাসীদের জন্য এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন বাইডেন। এর ফলে অবৈধ লক্ষাধিক বাংলাদেশিসহ সোয়া কোটি বিদেশি ৫ বছরের জন্য একটি অস্থায়ী মর্যাদা পেতে যাচ্ছেন, পরে যা সিটিজেনশিপে অন্তর্ভুক্ত হবে।  এদিকে আজ দুপুরে ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিলে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ৭৮ বছর বয়সী জো বাইডেন। এ সময় ক্যাপিটল হিলের মুক্ত  চত্বরে উপস্থিত থাকবেন বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এবং সাবেক প্রেসিডেন্টদের মধ্যে বারাক ওবামা, জর্জ বুশ ও বিল ক্লিনটন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, প্রথা ভেঙে অভিষেকে থাকছেন না বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অনুষ্ঠানে বরাবরের মতো লাখো মানুষের উপস্থিতি থাকছে না এবার। মাত্র ২০ হাজার মার্কিনি উপস্থিত থাকবে জো বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে। এদিকে গত ১ জানুয়ারির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন কিন্তু এখনো বৈধ অভিবাসীর মর্যাদা পাননি, এমন লক্ষাধিক বাংলাদেশিসহ সোয়া কোটি বিদেশি পাঁচ বছরের জন্য অস্থায়ী একটি মর্যাদা পেতে যাচ্ছেন। এই সময়ে তারা কাজ করবেন এবং প্রমাণ দেখাতে হবে যে, নিয়মিত ট্যাক্স প্রদান করেছেন, কোনো অপরাধে লিপ্ত হননি। তাহলেই তাদের গ্রিনকার্ড দেওয়া হবে। এর তিন বছর পরই সিটিজেনশিপের আবেদন করা যাবে। অপরদিকে মা-বাবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে আসা শিশু-কিশোর, যারা ‘ডেফার্ড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভাল’ তথা ড্যাকা কর্মসূচিতে প্রেসিডেন্ট ওবামার আমলে ওয়ার্কপারমিট পেয়েছেন, সেই ড্রিমাররা সরাসরি গ্রিনকার্ডের আবেদন করতে পারবেন। একইভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত দেশগুলোর নাগরিকের মধ্যে যারা ইতিপূর্বে ‘টেম্পরারি প্রটেকশন স্ট্যাটাস’ তথা টিপিএস পেয়েছেন গ্রিনকার্ডের আবেদন করবেন।

আজ শপথ গ্রহণের পরই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অভিবাসন ইস্যুতে প্রদত্ত অঙ্গীকারের পরিপূরক এই প্রস্তাবনা কংগ্রেসে পাঠানো হবে। বাইডেনের সঙ্গে কাজ করছেন এমন কর্মকর্তারা গত ১৮ জানুয়ারি বহুল প্রত্যাশিত অভিবাসন আইন সংস্কারের অভিপ্রায়ে এসব প্রস্তাবনা কংগ্রেসে পেশ করা হবে বলে জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার দিনেই যে কটি ইস্যুতে বাইডেন-কমলা হ্যারিস অ্যাকশন নেবেন বলে দুই দিন আগে জানিয়েছেন, অভিবাসন ইস্যুটি তার অন্যতম। নির্বাচনী অঙ্গীকারেও তা ছিল। এ জন্য লাতিনো-এশিয়ানরা জোর সমর্থন দেন বাইডেন-কমলাকে। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালেও ওবামার আগ্রহে কংগ্রেসে এ ধরনের একটি বিল উঠেছিল। সিনেটে তা পাস হলেও রিপাবলিকান শাসিত প্রতিনিধি পরিষদে পাস হতে পারেনি। এবার কংগ্রেসের উভয় কক্ষেই ডেমোক্র্যাটরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং রিপাবলিকানদের মধ্যেও অভিবাসন ইস্যুতে বোধোদয় ঘটায় প্রয়োজনীয় ভোট পেতে সমস্যা হবে না বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে। এই বিল পাস হলে তা হবে গত ৩৫ বছরের মধ্যে অভিবাসন ইস্যুতে সবচেয়ে বড় একটি বিষয়। সর্বশেষ ১৯৮৬ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ৩০ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে বৈধতার সুযোগ দিয়েছিলেন। অভিবাসন ইস্যুতে বাইডেন-কমলার খোলামেলা মতামতের প্রশংসা ইতিমধ্যেই সাড়া জাগিয়েছে কমিউনিটিতে। যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত অঞ্চল এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের লোকজনকে ‘রিফিউজি’ কোটায় যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় প্রদানের পরিধিও বিস্তৃত করা হবে নয়া এই বিধি তৈরি হলে। বিদেশি দক্ষ শ্রমিক আমদানির বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাও প্রত্যাহার করা হবে একই সঙ্গে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর