শিরোনাম
বুধবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

রহস্যজনক নিখোঁজ মালয়েশিয়া ফেরত বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র

সাখাওয়াত কাওসার

রহস্যজনক নিখোঁজ মালয়েশিয়া ফেরত বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র

সাদমান সাকিব রাফি

সাত দিন ধরে হঠাৎ করেই রহস্যজনক নিখোঁজ মালয়েশিয়া-ফেরত বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র সাদমান সাকিব রাফি (২৩)। ১৩ জানুয়ারি রাজধানীর ভাটারার বাসা থেকে স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হন তিনি। রাফির পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি এ বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে খোদ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদেরও। এ ঘটনায় নিখোঁজ তরুণের মা মনোয়ারা হোসেন বাদী হয়ে ভাটারা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

রাফির পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তিনি মালয়েশিয়ার এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটিতে (এপিইউ) ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়াশোনা করতেন। বছরখানেক আগে ঢাকায় আসেন। এর আগে তিনি বাবা-মায়ের সঙ্গে সৌদি আরবে থাকতেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ১৩ জানুয়াারি সকালে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় সাদমান তার ব্যবহৃত ল্যাপটপ ও একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন সঙ্গে নিয়ে যান। তবে বাসা থেকে কোনো টাকা-পয়সা নেননি। ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখেছি ওই তরুণ বাসা থেকে একটি ব্যাগ কাঁধে নিয়ে একাই হেঁটে বের হয়ে যাচ্ছেন। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় দেখা যায় তার সর্বশেষ অবস্থান ভাটারা। এর পর থেকে তার মুঠোফোন বন্ধ।’ পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা নিখোঁজ তরুণের কললিস্ট ঘেঁটেও দেখেছি তার মুঠোফোনে শুধু খাবার সরবরাহকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীর সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়েছে। অন্য কোনো সন্দেহজনক কল পাওয়া যায়নি।’ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) সূত্র বলছেন, বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে একাধিক তরুণ-তরুণী জঙ্গিবাদে জড়িয়ে স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়েছেন। দেশি-বিদেশি জঙ্গি সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা উচ্চশিক্ষিত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের তরুণদের টার্গেট করে মোটিভেট করেন। ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে অংশ নেওয়া পাঁচ তরুণের তিনজন উচ্চবিত্ত ও উচ্চশিক্ষিত পরিবারের সন্তান। এদের একজন মালয়েশিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ছিলেন। যদিও এখন পর্যন্ত সাদমান সাকিব রাফির ঘর ছাড়ার সঙ্গে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার কোনো তথ্য-প্রমাণ বা যোগসূত্র জানা যায়নি। রাফির মা মনোয়ারা হোসেন বলেন, ‘রাফির জন্ম ও বেড়ে ওঠা সৌদি আরবে। বছর তিনেক আগে সে মালয়েশিয়ার এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটিতে ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়। সেখানে ৭০ ক্রেডিট সম্পন্ন করলেও ২০১৯ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশে ফিরে এসে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (এনএসইউ) ভর্তি হয়। তবে এনএসইউ কর্তৃপক্ষ মাত্র ১৩ ক্রেডিট গ্রহণ করায় রাফি প্রচ- মন খারাপ করে। তাই এ বছর সে পুনরায় মালয়েশিয়ায় ফিরে যাওয়ার মনস্থ করে। তার প্রস্তুতিও নিচ্ছিল রাফি।’

মনোয়ারা হোসেন বলেন, ‘আমরা র‌্যাব-পুলিশকে রাফির বিষয়টি জানিয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত তারা কোনো ক্লু পাননি বলে জানিয়েছেন। রাফির বাবা বেলায়েত হোসেন একজন ব্যবসায়ী। আমরা সবাই সৌদি আরবে থাকি। তবে ছোট ছেলে এবং রাফি গ্র্যাজুয়েশন করার জন্য বাংলাদেশে অবস্থান করছে। বড় মেয়ে চিকিৎসক। সেও সৌদিতে স্বামীর সঙ্গে থাকছে।’ মনোয়ারা হোসেন বলেন, ‘রাফি একটু আত্মকেন্দ্রিক। তার এখানে কোনো বন্ধু-বান্ধবীও নেই। ঢাকার রাস্তাঘাটও সে চেনে না। ফলে সে আত্মগোপন করে কোথায় থাকবে বিষয়টি আমরা বুঝতে পারছি না। তার পাসপোর্টও মেয়াদোত্তীর্ণ। মেয়াদ বাড়ানোর জন্য পাসপোর্ট অফিসে জমা দেওয়া হয়েছে। জমার রিসিটও আমার কাছেই।’ র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল খায়রুল আলম বলেন, ‘বিষয়টি আমরা যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। তবে এখনো তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর