বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

হোয়াইট হাউস থেকে ট্রাম্পের বিদায়

বললেন, শেষ যাত্রা নয়

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি

হোয়াইট হাউস থেকে ট্রাম্পের বিদায়

শেষবারের মতো হাত নেড়ে বিদায় নেন ট্রাম্প -এএফপি

শেষ পর্যন্ত লজ্জাকর হার মেনে নিয়ে বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফার্স্ট লেডি মেলানিয়াকে নিয়ে হোয়াইট হাউস ছেড়েছেন। স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার সকালে তিনি পাকাপোক্তভাবে এ হাউস থেকে বিদায় নেন। এরপর অনেক হম্বিতম্বি করা ট্রাম্প কী করবেন, কোথায় থাকবেন, তার গতিবিধি কী হবে এসব নিয়ে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, সারা বিশ্বেই জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। সূত্র : আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। সকালে ট্রাম্প ও মেলানিয়াকে নিতে হোয়াইট হাউসে অবতরণ করে মেরিন ওয়ান হেলিকপ্টার। এ কপ্টারে করে মেরিল্যান্ডে অবস্থিত মার্কিন বিমানঘাঁটি জয়েন্ট বেস অ্যানড্রিউতে অবতরণ করেন ট্রাম্প ও মেলানিয়া। সেখানে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের শেষ দিন উপলক্ষে বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এরপর সেখান থেকে যান ফ্লোরিডার পাম বিচে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস যখন শপথ নেন তখন হোয়াইট হাউস থেকে বহু দূরে ট্রাম্প। হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর ট্রাম্প কোথায় যাবেন, তার পরবর্তী দিনগুলো কোথায় কাটবে তা নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। বেশ কিছু গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ফ্লোরিডার পাম বিচের মার-এ লাগো রিসোর্টে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করতে যাচ্ছেন ট্রাম্প। নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা ছাড়ায় ফ্লোরিডায়ই স্থায়ীভাবে থাকবেন ট্রাম্প। এর আগে পাম বিচের মার-এ লাগো রিসোর্টের বেশ কিছু ট্রাক পৌঁছতে দেখা গেছে। ধারণা করা হয়, এগুলোতেই ট্রাম্প পরিবারের বিভিন্ন জিনিসপত্র ওই রিসোর্টে নেওয়া হয়। প্রেসিডেন্ট হিসেবে চার বছরের ক্ষমতায় মার-এ লাগো রিসোর্টেই বেশি সময় কাটিয়েছেন ট্রাম্প। ওই রিসোর্টটি ‘উইন্টার হোয়াইট হাউস’ হিসেবে পরিচিত। এর আগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প তাঁর বৈধ আবাস নিউইয়র্কের ট্রাম্প টাওয়ার থেকে মার-এ লাগো শহরে সরিয়ে নেন। ১৯৮৫ সালে ১ কোটি ডলারে ওই রিসোর্টটি কেনেন দীর্ঘদিন ধরে নিউইয়র্কে বসবাস করা ৭৪ বছর বয়সী এই প্রেসিডেন্ট। গত চার বছরে প্রতি শীতেই তার সময় কেটেছে সেখানে। ২০ একর জমির ওপর করা ওই রিসোর্টটিতে ১২৮টি রুম আছে। এটি ১৯২৭ সালে তৈরি। জল্পনার আরেকটি বিষয় ক্ষমতা ছাড়ার আগে সহিংসতা ঘটানো। এ ঘটনায় তাঁর বিচার হওয়ার কথা। আর বিচার হলে নিশ্চিত তাঁকে জেলে যেতে হবে। রাজনীতি থেকেও নিষিদ্ধ করা হতে পারে। এসব মিলে ট্রাম্প এখন কী করবেন তা হয়তো সময়ই বলে দেবে।

বিদায়ী ভাষণে ট্রাম্প, ‘এটাই শেষ যাত্রা নয়’ : ‘ভাসুরের নাম মুখে আনতে মানা’র মতোই কান্ড ঘটিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিদায় বেলা নতুন প্রশাসনের ‘শুভ কামনা’ করলেন এবং বললেন, ‘আমি আশা করছি তাঁরা সফল হবেন।’ একই সঙ্গে ম্যারিল্যান্ডের অ্যান্ড্রুজ সামরিক ঘাঁটিতে জড়ো হওয়া কিছু সমর্থকের উদ্দেশ্যে ট্রাম্প বললেন যে, এই বিদায় দীর্ঘ সময়ের জন্যে নয়।  কোনো না কোনোভাবে তিনি আবার রাজনীতিতে আবির্ভূত হবেন এবং ফিরে আসার আভাসও দিলেন। অর্থাৎ তিনি যে আবারও নির্বাচনে অবতীর্ণ হবেন সেটি জানিয়ে গেলেন। ২০ জানুয়ারি সকাল সোয়া ৮টায় হোয়াইট হাউজ ছাড়েন ট্রাম্প। এরপর এয়ারপোর্টে নির্মিত মঞ্চে উঠে মেলানিয়া ও ট্রাম্প সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কথা বলেন ও তাঁদের ধন্যবাদ জানান ডোনাল্ড ট্রাম্প, ‘এই পরিবার কত কঠোর পরিশ্রম করেছে, সে সম্পর্কে কারও কোনো ধারণা নেই। তারা অনেক সহজ জীবন কাটাতে পারত।’

 

ট্রাম্প হোয়াইট হাউজের স্টাফদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা দারুণ মানুষ। এটি মহান এক দেশ। আপনাদের  প্রেসিডেন্ট হওয়া আমার জন্য বিরাট সম্মানের বিষয়।’ ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমি আপনাদের জন্য সব সময় লড়াই চালিয়ে যাব। আমি নজর রাখব, আমি শুনব এবং আমি বলব, এই দেশের ভবিষ্যৎ এর চেয়ে ভালো কখনো হবে না। নতুন প্রশাসনের জন্য শুভকামনা। আমি আশাবাদী, তাঁরা সফল হবে।’ মেলানিয়া সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ও সুন্দর একজন নারী। মানুষের মধ্য তিনি ভীষণ জনপ্রিয়।’

ট্রাম্প এ সময় দাবি করেন যে, পুুনর্নির্বাচনে এর আগে কখনোই কোনো প্রেসিডেন্ট আমার মতো এতবেশি ভোট পাননি। ৭৪ মিলিয়ন ভোট পেয়েছি আমি।

এরপরই বক্তব্য রাখেন মেলানিয়া। তিনি বলেন, ‘আপনাদের ফার্স্ট লেডি হতে পারাটা আমার জন্য বিরাট সম্মানের বিষয় ছিল। আপনাদের ভালোবাসা ও সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ। আমার চিন্তা ও প্রার্থনায় আপনারা সব সময় থাকবেন। ঈশ্বর সবার মঙ্গল করুন। ঈশ্বর আপনাদের সবার পরিবারের মঙ্গল করুন। ঈশ্বর এই সুন্দর জাতির মঙ্গল করুন। ধন্যবাদ।’

সর্বশেষ খবর