শুক্রবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

পরিকল্পিতভাবে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে : প্রধানমন্ত্রী

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

পরিকল্পিতভাবে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে আমরা যাতে তাল মিলিয়ে চলতে পারি, সেজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের এগিয়ে যাওয়ার দিশা দিতে পারে। আমাদের যে দক্ষ মানবশক্তি দরকার হবে, তা এই বিশ্ববিদ্যালয়ই গড়তে পারে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ই হবে তার কেন্দ্রবিন্দু। আমরা সেটাই চাই। এখান থেকে যাত্রাটা শুরু হতে পারে। ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন, যেটা আমরা পেয়েছি ভারত থেকে উপহারস্বরূপ, সেটা এসে পৌঁছে গেছে। এ জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আমি ধন্যবাদ জানাই। আমরা যেটা টাকা দিয়ে কিনেছি, তা ২৫ বা ২৬ তারিখ এসে পৌঁছাবে। এই ভ্যাকসিন কীভাবে দেওয়া হবে, সব বিষয়ে পরিকল্পনা আমরা নিয়ে রেখেছি। শতবর্ষ উপলক্ষে ছয়টি আন্তর্জাতিক ভার্চুয়াল সম্মেলন-ওয়েবিনারের আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী সিনেট ভবনে আয়োজিত এসব ওয়েবিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহান। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে কৃতিত্ব তুলে ধরে বক্তব্য দেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষ) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সম্মেলন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে আমরা চাই বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এটি তার পুরনো গৌরব ফিরে পাক। এখানে জ্ঞানের চর্চা হবে, গবেষণা হবে, শিক্ষার প্রসার ঘটবে। আমাদের সব অর্জনের বাতিঘর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলো ছড়িয়ে পড়বে সারা দেশে। এ জন্য সার্বিক সহযোগিতার ঘোষণাও দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে স্কুল প্রতিষ্ঠা করা, পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষাকে যেমন গুরুত্ব দিয়েছি সেই সঙ্গে প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। বিভিন্ন ধরনের বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় আমরা তৈরি করে দিচ্ছি। যেটা আমি প্রথম শুরু করেছিলাম ’৯৬ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। কারণ, ছাত্রদের বিজ্ঞান শিক্ষার দিকে অনীহা ছিল। সে অনীহা দূর করার জন্য এভাবে নামকরণ করে যাত্রা শুরু করি। এখন তো আমরা বহুমুখী বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। করোনা পরিস্থিতির কারণে অনুষ্ঠানে স্বশরীরে উপস্থিত হতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত হতে না পারাটা সত্যিই আমার জন্য অনেক কষ্টের, খুব দুঃখের। এ পরিস্থিতি থাকবে না। ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আমরা ভারত থেকে উপহারস্বরূপ পেয়েছি, যেটি এসে গেছে। এ জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। আর আমরা যেটা টাকা দিয়ে কিনেছি, সেটা ২৫-২৬ তারিখের মধ্যে এসে পৌঁছাবে। কাজেই আমরা এ ব্যাপারে কীভাবে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে সেসব পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছি। অর্থাৎ এ করোনা মোকাবিলায় সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাব সেটাই আমরা আশা করি। শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক মানের বিবেচনায় আমরা এখনো কাক্সিক্ষত অবস্থানে পৌঁছাতে পারিনি উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, এটিকে উত্তরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেই দায়িত্ব নিতে হবে। শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিবাচক প্রভাব সারা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ওপর প্রতিফলিত হয়ে থাকে। ড. রেহমান সোবহান বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যে দর্শনীয় বিস্তারের সংস্পর্শে এসেছে, তা জনগণের স্বল্প সুবিধাপ্রাপ্ত অংশের। আমাদের নীতিনির্ধারকরা যারা একবিংশ শতাব্দীর উন্নত দেশের মর্যাদা অর্জনের দিকে পরিচালিত করতে আগ্রহী, তাদের দায়িত্ব শুধু শিক্ষার বিস্তার নয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোরতে শিক্ষার মানকে সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই জাতীয় চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পুনর্গঠনের কাজ শুরু করা উচিত। যেখানে শুধু প্রতিষ্ঠাকালীন মিশনকেই পুনরুদ্ধার নয়, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে যে ঐতিহ্য ছিল, তা পুনরুত্থিত করতে পারে। এ জন্য পদ্মা সেতুতে যেমন ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়েছে, তেমনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুনর্নির্মাণে সম্পদের ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপমহাদেশের শিক্ষা ও গবেষণায় বিশেষ অবদান রেখে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক মূল্যবোধ উৎপাদন, লালন ও সম্প্রসারণ ঘটেছে। জাতিরাষ্ট্র গঠন ও বির্নিমাণে এর অনন্য ভূমিকা একে বিশ্বের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে আলাদা করেছে।

নিজের নামে পদ্মা সেতুর নামকরণের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর ‘না’ : খরস্রোতা পদ্মা নদীর ওপর নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর নাম ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা সেতু করার’ দাবি জানিয়েছেন সরকারি দলের এমপিরা। তবে এ সময় সংসদে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনাকে প্রথমে বারবার হাত নেড়ে না না ইশারা করতে এবং পরবর্তীতে মাথা নেড়ে না করতে দেখা যায়। এমনকি প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তার দিকেও তাকাতে দেখা যায়। তবে এ সময় স্পিকারের দায়িত্ব পালন করা ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বি মিয়া প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া উপলব্ধি করতে পারেননি। তিনি বক্তাকে আরও সময় বাড়িয়ে দেন। ফলে উক্ত এমপির বক্তব্য চলা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে নিজের টেবিলের ওপর ঝুঁকে কাগজপত্রের দিকে মনোনিবেশ করতে দেখা যায়। গতকাল সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের চতুর্থ বৈঠকে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে গাজীপুর-৩ আসনের সরকারদলীয় এমপি মো. ইকবাল হোসেন প্রথম পদ্মা সেতুর নাম পরিবর্তনের দাবি জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর আপত্তির বিষয়টি টিভি ক্যামেরায় স্পষ্ট দৃশ্যমান হয়। অধিবেশনে প্রথমে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও পরে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বি মিয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে পদ্মা সেতুর নামকরণের প্রস্তাব করে মো. ইকবাল হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর নাম শেখ হাসিনা সেতু হওয়াই উচিত। দুই মিনিট সময় বাড়িয়ে দেওয়ার পর তিনি আবারও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়চেতা সিদ্ধান্তের কারণে পদ্মা সেতু তৈরি সম্ভব হয়েছে। তাই সেতুর নাম শেখ হাসিনা সেতু করতে হবে। আমি জানি নেত্রী আপনি মহানুভবতার মূর্ত প্রতীক। আমরা প্রস্তাব করছি, আপনি নিজের নামেই পদ্মা সেতু করবেন। ইতিমধ্যে আপনি না করেছেন কিন্তু আমাদেরও দায়বদ্ধতা আছে। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের ৩৫০ জন সংসদ সদস্যকে যদি জিজ্ঞেস করেন, সবাই সমস্বরে বলবে আপনার নামে করার। নেত্রী এতে আপনি বড় হবেন না, আমাদেরকে বড় হওয়ার সুযোগ দেন। আমরাও কৃতজ্ঞ চিত্তে আপনার নামে নাম করার মধ্য দিয়ে আমাদের দায়বদ্ধতা পূরণ করি। ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের পক্ষ থেকে অনুরোধ এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হোক। এ সময় বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকজনকে টেবিল চাপড়াতে দেখা যায়। পরে সরকারি দলের আরেক সদস্য পংকজ দেবনাথ ওই প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, দুনিয়ার সবচেয়ে খরস্রোতা নদী পদ্মাকে শাসন করে বঙ্গবন্ধু কন্যার পক্ষেই সম্ভব হয়েছে এই সেতু নির্মাণ করা। আমি আবারও দাবি জানাই এই সেতুর নাম হবে দেশরত্ন শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু। সাবেক প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্যের জায়গায় পৌঁছেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার কারণেই এই সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। করোনা মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপের প্রশংসা করে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ডা. রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে জনগণ তার সুফল পাচ্ছে। দেশে ভ্যাকসিন আসছে। সেটার যথাযথ ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।

সেক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে ভ্যাকসিন আমদানির সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করেন তিনি। বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বের কারণে বিশ্বের মাঝে বাংলাদেশ একটি উদাহরণ। করোনা মোকাবিলায়ও তিনি নজরকাড়া সাফল্য দেখিয়েছেন। দেশ সমৃদ্ধির পথে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, রাষ্ট্রপতির ভাষণে এই সরকারের আমলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করার কথা বলা হয়েছে। বাকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আদৌও এমপিওভুক্ত করা হবে কিনা সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। পুরাতন ও জরাজীর্ণ রেলওয়ে জংশনগুলো সংস্কারের কথা বলা হয়নি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বগুড়ায় বিমানবন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণ করেছিল। তিনি বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মসজিদের ইমামদের ভাতা বাড়ানো ও বিদ্যুৎ বিল মওকুফের দাবি জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর