শুক্রবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

পি কে হালদারের আইনজীবী ও তার মেয়ে রিমান্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের মামলায় গ্রেফতার তার ব্যক্তিগত আইনজীবী সুকুমার মৃধা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। গতকাল দুদকের রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি করে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন।

ঢাকার সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সুকুমার ও অনিন্দিতাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করেন মামলার অনুসন্ধান  কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন। তিনি বাবা-মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। এর আগে দুদকে সুকুমার মৃধা ও অনিন্দিতাকে গ্রেফতার করার পর কমিশন সচিব মুহা. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, পি কে হালদার বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার পর তার অবৈধ সম্পদ দেখাশোনা করতেন সুকুমার ও অনিন্দিতা। পি কে হালদারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানও করেন সুকুমার মৃধা। পি কে হালদার ভুয়া ঋণ দেখিয়ে অবৈধভাবে অর্জিত প্রায় ১০০ কোটি টাকা তার মা লীলাবতী হালদারের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে রাখেন। পরে লীলাবতী হালদারের ব্যাংক হিসাব থেকে সুকুমার মৃধা, অবন্তিকা বড়াল ও অনিন্দিতা মৃধার মাধ্যমে আবার পি কে হালদারের কাছে হস্তান্তর ও স্থানান্তর করা হয়। এভাবে তারা মানি লন্ডারিং করেছেন বলে তদন্ত কর্মকর্তা তথ্য পেয়েছেন। এ ছাড়া সুকুমার মৃধার প্রায় ২০ কোটি টাকার সম্পদ ও তার মেয়ে অনিন্দিতার প্রায় দেড় কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। দুদক সচিব বলেন, এসব আসলে পি কে হালদারের অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ। গ্রেফতারের পর আদালতে নেওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সুকুমার মৃধা বলেন, ‘পত্রপত্রিকায় যা লেখালেখি হচ্ছে সে বিষয়ে পি কে হালদারের কোনো ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই। তিনি কেবল আমার ক্লায়েন্ট।’ ১৩ জানুয়ারি পি কে হালদারের আরেক সহযোগী অবন্তিকা বড়ালকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয় দুদক। মামলার তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় ৪ জানুয়ারি গ্রেফতার করা হয় পি কে হালদারের আরেক সহযোগী শঙ্খ ব্যাপারিকে। শঙ্খ ব্যাপারির নামে ধানমন্ডিতে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া যায়, যা পি কে হালদারের টাকায় কেনা বলে দুদকের দাবি। পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নানা কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু, সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে অন্তত চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন। এ চার কোম্পানি হলো ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যানশিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যানশিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। এসব কোম্পানি থেকে তিনি ঋণের নামে বিপুল অঙ্কের টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে আইএলএফএসএল গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে গত বছরের শুরুতে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দুদক ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগে মামলা করে। দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, পি কে হালদার তার নিজের, আত্মীয়দের, বন্ধু ও কর্মচারীদের নাম ব্যবহার করে আটটি কোম্পানিতে ৬৭ কোটি ৩৫ লাখ ৪৪ হাজার ১৯৯ টাকা বিনিয়োগ করেছেন, যার বৈধ কোনো উৎস অনুসন্ধানে মেলেনি। পি কে হালদারকে গ্রেফতারে ইতিমধ্যে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করা হয়েছে। তার মা লীলাবতী হালদারসহ ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর