বুধবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনা নির্মূলে প্রথম টিকা আজ

প্রথম টিকা নিচ্ছেন নার্স রুনু, ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অক্সফোর্ডের টিকা অনুমোদন ঔষধ প্রশাসনের, দেশব্যাপী শুরু ৭ ফেব্রুয়ারি, ৩২ শতাংশ মানুষ এখন টিকা নিতে আগ্রহী

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা নির্মূলে প্রথম টিকা আজ

টিকা দেওয়ার পর করা হবে পর্যবেক্ষণ। ঢাকা মেডিকেলে গতকাল প্রস্তুতি -রোহেত রাজীব

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস নির্মূলে দেশে আজ থেকে শুরু হচ্ছে টিকাদান কর্মসূচি। রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্সকে টিকা দিয়ে কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে প্রথম চালানে আসা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৫০ লাখ ডোজ টিকা মানবদেহে প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বেলা সাড়ে ৩টায় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। তিনি প্রথম পাঁচজনকে টিকা দেওয়া প্রত্যক্ষ করবেন। উদ্বোধনের পর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে ২৪ জনকে টিকা দেওয়া হবে। আগামীকাল পাঁচ হাসপাতালের ৪০০ থেকে ৫০০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে দেওয়া হবে টিকা। তাদের টিকা দেওয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া  যাচাই করে ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। দেশের ৩২ শতাংশ মানুষ এ মুহূর্তে ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী। বাকি ৫২ শতাংশ মানুষ দেখেশুনে দেরিতে ভ্যাকসিন নিতে চান বলে গবেষণার ফল প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘টিকার প্রতিটি লটের নমুনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। আগামীকাল (আজ) এই টিকা দিয়েই শুরু হবে করোনাভাইরাসের টিকাদান।’ এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ ফ্লাইট টিকার ওই চালান নিয়ে সোমবার ঢাকায় পৌঁছায়। পরে তা নিয়ে যাওয়া হয় টঙ্গীতে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ওয়্যারহাউসে। সেখান থেকে প্রতিটি লটের নমুনা পরীক্ষার জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরে পাঠানো হয়েছিল। বাংলাদেশে সেরাম ইনস্টিটিউটের ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস সরকারকে এ টিকা সরবরাহ করছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমতি পাওয়ায় বেক্সিমকো এখন সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলায় জেলায় টিকা পৌঁছে দেবে। অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, ‘এই ভ্যাকসিন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি। যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ সংস্থা এই টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে এবং সে দেশে এটি প্রয়োগ করা হচ্ছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদন্ড অনুযায়ী বিশ্বমানের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। ১৬ জানুয়ারি থেকে ভারত এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করছে। ভারতের সেসব কাগজও পরীক্ষা করা হয়েছে।’ করোনাভাইরাস মহামারীর এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর আশা হয়ে এসেছে টিকা। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কভিশিল্ড ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটেও তৈরি হচ্ছে। এই টিকার ৩ কোটি ডোজ কিনতে ৫ নভেম্বর সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি মাসে টিকার ৫০ লাখ ডোজ পাঠানোর কথা সেরাম ইনস্টিটিউটের। এর আগে ভারত সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে একই টিকার ২০ লাখ ডোজ পেয়েছে বাংলাদেশ। এই ৭০ লাখ ডোজের মধ্য থেকে প্রথম মাসে ৬০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হবে। পরের মাসে দেওয়া হবে ৫০ লাখ ডোজ। প্রথম মাসে টিকা পাওয়া ব্যক্তিদের তৃতীয় মাসে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকা কার্যক্রম উদ্বোধনের সামগ্রিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দেশের ইতিহাসে প্রথম ভ্যাকসিন গ্রহণ করবেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু বেরোনিকা কস্তা। তার সঙ্গে আরও দুজন সিনিয়র স্টাফ নার্স মুন্নী খাতুন ও রিনা সরকারও টিকা নেবেন। এ ছাড়া চিকিৎসক হিসেবে প্রথম টিকা নেবেন মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. আহমেদ লুৎফর মবিন। প্রথম টিকাগ্রহীতা হিসেবে রুনু বেরোনিকার নাম থাকলেও তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ না থাকলে তালিকার অন্য দুজনের একজনকে টিকা দেওয়া হবে। গতকাল টিকা কার্যক্রমে উদ্বোধনীর প্রস্তুতি পরিদর্শনে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে একযোগে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রীর টিকাদান উদ্বোধনের পর থেকেই নিবন্ধন শুরু হয়ে যাবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়েও টিকার নিবন্ধন করা যাবে। কুর্মিটোলা বাদেও আরও চারটি হাসপাতালে টিকাদান শুরু হবে।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালেও করোনার টিকাদানে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিএসএমএমইউতে টিকাদান প্রস্তুতি পরিদর্শন শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘টিকা নেওয়াটা যার যার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। জোর করে আমরা কাউকে টিকা দেব না। আমরা আহ্বান জানাব টিকা নেওয়ার জন্য। কারণ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা কার্যকর ব্যবস্থা। টিকার জন্য তো আমরা উদগ্রীব ছিলাম। কাজেই আমি আহ্বান করব, আপনারা যারা আগ্রহী তারা টিকা নিতে আসবেন।’ কভিড-১৯ টিকার প্রতি জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি পর্যালোচনা করতে গবেষণা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, দেশের ৮৪ শতাংশ মানুষ করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী। তবে এর মধ্যে ৫২ শতাংশ মানুষ দেখেশুনে দেরিতে ভ্যাকসিন নিতে চান। এ মুহূর্তে ভ্যাকসিন নিতে চান বাকি ৩২ শতাংশ মানুষ। ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে এ মুহূর্তে সন্দেহ আছে ৫৫ শতাংশ মানুষের। আর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে সন্দেহ আছে ৩৪ শতাংশের। বিনামূল্যে দিলে নিম্নবিত্তরা ভ্যাকসিন নিতে চান। তবে উচ্চবিত্তদের মধ্যে টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন নেওয়ার আগ্রহ বেশি বলে গবেষণার ফলে জানা গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর