বুধবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
২৩২ বছরে নতুন নজির

যুক্তরাষ্ট্র্রে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনের বিচার শুরু

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র্রে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনের বিচার শুরু

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনের বিচার শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ২৩২ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দফা অভিশংসনের বিচার শুরু হলো। এ নিয়ে মোট চারবার মার্কিন সিনেটে অভিশংসনের বিচারের ঘটনা ঘটছে। আর এক মেয়াদের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধেই এটি দ্বিতীয় অভিশংসনের বিচার। তবে পদ থেকে  বিদায়ের পর আর কোনো প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এমন বিচার হয়নি। প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়া অভিশংসনের কাগজপত্রের কপি (ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে উসকানি দেওয়া) সোমবার সন্ধ্যায় সিনেটে পেশ করেন পরিষদের ৯ সদস্য (অভিশংসনের ব্যবস্থাপক)। এ সময় স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির স্বাক্ষরিত কপিটি উপস্থাপন করেন অভিশংসনের ব্যবস্থাপক কংগ্রেসম্যান (ম্যারিল্যান্ড-ডেমোক্র্যাট) জেমি রাসকিন। ৯ ফেব্রুয়ারি বিচার শুরুর আগে অভিযুক্ত সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পাঠানো হবে সেই কপি। এরপর ট্রাম্প তার মতামত জানাবেন সিনেটে। একই সঙ্গে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আইনজীবী নিযুুক্তির তথ্য জানাবেন ট্রাম্প। সেই আইনজীবীরাও অভিযোগের কপি পড়বেন এবং বিচারে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দেবেন। এই বিচারে সিনেটের ১০০ সদস্যই থাকবেন জুরি হিসেবে। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসের সভাপতিত্ব করার কথা। কিন্তু জরুরি কাজে ব্যস্ত থাকায় সিনেটর (ভারমন্ট-ডেমোক্র্যাট) প্যাটিক লিহাই সভাপতিত্ব করবেন বলে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে। 

উল্লেখ্য, ৩ নভেম্বরের নির্বাচনের ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার জন্য ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের উভয় কক্ষের অধিবেশন চলাকালে ট্রাম্প সমর্থক উগ্রবাদীরা ক্যাপিটল হিলে সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এতে একজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজন নিহত হন। উগ্রবাদীরা এ সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে ফাঁসিতে ঝুলানোর স্লোগান দেয় এবং স্পিকার পেলোসিকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। নির্বাচনে বাইডেনের বিজয়ের ফল পাল্টে দেওয়ার দাবিতে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এই বিচার নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশকালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সোমবারই সিএনএনকে বলেছেন, রিপাবলিকান পার্টির ১৭ সিনেটরের সমর্থন পাওয়া কঠিন হবে। তাই ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করার ব্যাপারটি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তবে ক্যাপিটল হিলের হামলার ভিকটিম রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান এবং সিনেটররাও ছিলেন। সে কারণে শেষ মুহূর্তে ১৭ জনের বেশি সিনেটরও ডেমোক্র্যাটদের পাশে দাঁড়াতে পারেন বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। অর্থাৎ ৫০ ডেমোক্র্যাট আর ১৭ রিপাবলিকান হলেই দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে ট্রাম্প ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন। রক্ষা পাবে যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানটি। হুমকিতে থাকবে না সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ব্যাপারটি। কারণ ট্রাম্পকে ভবিষ্যতের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা সম্ভব হবে দোষী সাব্যস্ত হলেই। অন্যথায় তিনি ২০২৪ সালের নির্বাচনে মাঠে নামলে তাকে ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে বলেও অনেকের ধারণা।

সিনেটের লিডার চাক শুমার  এবং সংখ্যালঘিষ্ঠ দল রিপাবলিকান লিডার মিচ ম্যাককনেল ঠিক করবেন বিচারের রোডম্যাপ। সাক্ষী গ্রহণ ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কত সময় ধার্য করা হবে সেটিও তারাই নির্ধারণ করবেন। ওই হামলার ভিকটিম যেহেতু কংগ্রেসম্যান ও সিনেটররাই, তাই বাইরের সাক্ষীর আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা সেটিও আলোচনায় রয়েছে। টিভি ফুটেজ এবং আইফোনের ভিডিও হচ্ছে সাক্ষীদের প্রধান অবলম্বন। বিচারের সময় ট্রাম্পকে উপস্থিত থাকার নোটিস নিয়েও কথা বলবেন সিনেটে দুই পার্টির দুই নেতা। ৮ ফেব্রুয়ারির আগ পর্যন্ত অভিশংসন ব্যবস্থাপক এবং ট্রাম্পের আইনজীবীরাও পরস্পরের সঙ্গে কথা বলবেন। ৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে উদ্বোধনী যুক্তিতর্ক। ট্রাম্পের সমর্থকরা যুক্তির অবতারণা করবেন যে, হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নেওয়া কোনো প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এ ধরনের বিচারের সুযোগ নেই। অতীতের নজির প্রদর্শন করবেন ডেমোক্র্যাটরা। এই বিচারের মধ্য দিয়ে রিপাবলিকান পার্টিতে ট্রাম্পের অবস্থান জানা যাবে। ট্রাম্পের মতো একজন মানুষকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান রাজনৈতিক দল কীভাবে বিবেচনা করছে-তাও বিবেকসম্পন্ন আমেরিকানসহ গণতান্ত্রিক বিশ্ব অবলোকনে সক্ষম হবে। অর্থাৎ এই বিচারের মধ্য দিয়েই গণতান্ত্রিক বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তির ব্যাপারটি উদ্ভাসিত হবে। এ বিচারের সময় ট্রাম্পের অনুগত উগ্রবাদীরা যাতে আবারও কোনো হাঙ্গামার সুযোগ না পায়, সে জন্য ন্যাশনাল গার্ডের ৭ হাজার সদস্যকে মার্চ পর্যন্ত ক্যাপিটল হিলের নিরাপত্তায় রাখা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ১৩ মাস আগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রথম অভিশংসন বিচারের সমাপ্ত হয় তিন সপ্তাহের মধ্যে। 

৫৭ ভাগ মার্কিনি ট্রাম্পকে চান না : পুনরায় যাতে ফেডারেল কোনো পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ ট্রাম্প না পান সে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন ৫৭ ভাগ মার্কিন নাগরিক। অভিশংসন বিচার প্রক্রিয়ায় প্রথম ধাপ হিসেবে প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়া রেজ্যুলেশনের কপি সোমবার সন্ধ্যায় সিনেটে পেশ করার প্রাক্কালে মনমাউথ ইউনিভার্সিটি পরিচালিত জরিপে এই মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। সিনেটের বিচারে ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলেই ভবিষ্যতে তিনি আর প্রেসিডেন্ট পদে লড়তে পারবেন না। এমনকি সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে অনেক সুযোগ-সুবিধা হারাবেন। এই জরিপে অংশ নেওয়াদের ৪১ ভাগ ট্রাম্পকে অভিশংসনের বিপক্ষে মত দিয়েছেন। ২ ভাগ কোনো মতামত দেননি। জরিপে অংশ নেওয়া রিপাবলিকান পার্টির সমর্থকের মধ্যে মাত্র ১৯ ভাগ ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছেন। পক্ষান্তরে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ৯০ ভাগ চেয়েছেন ট্রাম্পকে চিরতরে রাজনীতি-প্রশাসনে নিষিদ্ধ করতে। ৭৮ ভাগ রিপাবলিকান এমন ইমপিচের বিপক্ষে মত দিয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর